দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নারদ মামলায় গৃহবন্দি থাকার রায় মিলেছে চার হেভিওয়েটের। সেই মতো শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরলেন কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। আপাতত বাড়ি থেকেই নিজস্ব দফতরের কাজ করবেন ‘গৃহবন্দি’ ফিরহাদ। বাড়ি থেকে ভার্চুয়ালি করতে পারবেন প্রশাসনিক কাজকর্ম। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য বাড়ির দরজায় অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর তিন কন্যা ও নাতনি। এদিকে, বাকি তিন নেতা এখনও এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বাড়িতে পৌঁছেই কোভিড মোকাবিলায় অফিসারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসলেন কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ছবিটা যখন দেখা যাচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়-ফিরহাদ হাকিমদের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “বড় কাজের ছেলে ববি। কোভিড মোকাবিলায় কত কাজ করছিল। জোর করে আটকে রেখেছে”।
বস্তুত গ্রেফতার হওয়ার চার নেতার মধ্যে ববি হাকিমই গত চার রাত প্রেসিডেন্সি জেলে কাটিয়েছেন। চিকিৎসকরা তাঁকে পরামর্শ দিলেও এসএসকেএম হাসপাতালে যেতে চাননি। এমনকি সূত্রের খবর উডবার্ন ওয়ার্ডে ববি হাকিমের জন্য কেবিনও রেডি করা হয়েছিল। কিন্তু তাও রাজি হননি পরিবহণ মন্ত্রী।
ববি ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের অনেকের ধারণা কলকাতার পুর প্রশাসক জেলের পরিবর্তে হাসপাতালে গিয়ে থাকলে হয়তো সেই কারণ দেখিয়েই তাঁর গায়ে প্রভাবশালীর তকমা সেঁটে দিতে পারে সিবিআই। সেই অজুহাতে তাঁর জামিনে আপত্তি করতে পারে।
সোমবার ফিরহাদ হাকিমের চেতলার বাড়িতে সিবিআই টিম পৌঁছনোর পর তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতাই করেছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী। এমনকি তাঁর অনুগামী ও সমর্থকরা সিবিআইয়ের গাড়ি আটকাতে চাইলে তাঁদের ববি নিজেই বাধা দেন। পরবর্তীকালে দেখা যায় তাঁর দুই মেয়ে পালা করে সমর্থকদের অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন নিজাম প্যালেসের সামনে বা প্রেসিডেন্সি জেলের সামনে কোনও অশান্তি না পাকান। সেখানে যেন জমায়েতও না করেন। কারণ স্রেফ এই কারণ দেখিয়েই এই মামলা অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে চাইবে সিবিআই।
এদিন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে কলকাতা পুলিশের গাড়িতেই বাড়ি পৌঁছন ফিরহাদ হাকিম। দেখা যায়, চেতলায় রাস্তার দুধারে বিপুল সংখ্যাক মানুষ ও তৃণমূল সমর্থক জড়ো হয়েছেন। তবে কেউ কোনও স্লোগান তোলেননি। কোনও অশান্তির পরিবেশও তৈরি হয়নি।
এদিন সন্ধ্যায় মামলার শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করল কলকাতা হাইকোর্ট।
সোমবার সকাল ১১টায় হাইকোর্টে বৃহত্তর বেঞ্চের শুনানি হবে। এই বৃহত্তর ডিভিশন বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সৌমেন সেন, ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, হরিশ টন্ডন এবং অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, শুক্রবারই থেকেই গৃহবন্দি দশা শুরু হচ্ছে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। শুক্রবারই ফিরহাদের জামিনের আবেদনের শুনানি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে একটি ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন বড় মেয়ে প্রিয়দর্শিনী। সিবিআই যাতে এই মামলায় একতরফা শুনানি করাতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই ক্যাভিয়েট বলে জানা যাচ্ছে। আপাতত কোনও দলীয় নেতা-কর্মী কিংবা সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গেও দেখা করতে পারবেন না ফিরহাদ। সব কাজই করতে হবে অনলাইনে। আলোচনা করতে হবে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। সেই ভিডিয়ো কনফারেন্সেরও বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করে জানাতে হবে সিবিআই-কে।
জামিনের মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে বাকি তিন রাজনীতিবিদকেও গৃহবন্দি থাকতে হবে। চার নেতার বাড়ির বাইরে বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। বাড়িতে আসা অতিথিদের তালিকাতেও নজর রাখবে সিবিআই৷ এমনটাই জানা গিয়েছে আদালত সূত্রে।