

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দু’দিনের ভারত সফরের দিকে নজর আন্তর্জাতিক মহলের। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কী অবস্থান হতে চলেছে দিল্লির, তা নিয়েও উঠছিল প্রশ্ন। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল সাউথ ব্লক।

সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানিয়েছেন, ভারত নিরপেক্ষ নয়। বরং শান্তির পক্ষে। অর্থাৎ চলতি বছরের শুরুতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দেশের যে অবস্থান সামনে রেখেছিলেন মোদী, শুক্রবার পুতিনের ভারত সফরের সময়ে তাতে অনড় থাকলেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই দিল্লি জানিয়ে এসেছিল, ভারত শান্তির পক্ষে।কারণ এই সময় যুদ্ধের নয়, শান্তির।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দুই নেতার বৈঠকে মোদী বলেন, “ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকেই আমাদের নিরন্তর কথা হয়েছে। ভারত নিরপেক্ষ নয়। ভারত শান্তির পক্ষে। আমি বিশ্বাস করি সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিশ্বকে ফের শান্তির পথে ফিরিয়ে আনবে।” মোদী যখন এই কথা বলছেন তখন তাঁর পাশে বসে গভীর মনোযোগে শুনছিলেন পুতিন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বারবার উঠে আসে আস্থার গুরুত্ব। তিনি পুতিনকে ‘ভারতের প্রকৃত বন্ধু’ বলে উল্লেখ করে জানান, আন্তর্জাতিক রাজনীতির টানাপড়েনে বিশ্বাসই এখন বড় শক্তি। গত এক দশকে দু’জনের ১৯তম মুখোমুখি সাক্ষাৎ – যার প্রতিটি ভারত-রাশিয়া কৌশলগত সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে। বৈঠকের শুরু থেকেই দুই নেতার আন্তরিকতা স্পষ্ট ছিল।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চার বছর হয়েছে। পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞায় পুতিনকে কার্যত আন্তর্জাতিক মঞ্চে একঘরে করার চেষ্টা যখন জোরদার, ঠিক সেই সময়েই নয়াদিল্লিতে তাঁর সফর বিশেষ তাৎপর্য তৈরি করেছে। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়া- ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি-সমঝোতার পথ খুঁজতে গতি বাড়িয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই মোদী পুতিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি নিয়মিত আমাদের সব পরিস্থিতি জানিয়েছেন। বিশ্বাসই আমাদের বড় সম্পদ। দেশের মঙ্গল শান্তিতেই। আর সেই পথেই আমরা একসঙ্গে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”

এদিকে, দিল্লিতে ভ্লাদিমির পুতিনের সফরের প্রথম সন্ধেতেই এক বিশেষ মুহূর্ত সামনে আনেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোক কল্যাণ মার্গে বৈঠকের সময় রুশ ভাষায় প্রকাশিত শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতা পুতিনকে উপহার দেন তিনি ।
সেই সময়ও দুই নেতার একপ্রস্ত বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে, যেখানে ভারত–রাশিয়া বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে বিশেষ আলোকসজ্জা ও দুই দেশের পতাকা সাজানো ছিল। বৈঠকের আগে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মোদী লিখেছিলেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে যাবতীয় আলোচনা নিয়ে আশাবাদী। ভারত–রাশিয়া বন্ধুত্ব বহু দশকের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এই সম্পর্কে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হয়েছে।

এরই মধ্যে অবশ্য ইন্ডিয়া টুডে–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন জানিয়েছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার নতুন ধাক্কাও ভারত–রাশিয়া সম্পর্ককে নড়বড়ে করতে পারেনি। শুল্কনীতি হোক বা রুশ তেল কেনা নিয়ে চাপ, এসবের পেছনে ভারতের বাড়তে থাকা প্রভাবের আতঙ্কই কাজ করছে।




