দেশের সময় ওয়েবডেসকঃ সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রথমত তিনি বলেন, কোভিড মোকাবিলায় তিনি একটি ক্যাবিনেট কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁর ‘আরও কাজ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ইত্যাদি দেখতে হবে’। এছাড়াও তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করা যায় না, সরকারেরও লিমিট আছে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম বক্তব্যটি নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা শুরু করেছেন বিরোধীরা। কিন্তু দ্বিতীয় মন্তব্যকে কেন্দ্রে করে রীতিমতো আশঙ্কায় ভুগছেন অনেকেই। বিরোধীরা বলছেন, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা পশ্চিমবঙ্গকে এক সর্বনাশের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রাজ্যের ভবিষ্যৎ সঙ্কটজনক বুঝতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী কমিটি তৈরি করে নিজে সরে যেতে চাইছেন বলেও মনে করছেন বিরোধীরা।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য শোনার পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় টুইট করেন। সেখানে তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কি হাসপাতালের বেড ভর্তি হয়ে গেছে বলেই মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন? সেই প্রশ্ন আরও কড়া ভাষায় তুলেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “দিনের পর দিন মিথ্যে কথা বলে এখন দিদিমণি ক্লান্ত। নিজের কাছেই নিজে ধরা পড়ে গেছেন। বুঝতে পারছেন আর উপায় নেই। তাই তিনি কমিটি গড়ে দিয়ে পালালেন।”
দিলীপের আরও বক্তব্য, “করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃতের সংখ্যা চেপে গিয়ে রাজ্যের বড় সর্বনাশ করে দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। দেশের আর কোনও রাজ্যকে নিয়ে এমন প্রশ্ন ওঠেনি। রাতের অন্ধকারে কেরোসিন ঢেলে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার নজির কোথাও নেই। দিনের পর দিন রাজনীতি করেছেন মমতা। রাজ্যবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখন বড় বিপদে বুঝতে পারে পালাতে চাইছেন। কিন্তু তিনি পালাতে পারবেন না। রাজ্যের মানুষ জবাব দেবে। রেশন থেকে রোগী সব নিয়ে রাজনীতি মানুষ মেনে নেবে না।”
প্রায় একই মত প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। তিনি বলেন, “করোনা সংক্রমণ হলে বাড়িতে থাকার জ্ঞান লোককে দেবেন না। তাহলে বিশেষজ্ঞদের সমস্ত পরামর্শ ভ্রান্ত হয়ে যাবে। টেস্টিং করো, আইসোলেট করো চিকিৎসা করো। এটা চিকিৎসকদের ব্যখ্যা। আমার বা কংগ্রেসের ব্যাখ্যা নয়। সেখানে তাঁরা যদি শোনেন কোভিড রোগীকে বাড়িতে রেখে দেওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী তাহলে তাঁরা অজ্ঞান হয়ে যাবেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর ডাক্তারি যদি মানুষ বাংলার মানুষ শোনেন তাহলে রাজ্যে মহামারী লাগতে দেরি হবে না।”
রাজ্যের কোন কোন এলাকা সংক্রমণের বিচারে কোন জোনে পড়ছে তার তালিকা সোমবার প্রকাশ করেছে নবান্ন। এই প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “আজ পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে বলে এসব বলছেন। সারা দেশে হটস্পট চিহ্নিত করে কাজ চলছে। কাসারগর, ভিলওয়ারা মডেলের কথা সবাই জানেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করা ক্যাবিনেট কমিটিতে তো সব বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। বিক্রমাদিত্যের সভা হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর ক্যাবিনেট কমিটি সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন বামেরাও। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এতদিন বাদে মনে পড়ল কেন? মুখ্যমন্ত্রী ভেবেছিলেন, একাই রাস্তায় ঘুরে সব সামলে নেবেন। এখন পারছেন না আর ঠেকানো যাবে না। তাই কমিটি গড়ে আইওয়াশ করছেন। নিজেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন সরকার সঠিক পথে চলছে না। সরকার ব্যর্থ।” একই সঙ্গে বাড়িতে থেকে চিকিৎসার কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা সর্বনাশের সিদ্ধান্ত।”
সোমবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক চলার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাঁদের বাড়িতে থাকার পর্যাপ্ত জায়গা আছে, আইসোলেশনে থাকার মতো জায়গা আছে, তাঁদের বাড়িতে যদি কারও করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে, তাঁরা নিজের বাড়িতেই থাকতে পারেন। আইসোলেটেড থাকবেন তাঁরা।”
যদিও পরে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ব্যাখ্যা করা হয়, আদতে করোনা পজ়িটিভ রোগীদের নয়, করোনা পজ়িটিভ রোগীর বাড়ির লোকদের জন্য এই নির্দেশ কার্যকরী। মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে রাখা বক্তব্যে যে অসঙ্গতি ছিল, তা দূর করে এই বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু তার আগেই অনেকের কাছেই এই অর্থই পৌঁছয় যে করোনা পজিটিভ রোগীদেরই বাড়িতে থাকতে বলেছেন তিনি।
কিন্তু সেসবের আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া সুরে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করা যাবে না মানে কী? রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে ঢালাও প্রচার করা হয় সেগুলো কি সব মিথ্যা? জেলায় জেলায় মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালগুলো কোথায় গেল? আর রাজ্যে করোনা এমন ভয়াবহ আকার নিতে পারে যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে এমন ইঙ্গিত কি মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছেন?