দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ থেকে বদলে বাংলা করার ব্যাপারে একাধিকবার কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। অথচ কেন্দ্রের সম্মতি মেলেনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করেছেন, নিজের দাবি থেকে সরে আসবেন না তাঁরা। অথচ সেই ইস্যুতেই এ বার নরম হতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে।
নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে দিল্লি গিয়েছেন মমতা। সেখানে বৈঠক করেন মোদীর সঙ্গে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা বলেছি, বাংলাটাকে আগে রেখে তারপর যদি কোনও পরামর্শ থাকে, কোনও অ্যাডিশন-অল্টারেশন থাকে তাহলেও আমাদের অসুবিধা নেই।” অবশ্য এই অ্যাডিশন-অল্টারেশন বলতে ঠিক কী তিনি বুঝিয়েছেন, তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি মমতা। এমনকী এই বিষয়ে মোদীর প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারেও কিছু জানাননি তিনি।
কিন্তু মমতার এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দিল্লি গিয়েই সুর নরম করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে বারবার যে নাম বদল নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি তোপ দেগেছেন, সেই কেন্দ্রের পরামর্শে কোনও অসুবিধে নেই বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠছে, কী এমন কারণ হল, যার জন্য মমতাকে নরম হতে হল।
শুধু এই বিষয়েই নয়, এনআরসি এস্যুতেও সুর নরম করতে দেখা গেল মমতাকে। ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত বুধবার, এনআরসি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছিলেন, এনআরসির মাধ্যমে বাংলা থেকে দু’কোটি মানুষকে তাড়ানো হবে।
এর জবাবে মমতা পাল্টা হুঁশিয়ারিতে বলেন, দু’কোটি তো পরের কথা, আগে বাংলার দু’জন মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাক! এনআরসি-র প্রতিবাদে সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল শেষে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে সভাও করেন তিনি। মমতা বলেন, “বাংলায় এনআরসি হবে না।
বাংলা কখনও মাথা নত করবে না।” এরপরই কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলায় ২ কোটি তো দূরের কথা, আগে ২ জনের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।”
অথচ এ দিন মমতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এনআরসি ইস্যুতে কোনও আলোচনাই হয়নি তাঁর। সরকারের সঙ্গে সরকারের সেই আলোচনায় কোনও রাজনৈতিক ইস্যু ওঠেনি। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “এনআরসি অসমের বিষয়। ওটা অসম অ্যাকর্ডে বলা আছে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের কোনও প্রস্তাব নেই।”
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভাল আলোচনা হয়েছে। এটা কোনও রাজনৈতিক বৈঠক নয়। এটা এক সরকারের আরেক সরকারের বৈঠক।’ রাজ্যের উন্নয়ন সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
‘কেন্দ্রের কাছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাই। সেই টাকা কেন্দ্র দিলে রাজ্যের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যাবে। এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।
বীরভূমের দেউচা পাঁচামি কয়লা ব্লক নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমে তৈরি হতে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খাদান। সেই খাদানে কাজ পাবেন লক্ষাধিক মানুষ। প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে ওই কয়লা খাদান। দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ব্লকের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া রাজ্যের উন্নয়ন ভিত্তিত একাধিক প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। গত আট বছরে রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির হার ১২.৫ শতাংশ। আর্থিক মন্দার বাজারেও রাজ্যের রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির হার তরতরিয়ে বেড়েছে। নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে এসেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার।
এবিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এনআরসি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। কলকাতায় ফিরে আসার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করারও ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি।