দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ে আচমকা বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সন্ধেয় তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকের খবর পেয়ে সাততাড়াতাড়ি উপস্থিত হলেন রাজ্য পুলিশের ডিসি সি বীরেন্দ্র, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিং, মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
সূত্রের খবর, রাজ্য জুড়ে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে প্রশাসনকে নির্দেশ দিতেই এই জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি যেন নতুন করে কোনও ভয়াবহ রূপ না নেয়, তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ করতে হবে। রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কিছু নির্দেশও দেন মন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সারা রাজ্যেই পুলিশের টহলদারী আরও বাড়াতে হবে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে আরও বেশি সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার কথা বলেন তিনি। রাজ্যের সমস্ত থানার ওসিদের সতর্ক করার কথা বলেন।
কলকাতা পুলিশের উদ্দেশে আলাদা করে নির্দেশ দেন, কোনও রকম গন্ডগোল যেন শুরু না হয়। গন্ডগোলের বিন্দুমাত্র আভাস পেলেই উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন তিনি। শহরের সমস্ত এলাকাতেও পুলিশি টহল আরও বাড়াতে হবে বলে জানান, স্পর্শকাতর এলাকা নিয়ে সাবধান হওয়ার কথা জানান। ডিসি-দের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে তিনি বার্তা দেন, যে কোন সাম্প্রদায়িক ‘প্রোভোকেশন’ আটকাতে হবে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা যাবে না কোনও মতেই। সাধারণ মানুষের হয়রানি হয়, এমন কোনও ধরনের আন্দোলন করা যাবে না। কলকাতা ছাড়াও বাকি কমিশনারেটের সিপিদেরও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। আঞ্চলিক নেতা ও সাধারণ মানুষ– উভয়ের সঙ্গেই সমন্বয় রক্ষা করতে বলেন। জানান, প্রতিটি জেলা প্রশাসন থেকে রিপোর্ট দিতে হবে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি।
বৈঠকের পরেই রাজ্যপুলিশের সর্ব স্তরে জারি হয় বিজ্ঞপ্তি। তাতে বলা হয়, সমস্ত ওসি, বিভাগীয় অফিসার সকলকে চূড়ান্ত ভাবে সজাগ থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ক্যাব নিয়ে রাজ্যে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে, তার জেরে সতর্কতা জরুরি। স্পর্শকাতর এলাকায় প্রহরা বাড়াতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওসিদের অনুরোধ করা হচ্ছে এলাকার নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখতে। কোনও অবরোধের অনুমতি দেওয়া যাবে না, কিছু জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না। রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে সব জেলার পুলিশদের একসঙ্গে কাজ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে টুইটও করা হয়। লেখা হয়, “গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা গন্ডগোল করছেন, রাস্তায় নেমে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাসে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হিংসা রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়ায় বন্ধ করে দেওয়া হল ইন্টারনেট পরিষেবা। শুধু তাই নয়, সেই বারাসাত মহকুমা, বসিরহাট মহকুমা, বারুইপুর ও ক্যানিং মহকুমাতেও বন্ধ করা হচ্ছে ইন্টারনেট।
সেই সঙ্গে শেয়ার করা হয় আপৎকালীন নম্বরও।