মানভঞ্জন নাকী ভাঙন রুখতে আসানসোলের পুর প্রশাসক জিতেন্দ্রকে ফোন মমতার!

0
1070

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুভেন্দু অধিকারী পর্বে তৃণমূলের জন্য নয়া বিড়ম্বনা নিয়ে হাজির আসানসোলের পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। জিতেন্দ্রর ‘ক্ষোভ’ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠক করতে মঙ্গলবার কলকাতায় পর্যন্ত আসেননি আসানসোলের পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সোমবারই অবশ্য সে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তাঁর ভরসা একমাত্র দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিই। কিন্তু বুধবার সকালেই ফের বেসুরো গাইতে শুরু করেন জিতেন্দ্র। আসানসোলের ছেলেমেয়েদের চাকরি না পাওয়া, তাঁকে সভা করতে না দেওয়া-সহ দলের বিরুদ্ধেই একাধিক ইস্যুতে অভিযোগ করেন তিনি। পরিস্থিতি বুঝে এরপরই বিকেলে উত্তরবঙ্গ থেকে সরাসরি জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সূত্রের খবর, ফোনে উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘মাথা গরম করিস না। আমি যাচ্ছি ১৮ তারিখ, কথা বলব সবকিছু নিয়ে।’ আর এতেই ক্ষোভে যেন কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়ে জিতেন্দ্রর। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পরই জিতেন্দ্র আসানসোল পুরসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বলেন, আগামীকাল বিকেল তিনটের সময় তিনি পুরসভার সব বিভাগীয় প্রধান ও কর্মীদের সঙ্গে বসবেন। চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মতে, উনি একটা গেট টুগেদার করতে চেয়েছেন। যদিও এদিন সন্ধ্যাতেই আবার শুভেন্দু-অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়ি যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি।

এদিন সকালেই জিতেন্দ্র বলেন, ‘জেলা সভাপতির পদে আছি দলের। যে মুহুর্তে ছাড়তে বলবে, সঙ্গেসঙ্গে ছেড়ে দেব। আসানসোলের পুর প্রশাসক পদে রেখেছে, সেটাও যখনই বলবে ছেড়ে দেব। আমার পদের কোনও মোহ নেই।’ তবে, বিকেলের পর যেন পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে ফিরেছে।

যদিও জিতেন্দ্র পর্বের বরফ গলাতে সোমবার রাতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরূপ বিশ্বাস জিতেন্দ্রকে ফোন করেন বলে সূত্রের খবর। ঠিক হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতায় ফিরলে ১৮ ডিসেম্বর তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন আসানসোলের দাপুটে এই নেতা। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য কটাক্ষ, ‘এখন অনেকেই বেসুরো গাইবে। আমি এটুকু বলতে পারি, ১৯ ডিসেম্বরের পর তৃণমূলের ঘণ্টা বেজে যাবে।’ গত রবিবার রাতে রাজ্যের পুরমন্ত্রীকে দেওয়া জিতেন্দ্রর একটি চিঠি সোমবার সকালে প্রকাশ্যে আসতেই সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। তা নিয়ে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় ফিরহাদের সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধও হয় জিতেন্দ্রর।

সোমবার বিকেলে জানা যায়, পুরমন্ত্রী জিতেন্দ্রকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছটার সময় কলকাতায় বৈঠকে ডেকেছেন। মন্ত্রী নাকি জিতেন্দ্রকে ফোনও করেছিলেন। পরে জিতেন্দ্র নিজেও বৈঠকের কথা স্বীকার করে নেন। তবে তিনি যাবেন কি না, তা খোলসা করেননি। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই এ নিয়ে যথেষ্ট চর্চা ছিল আসানসোলে। কিন্তু বেলা ১২টা পর্যন্ত বোঝাই যায়নি, জিতেন্দ্র আদৌ সন্ধ্যার বৈঠকে যাবেন কি না। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তিনি ব্যস্ত ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বৈঠক নিয়ে। সকাল ১১টা থেকে আসানসোল পুরনিগমের রেলপার এলাকায় পর পর তিনটি অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে ঘণ্টা দেড়েক কাটান পুর প্রশাসক। সেখান থেকে আসেন আসানসোল পুরনিগমে। সেখানে বেলা তিনটে পর্যন্ত ছিলেন। তখনই মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, জিতেন্দ্র আর পুরমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতা যাচ্ছেন না। এর পরেও তিনি একাধিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন সন্ধ্যা পর্যন্ত ৷

যদিও মঙ্গলবারই আবার জিতেন্দ্র তিওয়ারির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিদায়ী কাউন্সিলর এবং কুলটির নেতা অভিজিৎ আচার্য ফেসবুকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে বসেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এই পোস্ট ঘিরে প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়েছে। তাঁর অবশ্য প্রতিক্রিয়া, ‘আমরা আসলে দাদার অনুগামী। আজকে শুভেন্দু অধিকারীর জন্মদিন উপলক্ষে ওঁর মতো একজন বিখ্যাত যুব নেতাকে সম্মান জানালাম। আর উনি তো এখনও দলেই আছেন। আমিও জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে আছি।’ সব মিলিয়ে এখন শুভেন্দু পর্বের পর জিতেন্দ্র পর্ব নিয়ে ব্যস্ততা বাড়ল তৃণমূলের।

Previous article‘বিশ্বাসঘাতক,’ বললেন সৌগত রায়: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কায় রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাইলেন শুভেন্দু:
Next article‌এই বাংলাদেশ লালন–রবীন্দ্রনাথ–নজরুল–জীবনানন্দের’‌, বিজয় দিবসে বললেন শেখ হাসিনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here