বিদ্বেষ নয়,চাই যথার্থ দেশপ্রেম

0
820

সম্পাদকীয়ঃপুলওয়ামায় ভীারতীয় সেনা জাওয়ানদের মার্মান্তিক হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে যে জঙ্গি বাহিনি তাদের ক্ষমা করার কোন প্রশ্ন ওঠে না,যে কোন মূল্যে তাদের প্রতিহত করতে হবে,তাতে কারোর কোন দ্বিমত নেই,থাকতে পারে না।তাই ভারতীয় বায়ুসেনা যে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযান চালিয়েছে বলে খবর তাতে ভরতবাসীর খুশি না হওয়ার কোন কারণ নেই।

যে জাওয়ানদের অমূল্য জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে কতগুলো বিপথগামি আত্মঘাতি জঙ্গি তাদের প্রতিহত করতেই হবে,কিন্তু সেই প্রতিবিধানের প্রয়াস যেন বিদ্বেষ আর হিংসা ছড়ানোর নামান্তর না হয়ে উঠতে পারে,সে দিকেও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।পাকিস্থানকে শিক্ষা দেওয়ার উন্মাদনায় আমরা যেন ভুলে না যাই যে পাকিস্থানের সমস্ত সাধারণ নাগরিকরাই পাকিস্থান সরকারের জঙ্গি কার্যকলাপকে উসকানি দেওয়ার সিদ্ধান্তের শরিক নয়।

আমরা এ দেশের সাধারণ নাগরিকরা যেমন,সরকারের নানা কাজের সঙ্গে একমত হতে পারি না,তেমনি পাকিস্থানেও এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা সেখানকার সরকারের লাগাতার জঙ্গিদের উসকানি দেওয়ার প্রবনতার ঘোর সমালোচক।তাই এককথায় সমস্ত পাকিস্থানবাসীকেই শত্রু বানিয়ে ফেললে আমাদের দেশপ্রেম মোটেও বাড়তি কোন মাত্রা পেতে পারে না।

পুলওয়ামার ঘটনার পর যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে একদল লোক দেশদ্রোহি চিহ্নিত করতে শুরু করেছে,যুদ্ধের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললেই যে ভাবে তাদের দেশদ্রোহি বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা চলছে,যে ভাবে এ রাজ্যে কাশ্মীরি শালওয়ালা থেকে কাশ্মীরি ব্যবসায়ীদের উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে তাতে বলতেই হয়,বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে কখোন দেশপ্রেমী সাজা যায় না।যুদ্ধ সব সমস্যার সমাধান নয় বলে কেউ মনে করতেই পারেন,তাতে তিনি কোন বিচারে দেশদ্রোহী হয়ে যান?যুদ্ধ যে সমাধান নয় সেকথা তো পুলওয়ামায় নিহত সেনা জাওয়ানের স্ত্রী এ রাজ্যেরই মিতা সাঁতরাই বলেছেন,যে মানুষটা তাঁর সবচেয়ে আপনজনের কফিনবন্দি দেহের সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধকে সমাধান ভাবতে রাজি নয়,তাঁর কথাকে সম্মান ও গুরুত্ব না দিয়ে আমরা কী গুরুত্ব দেবো কতগুলো রাজনৈতিক ফায়দাবাজদের কথায়,যারা নিজেরা কোনদিন যুদ্ধে যাবে না,নিজেদের ছেলেমেয়েদের কোনদিন যুদ্ধে পাঠাবে না,যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদ দুরত্বে বসে যারা শুধু শফিং মলে বাজার করবে আর মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখবে,তাদের কাছ থেকে শিখতে হবে দেশপ্রেমের বাণী!!

এইসব ভন্ড দেশপ্রেমিকদের দেশপ্রেম ফেসবুক আর হোয়ার্টসআপেই শুরু ও শেষ।এরা বিদ্বেষ ছড়াতে চাইছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুগত চাকর হিসেবে।ভোটটাই এদের কাছে একমাত্র সত্য বাকি সব মিথ্যা,ভোটের দিকে চেয়ে এরা দেশপ্রেমীকের অভিনয় করছে তাই এদের প্রতিহত করাটাও দেশপ্রেমের পারাকাষ্ঠা হিসেবেই চিহ্নিত হবে।আমাদের তাই সতর্ক থাকতে হবে,মনে রাখতে হবে রাজনীতির চেয়ে অনেক বড় দেশ ও দেশের মানুষ,তদের মধ্যে বিদ্বেষ ঢোকাতে চাইছে যারা তারাও দেশের শত্রু।কাশ্মীরিদের যারা মারছেন,যারা বলছেন কাশ্মীরিদের বয়কট করা হোক,তাঁরা নির্বোধ ও অশিক্ষিত,তারা জানে না দেশ মানে শুধু মাঠ-মাটি-পাথর-আর জল নয় দেশ মানে দেশের মানুষও।তাই কাশ্মীর আমাদের দেশের অংশ হলে কাশ্মীরের মানুষও আমাদের দেশেরই মানুষ,তাদেরও রক্ষা করতে হবে।

এটাই দেশপ্রেম।রাত বিরেতে বাড়িতে হানা দিয়ে যে তথাকথিত দেশপ্রেমিকের দল দেশপ্রেমের পাঠ শেখাতে কাউকে কাউকে বলছেন,বল পাকিস্থান মুর্দাবাদ,সেই সব ভন্ড দেশপ্রেমিকদের সামনে দাপিয়ে বলার সময় এসেছে নিজের দেশকে ভালবাসতে অন্য দেশকে ঘৃণা করার দরকার হয় না,যে নিজের বাবা মাকে শ্রদ্ধা করতে শেখে না,সেই পারে অন্যের বাবা মাকে অশ্রদ্ধা করতে,এক্ষেত্রেও তাই যারা নিজের দেশকে যথার্থ সম্মান করতে অক্ষম তারাই অন্য দেশকে ঘৃণা করতে শেখায়।তাই বিদ্বেষ নয়,শুরু হোক যথার্থ দেশপ্রেমের শিক্ষা।

Previous articleসিআইডির মাথায় রাজীবকে বসিয়ে বিজেপিকে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
Next articleমোদী এক কোটি বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করতে চলেছেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here