মেমোরিজ আবাউন্ড: গৌতম ঘোষ অন দ্য ডকুমেন্টারি ট্রেইল –

0
913

অর্পিতা দে– কলকাতা:

সম্প্রতি কলকাতার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিলেশান এর রবীন্দ্রনাথ টেগোর সেন্টার এর সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়াম হয়ে গেলো ‘গৌতম ঘোষ অন দ্য ডকুমেন্টারি ট্রেইল’ ৷ আই সি সি আর এবং কল্পনির্ঝর এর যৌথ উদ্যোগে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হলো প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ এর তৈরী বেশকিছু দুর্লভ তথ্যচিত্র৷

প্রদর্শিত তথ্যচিত্রগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ‘মিটিং দ্য মাইল স্টোন’, ‘হাংরি অটোম’, ‘ইন সার্চ অফ থিয়েটার’, ‘বিয়ন্ড দ্য হিমালয়াস’, ‘ইম্পারমেন্যান্স’ প্রমুখ৷প্রতিটি তথ্যচিত্রই শুধুমাত্র তার পরিচালনাই নয়, গৌতম ঘোষ ফ্রেমেবন্দিও করেছেন নিজেই৷

‘মিটিং দ্য মাইল স্টোন’১৯৮৯ সালে তৈরী, ৯০ মিনিটের এই ছবির বিষয়বস্তু বিখ্যাত সানাই বাদক বিসমিল্লা খাঁ’৷ বেনারসের প্রত্যন্ত এক গলির ভিতর শিল্পীর জন্মভিটেতে বসে তাঁর সাথে কথোপকথন এর মাধ্যমে দর্শক জানতে পারেন শিল্পীর ছোটবেলার তালিম মামার কাছে৷ কিভাবে তিনি বড় হয়েছেন সেই সময়ের সংগীত ঘরানার মধ্যে দিয়ে৷বেনারসের গঙ্গার ঘাট, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মাধ্যমে দিনের প্রতিটি মুহূর্ত তাকে কিভাবে বিভিন্ন সুর রচনা করতে সাহায্য করেছে৷

কখনো শিল্পীর ঘরের ভিতর সান্ধ্যকালীন সংগীত চর্চা, কখনো বেনারসের ঘাটে সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে বজরায় বসে স্থানীয় এক শিল্পীর সাথে ঠুংরির যুগলবন্দিতে বিসমিল্লার সুরমূর্ছনায় দর্শক হারিয়ে যায় কোনো এক নৈসর্গিক মুহূর্তে৷

‘হাংরি অটোম’ ১৯৭৪ সালে তৈরী ৩০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটি মূলতঃ ৭০এর দশকের কলকাতার আর্থসামাজিক পটভূমিকেই তুলে ধরেছে৷ দুর্ভিক্ষের সময় গ্রামবাংলার মানুষের না খেতে পাওয়ার যন্ত্রনা শহুরে সভ্য জীবনযাত্রাকে যেন কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারেনি৷ হাংরি অটোমে পরিচালক একদিকে যেমন দেখিয়েছেন ক্ষুদার্ত, মুমূর্ষু মানুষের যন্ত্রনা তেমনি আর এক দিকে তুলে ধরেছেন এই সমস্ত ক্ষুদার্ত, মুমূর্ষু মানুষের প্রতি শহুরে সভ্যতার কঠোর উদাসীনতাকে

‘ইন সার্চ অফ থিয়েটার’ও কোনো না কোনোও ভাবে সেই ৭০এর দশকের শাসকের অত্যাচার, থিয়েটার এর মাধ্যমে মানুষের প্রতিবাদ সেই সময়কার আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোকেই তুলে ধরে; এখানে তথ্যচিত্রকার তার সামগ্রিক বিষয়টি বুঝিয়েছেন এক প্রখ্যাত অভিনেতা উৎপল দত্তের পরিচালিত ‘কল্লোল’ নাটকের পটভূমির মাধ্যমে

‘ইম্পারমেন্যান্স’ ২০০৪ সালে তৈরী ৬০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটির মূল বিষয় বস্তু দলাই লামা ও তার জীবনী৷ দলাই লামার দুটি ভিন্ন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে তার অহিংস মতবাদ, সহ্য ক্ষমতা, জীবন দর্শন এবং চাইনীজ কারাগারে দীর্ঘ ২১ বছর বন্দিদশার অভিজ্ঞতা৷ এই তথ্যচিত্রটি বানানোর জন্য গৌতম ঘোষ চীন সরকারের বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে পোতালা প্যালেস, লাহসার জোকাঙ্গ মনাস্ট্রি এবং তিব্বতের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে শ্যুটিং করতে পেরেছিলেন, যেখানে আজ পর্যন্ত কোনো চলচ্চিত্রকারই শ্যুটিং এর অনুমতি পাননি

1994-95 সালের তৈরী 260 মিনিটের তথ্যচিত্র ‘বিয়ন্ড দ্য হিমালয়াস’।এর মাধ্যমে গৌতম ঘোষ আবিষ্কার করেছিলেন পৃথিবীর সবথেকে সৌন্দৰ্য্যপূর্ণ স্থানটি হিমালয়ের প্রান্তরে৷ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি যাত্রা করেন বাবরের জন্মস্থান বুখারা থেকে, চাইনীজ তার্কিস্তান ও তিব্বতের মাউন্ট এভারেস্ট এর বেসক্যাম্প।মোট ৩০ জন সদস্যের একটি দল ৫ টি জিপ নিয়ে ২টি ক্যামেরার গ্রুপ প্রায় তিন মাস ধরে যাত্রা করেন৷

যেখানে পরিচালকের ক্যামেরায় ধরা পরে মধ্য এশিয়া, তুর্কিস্তান, চীন ও তিব্বত।সেখানকার মানুষজন, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও প্রাচীন ইতিহাস। মোট পাঁচটি ভাগে বিভক্ত এই তথ্যচিত্রটি, ‘দ্য আদার সাইড অফ দ্য মাউন্টেন’, ‘ইন সার্চ অফ দা বুদ্ধা’, ‘টেলস অফ সিল্ক রোড’, ‘অন দ্য রুফ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং সবশেষে ‘হায়ার দেন এভারেস্ট’ দর্শকদের দেয় এক রুদ্ধশ্বাস নৈস্বর্গিক অভিজ্ঞতা ৷

Previous articleঅতিরিক্ত কুয়ো খোঁড়ায় ক্ষোভ,দাদার মাথায় শাবলের কোপ দিল ভাই
Next articleসম্পাদকীয়—পালিত হোক শুধু রাজধর্ম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here