দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গান স্যালুটে বিদায় জানানো হল প্রয়াত অভিনেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালকে। মু্ম্বইয়ের হাসপাতাল থেকে কলকাতায় নিজের বাসগৃহে আসা, সেখান থেকে টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে ঘণ্টাখানেক সময় রবীন্দ্র সদনে শায়িত রাখার পর তাপস পালের দেহ নিয়ে আসা হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেখানেই শেষবারের মতো বিদায় জানানো হল তাপস পাল। রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে উপস্থিত ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চ্যাটার্জি সহ হরনাথ চ্যাটার্জির মতো টলি অভিনেতারাও। নবান্ন যাওয়ার আগে রবীন্দ্র সদনে এসে তাপস পালকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন সাংসদের স্ত্রী নন্দিনী ও মেয়ে সোহিনিকে সমবেদনাও জানান তিনি।
তারপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপে, ক্ষতবিক্ষত হয়ে অকালে মৃত্যু হল তাপসের।”
পাশাপাশি তাপসের মৃত্যুর জন্যে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করলেন মু্খ্যমন্ত্রী। জানান, ‘মানসিক চাপেই মৃত্যু হয়েছে প্রাক্তন সাংসদের।’ সুলতান আহমেদ, প্রসূন ব্যানার্জির স্ত্রী এবং তাপস পাল, এই তিনজনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কেন্দ্রের রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান তিনি।
মৃত্যুর আগে জানতেও পারল না অপরাধটা কোথায়!” এদিন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাশে দাঁড় করিয়ে মমতা আরও বলেন, “একটা এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেলে ডিরেক্টর ছিল তাপস। মাইনে পেয়েছিল। তার জন্য তাপসের মতো নাম্বার ওয়ান একজন অভিনেতাকে এক বছর একমাস জেলে রাখা হল।”
তাপস পাল চিটফান্ড কাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায় ভুবনেশ্বর জেলেও ছিলেন তিনি। এর আগে নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের সাংসদ সুলতান আহমেদের মৃত্যু হয়েছিল। তখনও কেন্দ্রীয় এজেন্সির দিকে আঙুল তুলেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। এদিন মমতা বলেন, “এই নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হল কেন্দ্রের চাপে। এর আগে সুলতান আহমেদ। তাঁকে চিঠি পাঠাল, ফোন করল, তারপর সে বাথরুমে গেল আর মারা গেল।” প্রাক্তন ফুটবলার তথা তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুও কেন্দ্রীয় এজেন্সির জন্য হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মালিক শ্রীকান্ত মোহতার কথাও উল্লেখ করেন দিদি। তাঁর কথায়, “একবছর হয়ে গেল শ্রীকান্তকে আটকে রেখেছে। কী খেলা আমি জানি না। মার্ডার কেসে তো তিনমাসের মধ্যে চার্জশিটে দিতে হয়। এসব কেসে কি চার্জশিট হয়েছে! আমি জানি না! আমি খোঁজ নিয়েছি শ্রীকান্তও অসুস্থ। আপনাদের একজন সাংবাদিক বন্ধুও আছেন। তিনিও অসুস্থ। এতদিন পর্যন্ত জেলের মধ্যে বন্দি করে রাখার কী কৌশল?”
শিল্পীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, এ ভাবে যদি কাজ করতে গিয়ে বা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হলে অকালে প্রাণ চলে যাচ্ছে তাহলে কী হবে? আমি শিল্পী, টেকনিশয়ানদের ভাবতে অনুরোধ করব।”
এরপরই রবীন্দ্রসদন থেকে তাপস পালের নশ্বর দেহ নিয়ে আসা হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দিয়ে বিদায় জানানো হয় তাপস পালকে। মঙ্গলবার ভোরে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাপসের। মুম্বই থেকে তাঁর দেহ কলকাতায় নিয়ে আসেন মেয়ে সোহিনী পাল। তারপর কিছুক্ষণ কলকাতায় নিজের বাসগৃহে শায়িত রাখা হয় অভিনেতার দেহ। সেখান তাঁকে শেষবার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সহ আরও একাধিক টলি তারকা।
অভিনেতা ও প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালের মৃত্যু নিয়ে জমে উঠল রাজ্য রাজনীতির চাপানউতোর। এদিন তাপস পালকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে রবীন্দ্র সদনে মমতা বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপেই তাপসকে অসময়ে চলে যেতে হল। শুধু তাপস পাল নয়, প্রাক্তন সাংসদ সুলতান
আহমেদ, সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীরও মৃত্যু হয়েছে চিটফান্ড তদন্তের চাপের জন্য।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগ করার পরে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরও মারত্মক অভিযোগ করলেন। এদিন ইন্দোর থেকে টেলিফোনে দিলীপ ঘোষ বলেন, “সঙ্গ দোষেই মৃত্যু হয়েছে তাপস পালের। আগে ভাল অভিনেতা, ভাল মানুষ ছিল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরেই ভাষা, চরিত্র স্বভাব সব বদলে গিয়েছে। এই মৃত্যুর জন্য সঙ্গদোষই দায়ী।”
এখানেই না থেমে দিলীপ ঘোষ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাপের ফলেই এদের চোর হতে হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দলের সঙ্গে থাকার পরিণতি হয়েছে মৃত্যু।” দিলীপের ব্যাখ্যা, “চিটফান্ডের টাকা আত্মসাত করেছেন খোদ তৃণমূলনেত্রী। আর দিদির নির্দেশে কাজ করতে গিয়ে ফেঁসেছেন ভাইয়েরা।”
বুধবার সকাল থেকে প্রয়াত অভিনেতা তাপস পালের মরদেহ শায়িত রাখা হয় রবীন্দ্র সদনে। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপে, ক্ষতবিক্ষত হয়ে অকালে মৃত্যু হল তাপসের।”
মঙ্গলবার তাপস পালের মৃত্যুর পরেই দিলীপ ঘোষ সঙ্গদোষের অভিযোগ তুলেছিলেন। এদিন মমতা কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলতেই আরও মারাত্মক আক্রমণ দিলীপের। সব মিলিয়ে শোকের আবহেও রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে।