দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ শক্তি বাড়িয়ে প্রবল গতিতে আছড়ে পড়েছে সুপার সাইক্লোন আমপান। রাজ্য জুড়ে শুরু ক্ষয়ক্ষতি। ১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ঝড় বইছে কলকাতার উপর দিয়েও।
দেশের সময় লাইভ আপডেট পড়ুন:
২০ মে সন্ধে ৬টা: কলকাতায় হাওয়ার গতি বেড়ে হল ১১২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়।
২০ মে বিকেল ৫:৩০: হাওড়ায় টিনের চাল পড়ে মৃত এক ১৩ বছরের কিশোরী।
২০ মে বিকেল ৫টা: কলকাতায় হাওয়ার গতি বেড়েছে ১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। একাধিক এলাকা থেকে গাছ পড়ার খবর এসেছে৷ ইন্টারনেট সংযোগ বিপর্যস্ত, বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন বহু এলাকায়।
২০ মে বিকেল ৪-৩০: সাগরদ্বীপে ঢুকে গেছে আমপানের একটি অংশ৷ দিঘা থেকে আর মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে আছে ঝড়টি।
ঝড়ের গতি ক্রমেই বাড়ছে কলকাতায়। আবহাওয়া দফতরের শেষ বুলেটিন বলছে, কলকাতার উপর দিয়ে ইতিমধ্যেই গড়ে ৭২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝড় বইছে। দমদমে এই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৪ কিলোমিটার। আজ সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৪১.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ে গেছে। বিকেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ও বৃষ্টি উভয়ের দাপটই বাড়ছে। কখনও কখনও হাওয়ার দমক পেরোচ্ছে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগও।
তথ্য বলছে দিঘা থেকে আর মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে সুপার সাইক্লোন আমপান। কিন্তু তাতেও শহর কলকাতায় যেভাবে ঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ক্রমেই ঘনিয়ে উঠছে আরও বেশি করে।
আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কা ও পূর্বাভাস সত্যি করে দুপুর আড়াইটে নাগাদ শুরু হয়েছে আমপানের ল্যান্ডফল। ঘণ্টা চারেক চলবে এই তাণ্ডব। ফলে মনে করা হচ্ছে, আগামী দু-এক ঘণ্টায় আরও বিপর্যস্ত হবে শহর কলকাতা। ইতিমধ্যেই কলকাতাকর উত্তর থেকে দক্ষিণ, বাইপাস থেকে ভিআইপি বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে পড়তে শুরু করেছে। ছিঁড়েছে বিদ্যুতের তারও। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগেও বয়েছে ঝোড়ো হাওয়া।
হাওয়া অফিসের আশঙ্কা, কলকাতায় সাম্প্রতিক অতীতের সবচেয়ে ভয়ানক অভিঘাত হতে চলেছে আমপানের। ইতিমধ্যেই শহরের চার হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে রেখেছে প্রশাসন। বিপজ্জনক বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। নিকটবর্তী স্কুল, কমিউনিটি হলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিপজ্জনক ও পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের। অনেককে তাঁদের আত্মীয়দের বাড়িতেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফুটপাতবাসীদেরও নিকটবর্তী স্কুল ও কমিউনিটি হলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আয়লা, ফণী কিংবা বুলবলেও তেমন ক্ষতি হয়নি কলকাতায়। প্রতিবারই কলকাতা বেঁচে গিয়েছে ঝড়ের সরাসরি ধাক্কা থেকে। কিন্তু এবার আমপানের ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি হতে চলেছে। একাধিক উড়ালপুলে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন এলাকা। আগামী কয়েক ঘণ্টা আতঙ্কের প্রহর গুণতে হবে শহরবাসীকে।
ইতিমধ্যেই কলকাতা বিমানবন্দরের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ছোট বিমানগুলি। আশঙ্কা, কলকাতার উপর দিয়ে সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে৷ এর ফলে কলকাতাকে তছনছ করতে পারে ঘূর্ণিঝড়৷
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটা দল মোতায়েন রয়েছে গঙ্গার পাশে। ঝড়ের প্রভাবে গঙ্গায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কায় এই প্রস্তুতি। কেউ যাতে গঙ্গায় না নামে তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। আর একটি দল রয়েছে রাস্তায়। গাছ পড়লে বা ল্যাম্পপোস্ট উপড়ে গেলে তা যাতে সঙ্গেসঙ্গে সরানো যায়, সে কাজে তৈরি রাখা হয়েছে তাদের।
সুপার সাইক্লোন আমপানের আক্রমণে রাজ্যে মৃত্যু হল দু’জনের।
সূত্রের খবর, প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে বাড়ি ভেঙে চাপা পড়ে মারা গেছে হাওড়ার ১৩ বছরের কিশোরী লক্ষ্মী কুমারী সাউ। শালিমার এলাকার রাজকিশোর চৌধুরী লেনের বাসিন্দা।
মিনাখাঁর ৫৬ বছরের এক প্রৌঢ় নুরজাহান বেওয়া-ও ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। বসিরহাট মহকুমার মিনাখাঁ থানার দক্ষিণ বার্গায় নারকেল গাছ পড়ে নুরজাহান বেওয়ার মাথায়। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় নারকেল গাছের গুঁড়ি পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তাঁর দেহটি মিনাখাঁ থানার পুলিশ উদ্ধার করে বসিরহাট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পাশাপাশি হাড়োয়ায় গাছ পড়ে আরও দু’জনের আহত হওয়ার খবর মিলেছে। বর্তমানে তাঁরা হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রাজ্য সরকারের তরফে দু’টি মৃত্যুর ঘটনাই নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বারবার করে নির্দেশ দিয়েছেন ঘর থেকে কাউকে না বেরোতে। বিপজ্জনক এলাকার বহু বাসিন্দাকে নিরাপদে সরানোও হয়েছে অন্যত্র। মুখ্যমন্ত্রী নিজে কন্ট্রোল রুমে থেকে গোটা রাজ্যের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।