
পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানে ভারতের দূতাবাস থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে দেশের প্রতিনিধিদের। এ বার দুই দেশের বাণিজ্যেও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ভারতের। পাকিস্তান থেকে সকল পণ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমদানি নিষিদ্ধ করা হলো।

পহেলগাম নৃশংস জঙ্গি হামলার পর পড়শি দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত । এবার পাকিস্তান থেকে যাবতীয় পণ্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত। শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এমনটাই জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং মানুষের স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ।

বস্তুত, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানার পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করেছিল। ওই সময়ে ফল, সিমেন্ট, পেট্রোপণ্য, আকরিক-সহ পাকিস্তান থেকে আসা বেশ কিছু পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছিল ভারত। বাণিজ্যিক ভাবে ভারতের অন্যতম পছন্দের দেশ (মোস্ট ফেভার্ড নেশন)-এর তালিকা থেকেও পাকিস্তানকে সরিয়ে দিয়েছিল ভারত। তার পর থেকে গত কয়েক বছরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে পাকিস্তান থেকে মাত্র ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল ভারত। এক বছর আগেও যে পরিসংখ্যান ছিল, তার থেকে ২০ লক্ষ ডলারেরও কম মূল্যের আমদানি হয়েছিল ওই সময়ে।

২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় যে জঙ্গি হামলা হয়েছিল, তাতে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় ২৬ জন পর্যটককে। ঘটনার ১১ দিন পেরোলেও এখনও বদলা নিতে কোনও সামরিক পদক্ষেপ করেনি ভারত। তবে হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে। স্থগিত রাখা হয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি। ভিসা বাতিল করে পাকিস্তানিদের দেশ ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এসবের মাঝেই পাকিস্তান থেকে আমদানি বন্ধ করা হল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশ্বস্ত করেছেন, হামলায় জড়িতদের রেয়াত করা হবে না। বৃহস্পতিবার অসমে গিয়ে দেশবাসীকে জঙ্গি দমনে আশ্বাস দেন অমিত শাহ । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ‘হামলা করে কেউ রেহাই পাবে না। সন্ত্রাসবাদীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে। মোদী সরকার কাউকে ছাড়বে না।’

এদিকে এখনও প্রত্যাঘাতের কোনও উচ্চবাচ্য নেই বলে জনমানসে বেশ কিছু প্রশ উঠতে শুরু করেছে, তা হল পাকিস্তানকে স্রেফ মুখেই হুমকি দিয়ে ক্ষান্ত থাকবে মোদী সরকার?

উল্লেখ্য, কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর কড়া অবস্থান নেয় ভারত। গত সপ্তাহে বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির একটি জরুরি বৈঠক হয়। সেখানেই জলচুক্তি বাতিল থেকে শুরু করে সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল-সহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত।

সাধারণ মানুষ, নেটিজেন রাজনৈতিক নেতারা যতই পহেলগামের ঘটনার বদলা নিয়ে সুর চড়াক, ভারতীয় সেনা ও সরকারের ‘ধীরে চলো’ নীতির প্রশংসা করেছেন কূটনীতিবিদরা।