পার্থ সারথি নন্দী,বনগাঁ: করোনা পরিস্থিতিতে বদলে গেছে মৃৎশিল্পীদের জীবন। প্রতিমার বায়না নেই। হাতে গোনা প্রতিমা গড়ছেন তাঁরা। ফলে মাথায় হাত তাঁদের। আয় হবে কীভাবে? সংসার চলবে কী করে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি দুর্গাপুজোর। এই সময়ে তাঁদের দম নেওয়ার ফুরসত থাকে না। আর এবছর তাঁদের সময় কাটতে চাইছে না। প্রতিমার বায়না দিতে কেউ আসছেন না। বরং বায়না বাতিল করছেন অনেকে।
বেশ কয়েকটি পুজো কমিটিকে ফোন করে প্রতিমার কথা বলতেই তাঁরা জানিয়ে দেন এবছর আর প্রতিমায় পুজো হবে না। ঘটে নমো নমো করে পুজো সেরে ফেলবেন তাঁরা। ফলে করোনার কারণে তাঁদের রুটিরুজিতে টান পড়েছে। বনগাঁর শিমুলতলা এলাকায় মৃৎশিল্পী স্বপন ভট্টাচার্য্য,সিন্টু ভট্টাচার্য্য, প্রদীপ ভট্টাচার্য্যর স্টুডিওয় গিয়ে দেখা গেল মাত্র দু’জন কর্মী কাজ করছেন।
আর প্রতিমার সংখ্যা হাতে গোনা ১২টি। তা–ও খুব বেশি উচ্চতার নয়। স্বপন বাবু প্রতিবছর এই সময় কলকাতার বিভিন্ন মন্ডপের প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত থাকতেন, এ বছর নিজের এলাকাতেও কাজ নেই। দীর্ঘ ৬৫ বছরের তাঁর প্রতিমা তৈরির অভিজ্ঞতা। স্বপন বাবু বলেন, গত বছরও ছোট বড় মিলিয়ে ৬০টি ঠাকুরের বায়না ছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি থিমের প্রতিমাও ছিল। এবার এ পর্যন্ত ২টি প্রতিমার বায়না হয়েছে। তা–ও ছোট আকারের। আগে রথের সময় থেকে বায়না শুরু হয়ে যেত। এবার মহালয়া চলে গেছে। এখনও বায়না দিতে কেউ আসছেন না। দু’এক জন ফোন করে প্রতিমার দাম জিজ্ঞাসা করেছে কেউ চোখের দেখাও দেখতে আসছে না৷ করোনা সব শেষ করে দিয়ে গেল জানিনা কী ভাবে স্টুডিও চালাব, প্রায় সব কারিগরদেরকে কাজে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই, তাঁরা অনেকে বাজারে সবজী বিক্রি করেছন কেউবা ভ্যান চালাচ্ছেন ঠাকুর গড়ে পেট চলবেনা আর ৷
শিল্পী প্রদীপ ভট্টাচার্য্য জানান, একটি পুজো কমিটি বায়না বাতিল করে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে নোটিস টাঙিয়েছেন বায়নার টাকা ফেরত হবে না বলে। স্টুডিওতে প্রতি বছর এই সময়ে ২০ জনের বেশি কাজ করেন। এবার দু’জনেই কাজ সারছেন। প্রতিমার তো তেমন কোনও বায়নাই হয়নি এখনও পর্যন্ত, তবু ১০টি প্রতিমা তৈরী করছি জানিনা কপালে কী আছে! দু’হাজার সালের ভয়াবহ বন্যারচেয়ে এবছরের অতিমহামারী করোনা গ্রাস করে নিয়েছে পুরো উৎসবটাকেই৷
গাইঘাটা থানার পাঁচপোতা গ্রামের বিপ্লবী সংঘের কর্ণধার অরুপ বিশ্বাস বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো এবছর দুর্গা উৎসব পালন করা হবে৷স্বাস্থ্য সচেতনতা কথা মাথায় রেখে চলবে বিভিন্ন সতর্কতা মূলক প্রচার অভিযান, দর্শনার্থীদের মধ্যে বিতরন করা হবে মাস্ক। সরকারি বিধি মেনে তৈরী হচ্ছে মন্ডপ৷ তবে প্রতিবারের মতো এবারেও কৃতী ছাত্র-ছাত্রী এবং গুণীজন সংবর্দ্ধনা অনুষ্ঠান সূচী রাখা হয়েছে। তবে সব কিছুতেই বাজেট কমানো হয়েছে৷
বনগাঁ শিমুলতলা শান্তি সংঘ ক্লাবের সম্পাদক নিত্য দাস জানান, বনগাঁর সমস্ত ঐতিহ্যপূর্ণ ক্লাবের পুজো মণ্ডপ থেকে প্রতিমা সব কিছুতেই প্রভাব ফেলেছে করোনা। বাজেট যেমন কমেছে তেমন ভাবেই কমেছে পুজোর সংখ্যা,দু’ একটি ক্লাব ছাড়া বেশির ভাগ ক্লাবেই এবছর ঘট পুজো হবে বলে জানাগিয়েছে৷ শিমুলতলা আয়রনগেট ক্লাব বা শান্তি সংঘ ক্লাবই শুধু নয় প্রায় বেশির ভাগ ক্লাব তাঁদের পুজোর বাজেট কমিয়েছে৷রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন ৫০.০০০টাকা করে পুজো কমিটিকে দেবেন, সেই মতো বাজেট করে এবছর শান্তি সংঘ ক্লাব পুজোর প্রস্তুতি শুরু করেছে৷
এক বস্ত্র ব্যাবসায়ী বাপন সাহা বলেন, বনগাঁর দুর্গাপুজোর দিকে সারা বছর তাকিয়ে থাকেন সমস্ত ব্যাবসায়ী মহল, এবছর করোনার জেরে প্রায় বন্ধ ব্যবসা,মন্দা বাজারে প্রতিষ্ঠান চালানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার গ্রাসে দুর্গোৎসবের শহর বনগাঁ এখন ধূধূ মাঠে পরিণত হয়েছে।