‘ মতুয়ারা সবাই নাগরিক, আমফানের পর নাটক করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী’, বনগাঁয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার হাইলাইটস

0
847

দেশের সময়, বনগাঁ: উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর – গোপাল নগরে বুধবার জনসভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে যেখানে তৃণমূলের ফলাফল আশানুরূপ ছিল না। একুশের ভোটের আগেই তাই হয়তো বনগাঁয় বিশেষ নজর দিচ্ছেন দিদি। রইল তাঁর বক্তৃতার লাইভ হাইলাইটস:


বড়মা, শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের আশ্রমে আমি বহুবার এসেছি।
অনেকেই হয়তো জানেন না, ত্রিশ বছর ধরে বড়মার চিকিৎসা আমিই করিয়েছি। বড়মা যখনই অসুস্থ হয়ে পড়তেন আমি বালুকে বলতাম, ওঁকে কলকাতায় নিয়ে এসো।
মতুয়াদের এত মানুষ আছে, কেউ জানতই না। আমার কাছে এটা নতুন জায়গা নয়। বনগাঁ, বাগদা, ঠাকুরনগর, হাবড়া, অশোকনগর, স্বরূপনগরে আমি বহুদিন ধরেই আসছি।

বনগাঁর গোপালনগরে প্রশাসনিক সভা থেকে এনআরসি ইস্যুতে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘‘এ রাজ্যে বসবাসকারী সবাই নাগরিক। মতুয়ারা এ দেশের নাগরিক। এখানে এনআরসি করতে দেব না।’’ একই সঙ্গে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে রাজ্যে সরকারি ছুটির ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

বাগদি ভাইবোনদের জন্য আমরা বোর্ড করেছি, বাউড়ি সম্প্রদায়ের জন্যও করেছি। মতুয়া ডেভেলপমেন্ট কমিটি করেছি। ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আপনারা নিজেরা বসে কমিটি ঠিক করে দিন। টাকা ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছি। এটা আপনাদের দাবি ছিল, মেনে নেওয়া হল।


মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি। এর কোনও নির্দিষ্ট দিন নেই। বাংলা মতে নেই, ইংরেজি মতেও নেই। যে দিন মেলা হয়, সেদিনই ওই তিথি। আপনারা আমাকে ৬ মাস আগে থেকে জানাবেন, মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করবে।
হরিচাঁদ ঠাকুর গুরুচাঁদ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই দেখুন দেওয়ালের কাজ শুরু হয়ে গেছে। (এই বলে ছবি দেখান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)।


এ ছাড়াও আর একটি দাবি ছিল আপনাদের। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাঠ্যপুস্তকে যাতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনী পড়ানো হয়। এই যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটা বই, (এই বলে একটি বই তুলে ধরেন।) এখানে ওঁদের কথা বলা হয়েছে। যদি মনে হয়, আর দু-চার কথা জুড়ে দেবেন, তা হলে আমাদের জানান।

জাতি শংসাপত্র পেতে গেলে আগে এক বছর, দু’বছর, পাঁচ বছর সময় লাগত। এখন সরকার নিয়ম করে দিয়েছে। বাড়িতে যদি একজন সদস্য থাকেন, যিনি জন্মসূত্রে কোনও নির্দিষ্ট জাতির, তা হলে সাত দিনের মধ্যে কাস্ট সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন।


এখানে অনেক উদ্বাস্তু মানুষ রয়েছেন। আমরা আপনাদের সাদরে গ্রহণ করেছি। এটা আপনাদেরও বাড়ি। আপনারা জেনে নিন, আপনারাও নাগরিক। আপনাদের কোনও সার্টিফিকেট দরকার নেই। এখন যদি বলে, ঠাকুমার সার্টিফিকেট দাও, ঠাকুর্দার সার্টিফিকেট দাও, দিতে পারবেন তো!
আমি বলে দিচ্ছি, মতুয়ারা সবাই দেশের নাগরিক। আর কারও কোনও সার্টিফিকেট দরকার নেই।


