দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর এবং ছ’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনল পুলিশ। অভিযোগ, প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর আন্দোলন নিয়ে যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেই আবহে তাঁরা ভুল তথ্য রিপোর্টিং করেছেন এবং সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়েছেন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ছাড়াও, ভারতীয় সংবিধানের অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং শত্রুতার প্রচার করার ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
নয়ডার একটি থানায় এফআইআর দায়ের হয় শশী তারুর-সহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে। দিল্লিরই এক বাসিন্দা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে দাবি করেন, শশী তারুর এবং ওই সাংবাদিকদের ডিজিটাল প্রচার ও সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টের মারফত বলা হয়, দিল্লি পুলিশ গুলি করে মেরেছে এক কৃষককে। এই টুইট ট্র্যাক্টর ব়্যালির সদস্যদের উত্তেজিত করে তোলে বলে দাবি তাঁর, যার জেরে লালকেল্লা ও সংলগ্ন এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।
এই অভিযোগের জেরে যে ছ’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাঁরা হলেন, মৃণাল পাণ্ডে, রাজদীপ সরদেশাই, বিনোদ জোশ, জাফর আগা, পরেশ নাথ এবং অনন্ত নাথ।
প্রসঙ্গত, প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজদীপ টুইটারে লিখেছিলেন, “৪৫ বছরের এক কৃষক, নবনীত পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা আমায় বলেছেন, এই ‘বলিদান’ বিফলে যাবে না।” সেই সঙ্গে মৃত কৃষকের ছবিও পোস্ট করেন তিনি। তথ্য বলছে, ওই মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের গুলির কোনও সম্পর্ক ছিল না। পুলিশের গুলি চলার কথাই সত্য ছিল না।
অভিযোগ, তাঁর মতো সিনিয়র এবং দায়িত্ববান সংবাদ-ব্যক্তিত্বের এমন একটি টুইট মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের চেহারা নিতে পারত। পরে সে টুইট ভুল প্রমাণিত হলে ডিলিট করেন তিনি। আসল ঘটনার ভিডিও-ও পোস্ট করেন সেই সঙ্গে। কিন্তু তার আগেই সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে মিথ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে দায়ী হয়েছেন তিনি। এই কারণে গতকালই রাজদীপ সরদেশাইকে দু’সপ্তাহের জন্য ‘অফ এয়ার’ করেছে ইন্ডিয়া টুডে সংবাদ সংস্থা। অর্থাৎ আগামী দু’সপ্তাহ তিনি কোনও খবর বা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারবেন না তিনি। একইসঙ্গে, তাঁর একমাসের বেতনও কেটে নিয়েছে সংস্থা।
দিল্লির কড়া ঠান্ডায় মাসাধিক সময় ধরে একটানা আন্দোলন-বিক্ষোভ করছেন কৃষকরা। সরকারের নতুন কৃষিবিল প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁদের এই আন্দোলন এতদিন অহিংস ছিল। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি কৃষকদের ট্র্যাক্টর ব়্যালি ঘিরে তুমুল অশান্তি হয় রাজধানীর বুকে। একাংশের বিশৃঙ্খলায় তৈরি হয় হিংসার আবহ। লালকেল্লা চত্বরের ভিতরে ঢুকে জাতীয় পতাকার পাশেই লাগানো হয় আন্দোলনকারীদের পতাক। শুরু হয় পুলিশ-কৃষক সংঘর্ষ।
ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছে কেন্দ্র। বুধবার সাংবাদিকদের সামনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর বলেন, “যারা অন্যদের উস্কানি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লালকেল্লায় যেভাবে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে তা বরদাস্ত করবে না দেশ।”
কৃষক নেতাদের একাংশ আবার লালকেল্লার ঘটনার জন্য পাঞ্জাবের গায়ক, অভিনেতা তথা সমাজকর্মী দীপ সিধুকে দায়ী করেছেন। এক কৃষক নেতা বলেন, “দীপ সিধু সরকারের লোক। এই ষড়যন্ত্রটা আমাদের বোঝা দরকার।” পরে তিনি বলেন, “দীপ সিধু সর্দার নয় গদ্দার।”
অন্যদিকে দীপ সিধু ফেসবুকে পোস্ট করে বলেন, তাঁরা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেননি। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে ‘নিশান ই সাহিব’ পতাকা লাগিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “আমরা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানানোর জন্য নিশান সাহিব ও কৃষক সংগঠনের পতাকা লাগিয়েছিলাম। জাতীয় পতাকার অবমাননা করিনি। আমরা কিষাণ-মজদুর একতা নিয়ে স্লোগানও দিয়েছিলাম।”
ট্র্যাক্টর মিছিলের পরদিনই কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে। কিষাণ সংঘর্ষ কমিটির নেতা ভি এম সিং বলেছেন, “এই বিক্ষোভে এমন কেউ কেউ আছেন যাঁদের উদ্দেশ্য অন্য। আমরা তাঁদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারি না।” ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের একটি অংশও আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। তাদের বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে।