দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে পর পর দুটি মেয়াদের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। তৃতীয় বারের জন্য বারাকপুর লোকসভায় প্রার্থী হিসাবে দীনেশের নাম যখন চূড়ান্ত করতে চলেছে তৃণমূল, তখন দিগন্তে অন্য আশঙ্কার মেঘও ঘনাতে শুরু করেছে।
তৃণমূল এবং বিজেপি – দুই শিবির সূত্রেরই খবর, দীনেশ ফের প্রার্থী হলে তৃণমূল ছাড়তে পারেন ভাটপাড়ার বিধায়ক তথা উত্তর চব্বিশ পরগনায় শাসক দলের বাহুবলী নেতা অর্জুন সিং। তার একটাই কারণ। অর্জুন মনে করেন, বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার জন্য অন্যতম দাবিদার তিনিই। দীনেশ ত্রিবেদী বহিরাগত। বারাকপুরের সাংসদ হলেও তিনি স্থানীয় লোক নন, এমনকী বাংলারও লোক নন। এও শোনা যাচ্ছে, কাল মঙ্গলবারই দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন তিনি।
তবে তার আগে অর্জুনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ধরে রাখার জন্য এখনও চেষ্টা চালাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, রবিবারও কালীঘাটে গিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। অর্জুনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হয়েছে, বারাকপুরে যে দীনেশ ত্রিবেদীকেই পুনরায় প্রার্থী করা হবে সে ব্যাপারে সপ্তাহ খানেক আগে ভাটপাড়ার বিধায়ককে ফোন করে জানান নেত্রী। সেই সঙ্গে নাকি এও বলেন, অন্তর্ঘাত যেন না হয় সেখানে। জবাবে অর্জুন নাকি নেত্রীকে জানিয়ে দেন, বিরোধিতা করতে হলে দলের বাইরে গিয়ে তা সরাসরিই করবেন। দলের মধ্যে থেকে অন্তর্ঘাত করবেন না।এর পর থেকে শাসক দলের উপরের সারির অনেক নেতা অর্জুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে খবর। একটি সূত্রের দাবি, অর্জুনকে প্রথমে বলা হয়েছিল, লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে যদি তাঁর এতো আগ্রহ থাকে, তা হলে বিহারের কোনও আসন থেকে তাঁকে টিকিট দিতে পারে দল। প্রসঙ্গত, তৃণমূল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে অর্জুন হলেন বিহারের পর্যবেক্ষক।স্বাভাবিক ভাবেই এ প্রস্তাবে রাজি হননি অর্জুন সিং। পরে তাঁকে আসানসোলে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারেও প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সম্মতি দেননি ভাটপাড়ার বিধায়ক
এ ব্যাপারে দেশের সময়-এর তরফে অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যায়নি৷
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯৯৯ সালে ও ২০০৪ সালে বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের তড়িৎবরণ তোপদারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন অর্জুন। ২০০৪ সালে প্রায় পৌনে দু লক্ষ ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরেছিলেন ঠিকই। কিন্তু ৯৯ সালে তৃণমূল-বিজেপি জোটের প্রার্থী হয়ে সিপিএমের তৎকালীন ওই প্রভাবশালী নেতাকে যথেষ্ট চাপে ফেলে দিয়েছিলেন অর্জুন। সে বার হেরেছিলেন মাত্র চল্লিশ হাজার ভোটে। তার পর থেকে গত বিশ বছরে বারাকপুর শিল্পাঞ্চল তথা উত্তর চব্বিশ পরগনার রাজনীতিতে অর্জুনের প্রভাব ও ক্ষমতা দুই বেড়েছে।
অর্জুনের শ্যালক সুনীল সিং-ও নোয়াপাড়া বিধানসভার বিধায়ক ও গাড়ুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান। ফলে সত্যি সত্যিই তিনি যদি বিজেপি-তে যোগ দেন, তা হলে এ যাত্রায় বারাকপুর লোকসভা নিয়ে শাসক দলের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে সেটা অস্বিকার করার উপায় নেই৷