কী করে আপনারা নাগরিক, আমি বুঝিয়ে বলছি। নিয়ম কী? উদ্বাস্তুরা এসে এক জায়গায় থাকে। সেটা উদ্বাস্তু কলোনি বলা হয়। রাজ্যে ৯৪টি উদ্বাস্তু বস্তি ছিল। সেগুলি আইনি করে দেওয়া হয়েছে। একটা হচ্ছে রাজ্য সরকারি কলোনি, আবার আর এক রকম হল, কেন্দ্রের কোনও জমিতে বসে রয়েছে। সে রকম আরও আড়াইশো কলোনি রয়েছে, তাদের সবাইকে আমরা উদ্বাস্তু হিসেবে ঘোষণা করে নাগরিক করে দিয়েছি।

কেউ বলতে পারবে না কাউকে উদ্বাস্তু বলে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে।
কোনও এনআরসি হবে না, কোনও ক্যা হবে না। বিজেপির কাজই হল এটা। বাংলা থেকে বাঙালিদের তাড়িয়ে দাও আর বাংলাকে গুজরাত বানিয়ে দাও।


আমরা বাংলার মানুষ যে ভাষায় একসঙ্গে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলি, যারা বাংলায় থাকে, তারা বাংলার মানুষ হিসেবে চিহ্নিত।
সিপিএমের অত্যাচার দেখেননি ৩৪ বছর! সব ভুলে গেলেন তাড়াতাড়ি। কত মার মেরেছে। কত জমি খেয়েছে, কত পুকুর খেয়েছে। কাউকে এক পয়সার ওষুধ দিয়েছে। তারা রাতারাতি বিজেপি হয়ে গেছে।


বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে আসছে, আর আরএসএস নিয়ে আসছে।
হিন্দু ধর্ম কী, সেটা স্বামী বিবেকানন্দ শেখাবেন, সেটা কি আরএসএস শেখাবে?

কাজ নেই, কর্ম নেই বাইরে থেকে কিছু গুন্ডা চলে আসছে। বাড়ি বাড়ি চলে যাচ্ছে। তাদের গিয়ে বলছে, কত টাকা চাই।


যাও ক্ষমতা থাকলে বাংলার মেয়ে রঞ্জনার বিরুদ্ধে লড়ো, অপর্ণার বিরুদ্ধে লড়ো, রোশনারার বিরুদ্ধে, রহিমাদের বিরুদ্ধে লড়ো…। রাজনৈতিক লড়াই করো। ওরা পরিবার ভেঙে দিয়েছে। দেখুন মতুয়া পরিবার ভেঙে দিচ্ছে।


জানেন কৃষকদের জন্য কী করেছে? মোদীবাবু গায়ের জোরে তিনটি আইন করেছে। প্রথম বিল কী, কৃষকদের জিনিস কর্পোরেট হাউস কিনে নেবে। কালোবাজারিরা মজুত করে রাখবে। আপনি বাজার থেকে আলু পাবেন না। কৃষকদের কোনও গ্যারান্টি নেই। নয়ডাতে সব কারখানা তৈরি হচ্ছে।
কৃষকরা যা ফলায়, তা মজুতদার, আড়তদার, মুনাফাখোররা সব নিয়ে চলে যাবে।

আপনার আলু আপনি রাখতে পারবেন না। আপনার পেঁয়াজ আপনি রাখতে পারবেন না, আপনার ডাল আপনি রাখতে পারবেন না, আপনার তেল আপনি রাখতে পারবেন না। এগুলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য থাকবে না। এগুলো ওরা নিয়ে যাবে। আপনি আলুসেদ্ধ পাবেন না।


খাদ্যসাথীতে চাল দিই। বাজার থেকে কিনি, আমার ৩১ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ২ টাকায় আমরা সেই চাল দিই। ২৯ টাকা ভরতুকি দিই।
শীতকাল যেই চলে যাবে, আলুর কেজি হবে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ হবে ১৮০ টাকা। তখন বুঝতে পারবেন বিজেপি সরকার কী জব্বর সরকার। কী মিথ্যে বলার সরকার।


