দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চিনকে টপকে ছিল আগেই। এ বার করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যায় ইরানকেও টপকে গেল ভারত। গত চার দিন ধরে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী গত চারদিনে ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২৬৪৮৬। আর এই রেকর্ড বৃদ্ধিতেই বিশ্বের প্রথম ১০ করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় ঢুকে পড়েছে ভারত। এই মুহূর্তে ১০ নম্বরে রয়েছে ভারত।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী, গত চার দিনে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দেশে। শুক্রবার আক্রান্ত বেড়েছিল ৬০৮৮। শনিবার তা হয় ৬৬৫৪। রবিবার করোনা আক্রান্ত বাড়ে ৬৭৬৭। আর আজ, সোমবার এই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৯৭৭। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৬৪৮৬। আর তার জেরেই বিশ্বের তালিকায় অনেকটা উপরে উঠে গিয়েছে ভারত।
এই মুহূর্তে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি আমেরিকায়। সেখানে মোট আক্রান্ত ১৬,৮৬,৪৩৬। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার এই দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৬৫,২১৩। তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে রাশিয়া। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৪৪,৪৮১। চার নম্বরে স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ২,৮২,৮৫২। পাঁচ নম্বরে রয়েছে ব্রিটেন। এই দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২,৫৯,৫৫৯। ছ’নম্বরে রয়েছে ইতালি। ইউরোপের এই দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২,২৯,৮৫৮ জন। সাত নম্বরে রয়েছে ইউরোপের আর একটি দেশ ফ্রান্স। আইফেল টাওয়ারের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১,৮২,৫৮২। আট নম্বরে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১,৮০,৩২৮। নবম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। এই দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১,৫৬,৮২৭। তারপরেই ১০ নম্বরে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ১,৩৮,৮৪৫।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ভারতে টেস্টের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন দেড় লক্ষ টেস্ট হচ্ছে দেশে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। টেস্ট বাড়ায় উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গ থাকা মানুষের শরীরেও সংক্রমণ ধরা পড়ছে। এছাড়া ভারতে ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্যে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিজেদের রাজ্যে ফেরার পর শ্রমিকদের পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই শ্রমিকদের ফেরার ফলে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও ভারতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তার দুটি কারণ হল মৃত্যুহার ও সুস্থতার হার। ভারতে কোভিড ১৯-এ মৃত্যুহার ২.৯০ শতাংশ যা গোটা বিশ্বে সবথেকে কম। অন্যদিকে সুস্থতার হার ৪১.৫৭ শতাংশ। সুস্থতার হার ক্রমাগত বাড়তে থাকা ইতিবাচক লক্ষণ বলেই জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেবে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৫৪ জনের। এই নিয়ে দেশে কোভিডের কারণে মৃত্যু হয়েছে মোট চার হাজার ২১ জনের। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ জনের। ৮৫৮ জন মারা গিয়েছেন গুজরাতে। মধ্যপ্রদেশে মৃতের সংখ্যা ২৯০, পশ্চিমবঙ্গে ২৭২। শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে দিল্লি (২৬১), রাজস্থান (১৬৩), উত্তরপ্রদেশ (১৬১) ও তামিলনাড়ু (১১১)।
দেশের মধ্যে প্রথম করোনা সংক্রমণের সন্ধান মিলেছিল কেরলে। তার কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষ উঠেছিল মহারাষ্ট্র। তার পর থেকে মহারাষ্ট্রের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়নি অন্য কোনও রাজ্যে। সেই মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৫০ হাজারের গণ্ডি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৪১ জন। এ নিয়ে সে রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫০ হাজার ২৩১ জন।
আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সে রাজ্যে মোট কোভিড-১৯ আক্রান্ত ১৬ হাজার ২৭৭ জন। এর পরে রয়েছে গুজরাত। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৬ জন। রাজধানী দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৪১৮ জন। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (৭,০২৮), মধ্যপ্রদেশ (৬,৬৬৫), উত্তরপ্রদেশ (৬,২৬৮), পশ্চিমবঙ্গ (৩,৬৬৭), অন্ধ্রপ্রদেশ (২,৮২৩), বিহার (২,৫৮৭), কর্নাটক (২,০৮৯), পঞ্জাব (২,০৬০), তেলঙ্গানা (১,৮৫৪), জম্মু-কাশ্মীর (১,৬২১), ওড়িশা (১,৩৩৬) ও হরিয়ানা (১,১৮৪)।
পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৬৬৭ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০৮ জন। রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৭২ জনের। যদিও রাজ্য সরকারের হিসেবে, করোনাভাইরাসের জেরে মৃতের সংখ্যা ২০০। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কোমর্বিডিটির কারণে।
করোনাভাইরাসে যেমন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তেমন সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও নেহাত কম না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এটাই যেন আশার আলো। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও অবধি সুস্থ হয়েছেন ৫৭ হাজার ৭২১ জন। তার মধ্যে তিন হাজার ২৮০ জন সুস্থ হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।