দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ যশোররোড সম্প্রসারণ ও ওভারব্রিজ গড়ার প্রকল্পে চার হাজার গাছ কাটা রুখতে দায়ের মামলায় বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে উঠেল । ৫০ বছর পর শ্বাস নেওয়ার মতো অক্সিজেন মিলবে কি না, সংশয় প্রকাশ করলেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদেও।
তড়িঘড়ি অর্থনৈতিক বিকাশ নাকি পরিবেশ বাঁচিয়ে সুস্থায়ী উন্নয়ন-এই বিতর্কে বহু আগে এমসি মেহতা মামলায় পরিবেশের পক্ষে শীর্ষ আদালতের রায়ের কথাও উঠে এল এদিন। শেষ পর্যন্ত শতবর্ষী মহীরুহগুলির বিপন্নতা এড়াতে বিকল্প খুঁজতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দিল সর্বোচ্চ আদালত।
যশোহর রোডের হেরিটেজ গাছগুলি রক্ষায় ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চ গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ দেয়। গাছ কাটার অনুমোদনের আগে সমীক্ষা হয়নি এবং গুচ্ছ বিধিভঙ্গের অভিযোগ মেনেই হাইকোর্ট সরকারের হলফনামা তলব করে।
প্রথমে রাস্তা সম্প্রসারণে ৪০৩৬টি গাছ কাটার কথা বলেও পরে চাপের মুখে সরকার শুধু পাঁচটি রোড ওভারব্রিজের জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটা প্রয়োজন বলে জানায়। যদিও সাড়ে ৫ মিটার চওড়া রাস্তায় কেন ১৬ মিটার চওড়া ওভারব্রিজের পরিকল্পনা-সদুত্তর মেলেনি। ডিভাইডারে গাছ রেখে রাস্তা চওড়া করা, বাইপাসের ব্যবস্থা বা প্রায় সমান্তরালে যাওয়া রেলপথের বিকল্প কেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে না-প্রশ্নও ওঠে। পরিপূরক বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনাও প্রথমে জমা দিতে পারেনি সরকারপক্ষ। বিচারপতি মাত্রের বেঞ্চ বিকল্প খতিয়ে দেখা ও পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা জরুরি বলে জানায়। পরে পেশ হওয়া বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে নিযুক্ত স্পেশাল অফিসাররাও তাঁদের রিপোর্টে একাধিক প্রশ্ন তোলেন। বিচারপতি মাত্রে স্থগিতাদেশ বজায় রাখেন।
পরবর্তী প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ অবশ্য রোড ওভারব্রিজ প্রয়োজন এবং সরকার বিধিতে ছাড়ের সুযোগ পেতে পারে বলে পর্যবেক্ষণে সাড়ে তিনশো গাছ কাটায় শর্তাধীনে সায় দেয়। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে যায় এপিডিআর।
এপিডিআর এর এক সদস্যের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-র ২০ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মদন বি লোকুর ও বিচারপতি দীপক গুপ্তার বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দেয়। বৃহস্পতিবার শুনানিতে রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান পেশ করে সাড়ে তিনশো গাছ কেটে ওভারব্রিজ গড়ায় অনুমতি চান।এপিডিআর-এর পক্ষে আইনজীবীরা ওই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিকল্পের কথা, গাছগুলির ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত গুরুত্বের কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বোবদে, বিচারপতি গাভাই ও বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চ সুনীতা নারায়ণ-সহ ৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে সব দিক খতিয়ে দেখে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে।