দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অভুতপূর্ব মন্দার কবলে পড়তে চলেছে ভারত। চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও সম্ভবত সংকুচিত হতে চলেছে জিডিপি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর মাইকেল পাত্রের নেতৃত্বে অর্থনীতিবিদদের একটি টিম একথা জানিয়েছে।
চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে জিডিপি বা মোট জাতীয় উৎপাদন কমেছিল প্রায় ২৪ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপির সংকোচন হবে সম্ভবত ৮.৬ শতাংশ। কোনও দেশের জিডিপি পরপর দু’টি ত্রৈমাসিকে সংকুচিত হলে তাঁকে ‘টেকনিক্যাল রিসেশান’ বলা হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতের অর্থনীতিতে সম্ভবত টেকনিক্যাল রিসেশান দেখা দিয়েছে। সরকার এসম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করবে ২৭ নভেম্বর।
লাইভ আপডেট: কী বললেন আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এক নজরে:
করোনা সঙ্কটের কারণে কার্যত লাইনচ্যুত দেশের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে পুনরায় স্থিতি আনতে আরও এক উদ্যোগ কেন্দ্রীয় সরকারের। নয়া ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর।
এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে পুনরায় স্থিতি আনতে আরও এক উদ্যোগ কেন্দ্রীয় সরকারের। নয়া ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর। আত্মনির্ভর ভারত ৩.০ এর ঘোষণা করলেন নির্মলা সীতারমণ।
অর্থনৈতিক গ্রোথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং অভ্যন্তরিণ কর্মসংস্থানের জন্যই এই উদ্যোগ বলে জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
সরকার ইতিমধ্যেই ৩টি সেক্টরের জন্য ৫১,৩৫৫ কোটি টাকার পিএলআই স্কিমে অনুমোদন দিয়েছে।
১০টি চ্যাম্পিয়ন সেক্টরে ম্যানুফ্যারচারিং প্রোডাকশান লিংকড ইনসেনটিভ বা পিএলআই-এর জন্য ১.৪৬ লক্ষ কোটি।
এই যোজনার সুবিধা পাবেন সেই সমস্ত কর্মী যাঁরা ইপিএফও রেজিস্টার্ড সংস্থায় মাসিক ১৫ হাজার টাকার কম বেতনে যুক্ত হয়েছেন, এবং ১৫ হাজার টাকার কম বেতনের সেই সমস্ত কর্মী যাঁরা চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন বা ১ অক্টোবরের পর কাজে যোগদান করেছেন।
দেশের অর্থনীতি নিয়ে নতুন সম্ভাবনার কথা বলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ইতিবাচক অর্থনীতির কথা বলেছে তারা। আগে চতুর্থ ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির উত্থানের কথা বলা হলেও এখন তৃতীয় ত্রৈমাসিকেই সেই বৃদ্ধি দেখতে পারছে তারা, জানাচ্ছেন নির্মলা।
সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের জন্য শেয়ার বাজার রেকর্ড উচ্চতা স্পর্শ করেছে। সব নজির ছাড়িয়ে গেছে ফোরেক্স রিজার্ভ, জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কারমুখী পদক্ষেপের জন্যই ভারতীয় অর্থনীতিতে পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বললেন সীতারমণ।
কোভিড থেকে মুক্তি পর্বে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য কেন্দ্রের আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজন। লাগু হয়েছে ১ অক্টোবর ২০২০ থেকে। চলবে ২ বছরের জন্য৷
সরকারের পদক্ষেপে উন্নতি হতে পারে। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইতিবাচক বৃদ্ধি পেতে পারে, বললেন অর্থমন্ত্রী।
জিএসটি আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে। করোনা আবহেই দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই জানালেন অর্থমন্ত্রী৷
বুধবারেই, ১০ টি সেক্টরের নির্মাতাদের জন্য ২ লক্ষ কোটি টাকার প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) ঘোষণা করেছে সরকার।
কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর দাবি করেন, অপ্রত্যাশিত দ্রুত গতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। তিনি তথ্য দিয়ে বলেন, গত অক্টোবরে জিএসটি সংগ্রহ ছাড়িয়ে গিয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে এই প্রথম এত বেশি পরিমাণে জিএসটি আদায় হয়েছে। অন্যান্য করও আদায় হয়েছে ভাল পরিমাণে। ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেসের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্টও বাড়ছে দ্রুত গতিতে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। রেলে বৃদ্ধি পেয়েছে পণ্য পরিবহণ।
লকডাউনের জেরে এপ্রিল থেকে জুন এই ত্রৈমাসিকে প্রায় ২৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল দেশের জিডিপি। তারপর শুরু হয়েছে আনলক। আশা ছিল আনলক পর্বে অন্তত ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। কিন্তু সে গুড়ে বালি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিকেও সম্ভবত বৃদ্ধির বদলে সঙ্কুচিতই হতে চলেছে জিডিপি। তাও আবার ৮.৬ শতাংশ। যার অর্থ ইতিহাসে এই প্রথমবার সরকারিভাবে মন্দায় প্রবেশ করবে ভারত।
মানিটারি পলিসির দায়িত্বে থাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর মাইকেল পাত্রর নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ দল নিজেদের রিপোর্টে জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকেও দেশের জিডিপি ৮.৬ শতাংশ সঙ্কুচিত হতে চলেছে। ওই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, ‘ভারত ২০২০–২১ অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে টেকনিক্যাল রিসেশন অর্থাৎ মন্দায় প্রবেশ করেছে।’ যদিও সরকারিভাবে রিপোর্টটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। আগামী ২৭ নভেম্বর তা প্রকাশিত হওয়ার কথা। কয়েকটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিজেদের সূত্রকে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করেছে। আর খবর প্রকাশ্যে আসতেই সেটিকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, ‘ইতিহাসে প্রথমবার মন্দা শুরু হল দেশের অর্থনীতিতে। প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন পদক্ষেপ ভারতের আসল শক্তিকেই তার দুর্বলতায় পরিণত করেছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর জন্য মূলত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারকে। অর্থমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী সে অর্থে বিশেষ কোনও কার্যকরী নীতিই গ্রহণ করতে পারেননি। কেন্দ্র যে তথাকথিত প্যাকেজের কথা বলছে, সেটি মুলত ঋণ সর্বস্ব। যার সুবিধা সরাসরি সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। আর সাধারণ মানুষ সরাসরি সুবিধা না পেলে আর যাই হোক অর্থনীতির দৈন্যদশা ঘুচবে না।
অর্থনীতিবিদরা অবশ্য বলছেন, মন্দার পরিস্থিতি কেটে যেতে পারে শীঘ্র। দেশে গাড়ির বিক্রি বাড়ছে। ব্যাঙ্কিং লিকুইডিটি বাড়ছে। ধীরে ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। এই পরিস্থিতি যদি বজায় থাকে, তাহলে অক্টোবর-ডিসেম্বরের ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি মন্দা কাটিয়ে উঠবে। ফের শুরু হবে বিকাশ।