মরসুমের শীতলতম দিন! এক ধাক্কায় তিন ডিগ্রি কমে গেল কলকাতার তাপমাত্রা ,পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ !

0
15
হীয়া রায়, দেশের সময়

ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাইরের বারান্দায় পা রাখতেই দেখা গেল ঘন কুয়াশা। একটু দূরের গাছগুলোও ঝাপসা হয়ে রয়েছে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ট্রেন শহরতলির স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়তেই নামিয়ে দিতে হলো জানলার শার্সি। না, শুধুই ঠান্ডা হাওয়ার দাপটের জন্য নয়। ধুলোর জন্য। ট্রেন ছাড়তেই ধুলো ঢুকতে শুরু করেছে খোলা জানলা দিয়ে। একই অবস্থা রাস্তাতেও। সামান্য গতিতে গাড়ি চললেই ধুলো উড়ে আসছে। নেপথ্যে শহরের তাপমাত্রার পারদ পতন আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা দূষণ।

শনিবার সকালে কলকাতায় এক ধাক্কায় তিন ডিগ্রি নেমে গেল তাপমাত্রা। শুক্রবার যেখানে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে শনিবার ঝপ করে তা ১৪ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছে। শনিবার সকালে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ২.১ ডিগ্রি কম। শুক্রবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল। দিনের তাপমাত্রা ২৬.৭ ডিগ্রি (স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৪ ডিগ্রি কম) সেলসিয়াসের বেশি ওঠেনি।

আর এই ‘ঝোড়ো ইনিংস’ই শহরের বায়ু দূষণের অনুকূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার সকালে কলকাতা শহরের গড় AQI ২১৪। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেবে যা Severe বা অতি খারাপ ক্যাটিগরিতে পড়ে। সকাল ১০টার হিসেবে বাতাসে PM2.5 মাত্রার ধূলিকণার পরিমাণ প্রতি কিউবিক মিটারে ১৩৪ মাইক্রোগ্রাম। ক্ষতিকারক PM10 মাত্রার ধূলিকণার পরিমাণ প্রতি কিউবিক মিটারে ১৭৯ মাইক্রোগ্রাম।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ভিক্টোরিয়া মনিটারিং স্টেশনের। AQI ২৬০। অন্য জায়গাগুলির অবস্থা কেমন?

ফোর্ট উইলিয়াম – ২১৯
যাদবপুর – ২১১
বিধাননগর – ১৩৩
বালিগঞ্জ – ১৬৪
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় – ১৫২
রবীন্দ্র সরোবর – ১১১(সকাল ১০টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী)

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভোরে বাতাসে দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়। এই সময়ে তাপমাত্রা কম থাকে, হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়। এর ফলেই বাতাসের জলকণা ধুলোকণাকে মাটির কাছকাছি ধরে রাখে। এই পরিস্থিতিতে শহরের উপরে একটি ধোঁয়াশার চাদর তৈরি হয়। এর ফলেই যানবাহন বা কলকারখানা থেকে নির্গত হওয়া ধোঁয়া বাতাসের উপরের স্তরে পৌঁছতে পারে না। এর থেকেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য নানান সমস্যা।
চলতি সপ্তাহে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল সোমবার। এ দিন গড় AQI ছিল ৩২৯। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল ফোর্ট উইলিয়াম, যাদবপুর ও বালিগঞ্জে। AQI ছিল যথাক্রমে ২৮৩, ২৮২ ও ২৩৩।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোরবেলায় রাস্তায় বেরিয়ে জগিং বা ব্যায়াম না করাই ভালো। দিনের যে কোনও সময়ে বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো। দূষণ থেকে বাঁচতে ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে এবং সম্ভব হলে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন তাঁরা।

অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের উপর এই মুহূর্তে কোনও নিম্নচাপ অঞ্চল নেই। ফলে উত্তুরে হাওয়ার প্রবেশে বাধা নেই। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আগামী কয়েক দিনে শীত আরও বাড়বে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী দু’দিনে দক্ষিণবঙ্গে আরও অন্তত দু’ডিগ্রি কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা। তবে উত্তরবঙ্গে আপাতত তাপমাত্রার কোনও হেরফের হবে না। সর্বত্র শুকনো আবহাওয়া থাকবে। কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

শীতের সঙ্গে বাড়বে কুয়াশাও। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় কুয়াশার সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের মতো জেলায় সকালের দিকে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকবে। এর ফলে যান চলাচলেও সমস্যা হবে স্বাভাবিকভাবেই।

শনিবার ভোরের দিকে কলকাতাতেও হালকা কুয়াশা ছিল। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই জেলাগুলিতে কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা ২০০ মিটার থেকে ৯৯ মিটার পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।

মৌসম ভবন জানিয়েছে, এবার শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের অনেক রাজ্যেই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এদিকে, দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড় এবং ঝাড়খণ্ডে শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তর–পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘন কুয়াশার দাপটের সম্ভাবনা। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বজ্রবিদ্যুৎ–সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৩০–৪০ কিলোমিটার ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজতে পারে তামিলনাড়ু, পণ্ডিচেরি। 

Previous article‘ভারত তো নিরপেক্ষ নয়…’, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সামনেই দেশের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মোদী
Next articleবনগাঁয় সহপাঠীকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরিতে জখম স্কুল পড়ুয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here