দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিড ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট মোডার্না বায়োটেকনোলজি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তত্ত্ববধানে ৩৬ হাজার জনকে টিকা দেওয়ার বৃহত্তর কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। এদিকে পিছিয়ে নেই আমেরিকার আরও এক নামজাদা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার। জার্মান ফার্ম বায়োএনটেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারাও মোডার্নার মতোই আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজিতে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। এই টিকার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে সাফল্যও মিলেছে। এবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরু হল করল ফাইজার।
গতকাল, সোমবার সংস্থার তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ৩০ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হবে। আজ থেকেই বিশ্বজুড়ে ১২০টি ক্লিনিকে টিকার ট্রায়াল শুরু করল ফাইজার ও বায়োএনটেক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯টি জায়গা ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানিতেও শুরু হয়েছে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। ফাইজারের কর্ণধার অ্যালবার্ট বোরলা বলেছেন, ১৮ থেকে ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবকদের টিকার ট্রায়ালের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। দুটি দলে ভাগ করে টিকার ডোজের পরীক্ষা হবে। প্রবীণদের শরীরে এই টিকার প্রভাবে কতটা অ্যান্টিবডি তৈরি হল সেটা পরিমাপ করা হবে। সব ঠিক থাকলে অক্টোবরেই ভ্যাকসিন চলে আসবে বলে দাবি করেছেন অ্যালবার্ট।
UPDATE: $PFE $BNTX mRNA-based #vaccine candidate against SARS-CoV-2 (BNT162b2) is moving into Phase 2/3 clinical development and enrollment.
— Pfizer Inc. (@pfizer) July 27, 2020
➡️ Read the release: https://t.co/9PmDiChTCs #COVID19 @BioNTech_Group pic.twitter.com/LQiOVlzlP3
জার্মান বায়োটেকনোলজি ফার্ম বায়োএনটেক এসই-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কোভিড ভ্যাকসিন বানাচ্ছে ফাইজার। ফাইজারের ভ্যাকসিন রিসার্চ বিভাগের প্রধান ক্যাথরিন জ্যানসেন বলেছেন, এই আরএনএ ভ্যাকসিন দেহকোষকে ভাইরাল প্রোটিন তৈরিতে বাধ্য করে যাতে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি শরীরেই তৈরি হয়ে যায়। এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন জার্মানির বায়োএনটেকের অধ্যাপক উগার সাহিন।
তিনি জানিয়েছেন এই আরএনএ ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের নাম BNT162। মানুষের শরীরে ‘মেমরি বি সেল’ তৈরি করবে যা থেকে দেহকোষে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। অ্যান্টিবডি বেসড ইমিউন রেসপন্স বা অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি করবে এই ভ্যাকসিন। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
ফাইজার-বায়োএনটেকের প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের রিপোর্ট
মে মাস থেকে BNT162 ভ্যাকসিনের প্রয়ম পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করেছিল ফাইজার-বায়োএনটেক। ৩৬০ জনকে প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছিল। ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের বেছে নেওয়া নেওয়া হয়েছিল প্রথম পর্যায় অর্থাৎ ফেজ-১ ট্রায়ালের জন্য। বয়স্কদের শরীরেও এই ভ্যাকসিনের কার্যকারীতা পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছিল ফাইজার। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের ফল ইতিবাচক দেখে ৮৫ বছর ও তার বেশি বয়সীদের টিকার ট্রায়ালের জন্য বেছে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল।
সূত্র: বায়োএনটেকের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল
প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে আসে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। ফাইজারের সিইও অ্যালবার্ট বোরলা জানান, প্রথম ধাপে যাদের ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা হয়েছিল, তাঁদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করেছে। কন্ট্রোলড ট্রায়াল হয়েছিল এই ভ্যাকসিনের। তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফাইজারের ভ্যাকসিন যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়তে শুরু করেছে। কন্ট্রোলড ট্রায়াল হয়েছিল এই ভ্যাকসিনের। একটি দলকে ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল, অন্যদলকে সাধারণ থেরাপিতে রাখা হয়েছিল। তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফাইজারের ভ্যাকসিন যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়তে শুরু করেছে। বি-কোষ সক্রিয় হয়ে কোভিড প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে।
বেইলর কলেজ অব মেডিসিনের ন্যাশনাল স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান পিটার হটেজ বলেছেন, ফাইজার ও বায়োএনটেকের প্রথম ভ্যাকসিন ট্রায়ালের রিপোর্টে আশা জেগেছে। এই ভ্যাকসিনের ডোজে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে সেটা আগামী দিনে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।