এত বড় ঝড় হয়ে গেল, প্রধানমন্ত্রী বসিরহাটে নাটক করে দেখতে গেলেন। বললেন ১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে গেলাম। ওটা কার টাকা। আমার টাকা। অ্যাডভান্স দিয়ে গেছে।
আমফানের টাকা দেব আমরা কৈফিয়ত নেবে তোমরা, ঐক্যশ্রী দেব আমরা, কন্যাশ্রী দেব আমরা কৈফিয়ত নেবে তোমরা! ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই।

ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসটা ভদ্র তো। সৌজন্য-টৌজন্য মানে, রবীন্দ্র-নজরুলের দেশের মানুষ। মতুয়াদের দেশের মানুষ। লোকনাথ বাবা থেকে শুরু করে সব ধর্মকে ভালবাসে। তাই তৃণমূল কংগ্রেসটাকে খামচাও। কী খামচাও? না কখনও রাম চিমটি, কখনও শ্যাম চিমটি, কখনও গোবর্ধন চিমটি!


তৃণমূল কংগ্রেস যখন তৈরি হয়েছিল, তখন ছোট চারা গাছ ছিল। একটা চারা গাছ যখন হয় ছাগল খেয়ে নিতে পারে, গরু খেয়ে নিতে পারে। কিন্তু সেই চারা গাছ বটবৃক্ষ হয়ে গেলে সেটায় গরু গুঁতোতে গেলে শিং ভেঙে যাবে।


যারা করে না কিছু আর বলে বড় বড় কথা, আমি সেই রাজনৈতিক দল করি না। আমি হঠাৎ দেখতে পাচ্ছি, কেউ কেউ বাড়াবাড়ি করছেন। একটা পথবন্ধু করা হয়েছে। অ্যাক্সিডেন্ট হলে পুলিশকে খবর দেবে। বলছে আমার পার্মামেন্ট চাকরি দরকার।

যারা কিছু করে না আর বলে বড় বড় কথা, আমি সেই রাজনৈতিক দল করি না। আমি হঠাৎ দেখতে পাচ্ছি, কেউ কেউ বাড়াবাড়ি করছেন। একটা পথবন্ধু করা হয়েছে। অ্যাক্সিডেন্ট হলে পুলিশকে খবর দেবে। বলছে আমার পার্মামেন্ট চাকরি দরকার।


আমি বারবার করে বলছি, এগুলো করতে যাবেন না। আপনাকে তো বুঝতে হবে, কোনটা করতে পারি, কোনটা করতে পারি না।
আমি প্রতিটা মিটিংয়ে দেখছি, চার জন পাঁচ জনকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর মিটিংয়ে সামনে বসে গন্ডগোল করছে।


বিদ্যুতের দাম বাড়বে না, বাসের ভাড়া বাড়বে না, বিনা পয়সায় খাদ্য, বিনা পয়সায় টেস্ট পেপার, বিনা পয়সায় জুতো টাকা আসবে কোথা থেকে? কোত্থেকে? এখান থেকে ওখান থেকে যতটা পারি চেষ্টা করি।


এই কাজ যদি একজন করে দেখাতে পারে তা হলে একদিনের মধ্যে ইস্তফা দিয়ে চলে যাব। কাজেই সব কিছু করুন আমাকে দুঃখ দেবেন না। আমাকে দুঃখ দিলে অভিমান করে চলে যাব। অনেক সময় মনে করি আমার থাকাই হয়তো উচিত নয়, এরা চাইছে না।

১০ কোটি লোককে সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। ৫০ লক্ষ মানুষ যদি না পায়… তাহলেই হল। এর থেকে বেশি করা সম্ভব?


কোভিড ওয়ারিয়র নিয়োগ করা হয়েছে। ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তারাও চাকরি চাইছে। চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে হয়।
চাকরির জন্য আমি চাই না আপনারা এক পয়সা দেন। কেউ যদি করেন, তা হলে পুলিশে গিয়ে এফআইআর করবেন। মনে রাখবেন এটা আপনার অধিকার।

Previous articleলাইভ: বনগাঁর গোপালনগর মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমি বিজেপি নই যে ভোটের সময় কথা দিয়ে পালিয়ে যাব: মতুয়া-মন পেতে কী বার্তা আজ?
Next articleকলকাতায় নাড্ডার নিশানায় মমতা: জগৎপ্রকাশ নাড্ডার বক্তৃতার হাইলাইটস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here