দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার ভুবনেশ্বরে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকের জন্য মঙ্গলবারই কলকাতা থেকে সপারিষদ রওনা হয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার শাসক দল ও নবান্নের একাধিক সূত্রে বলা হচ্ছিল, পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে আলাদা কথা বলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু পূর্ব নির্ধারিতভাবে শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নেতৃত্বে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক হলেও, অমিত শাহ-মমতা আলাদা মিটিং হল না। বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এনসিআর, এনপিআর, ক্যা (পড়ুন নাগরিকত্ব সংশোধন আইন) নিয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি। কারণ সে সব অ্যাজেন্ডায় ছিল না।” তিনি আরও জানান, বাংলার প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার প্রসঙ্গ তিনি বৈঠকে তুলেছিলেন। এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর যে দুটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছিল-তার কোনও ক্ষতিপূরণের টাকা বাংলা পায়নি। ফনি ও বুলবুলের টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প খাতে কেন্দ্রের কাছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে বাংলার।
সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, এদিনের বৈঠক শুরু হওয়ার পর তিনি দিল্লির হিংসার ঘটনা প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। যে ভাবে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কায়েম রাখার কথা বলেন। সেই সঙ্গে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
এবার যেহেতু পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে ওড়িশা অতিথি-রাজ্য, তাই বৈঠকের ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক তাঁর বাসভবনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও বাকি মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যাহ্নভোজে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।
দেখা যায়, খাবারের টেবিলে একদিকে বসে রয়েছেন অমিত শাহ। তাঁর বাম পাশে নবীন পট্টনায়েক ও ডানদিনে নীতীশ কুমার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসেছেন ঠিক উল্টোদিকে। মমতার পাশে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী তথা ওড়িশার বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান।
সূত্রের খবর, মধ্যাহ্নভোজে নিজেদের মধ্যে খুব যে খোশ গল্প বা আড্ডা হয়েছে তা নয়। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, আসলে নবীন পট্টনায়েক গত দেড় দশক ধরেই কোনওরকম দলাদলির মধ্যে নেই। তিনি একলা চলেন, আর কেন্দ্রে যার সরকার থাকে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলেন। নীতীশ-অমিত শাহর সম্পর্ক মন্দ নয়। আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও নীতীশের সখ্য ছিল। কিন্তু নীতীশ কুমার কংগ্রেস-আরজেডি জোট ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার পর মমতার সঙ্গে তাঁর আগের মতো সম্পর্ক নেই।
এক নজরে:
- ওডিশা গিয়ে প্রথমে পুরীর মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
- সেখানেই দিল্লি ইস্যুতে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, ‘যা ঘটছে, তাতে আমার মন কাঁদছে। সকলের মঙ্গলের জন্য পুজো দিয়েছি। দেশের মানুষের শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছি।’
- এছাড়াও দিল্লির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে নিজের লেখা একটি কবিতাও পোস্ট করেন তিনি।
অবিলম্বে রাজধানীতে শান্তি’ ফেরানের জন্য সচেষ্ট হতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনুরোধ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুবনেশ্বরে আন্তঃরাজ্য পরিষদের পূর্বাঞ্চলের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠকে এমনই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে কিছু জানাযায়নি৷