দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ক্রমশই ভয়াবহ হয়ে উঠছে দেশের কোভিড পরিস্থিতি। আবারও লম্বা লাফ কোভিডের গ্রাফে । একদিনে আক্রান্ত হলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৬ জন। দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় দিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখের গণ্ডি টপকাল।
ভারতের কোভিড পরিসংখ্যানে এটাই সর্বাধিক বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিল অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনার বলি হয়েছেন ৬৩০ জন। এদিকে, একদিনে কোভিড মুক্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৮৫৬ জন। যদিও এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৩।
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন জানান দিচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ হাজার মানুষ। দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ ১ হাজার ৭৮৫। মোট মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৭ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ কোটি ১৭ লাখ ৯২ হাজার ১৩৫ জন। এদিকে, এখনও পর্যন্ত দেশে টিকা নিয়েছেন মোট ৮ কোটি ৭০ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৪ জন।
ক্রমশ ভয় দেখাচ্ছে করোনা । মারণ ভাইরাসের থাবায় ঘুম উড়েছে প্রশাসনের। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হল, ‘আগামী চার সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হতে চলেছে।’
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে নীতি আয়োগের সদস্য ডা. ভি কে পাল জানান, দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। অতীতে যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে এবার। তাঁর কথায়, কয়েকটি রাজ্যে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। সকলে মিলেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এদিকে, ৪৫ বছর ও ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁদের বয়স, সেই সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের টিকা নেওয়ার নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও করোনা বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরু থেকেই এ দেশে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রবীণদের টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে। পাশাপাশি, ৪৫ বছর ও তার ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদেরকও টিকা দেওয়া হচ্ছে।
রোজ বাড়ছে সংক্রমণ। রবিবার লাখের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছিল চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন সংক্রামিতর সংখ্যা। মঙ্গলবার একুশের রেকর্ড সংক্রমণ হল দেশে। ১.৭ লক্ষ কোভিড আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে দেশে। যার অর্ধেক মহারাষ্ট্রেই। প্রায় ৫৫ হাজার।
পরিস্থিতি যখন এমনই তখন আগামী চার সপ্তাহকে ভীষণ ভীষণ উদ্বেগের বলে উল্লেখ করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেছেন, প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক না পরা বিপদকে ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী কাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, যে যে রাজ্যে ভোট রয়েছে সেই রাজ্যের মুখ্যসচিব ওই বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। সূত্রের খবর, ওই বৈঠক থেকে রাজ্যগুলির উদ্দেশে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার নির্দেশ দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।
গত রবিবার জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই বৈঠকের পরেই বৃহস্পতিবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। প্রসঙ্গত, চার রাজ্যের ভোট প্রক্রিয়া মঙ্গলবার শেষ হয়ে গেছে। বাকি শুধু পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ দফা ভোট। বাংলার তরফে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।
ইতিমধ্যেই নবান্নের তরফে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরের দিন অর্থাৎ ৯ এপ্রিল যে পাঁচ জেলায় ভোট হয়ে গিয়েছে সেই জেলাগুলির জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের এসপি ও ডিএমকে ডাকা হয়েছে বৈঠকে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রের তরফে যে নির্দেশিকা দেবেন তা ওই পাঁচ জেলায় কার্যকরার বিষয়ে নির্দেশ দেবেন মুখ্যসচিব। এখন দেখার কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক কী কী নির্দেশিকা জারি করে।