দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের ভোটে সংখ্যালঘুদের মধ্যে মহাজোট রচনায় কোনও শর্ত রাখতে চাইলেন না মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। বরং কৌশলে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকিকে সংখ্যালঘু মহাজোটের মুখ বলে এক প্রকার ঘোষণা করে দিলেন তিনি।
রবিবার ভোরে ফুরফুরায় পৌঁছে যান ওয়াইসি করেন। সেখানে অজু করে নামাজ সেরে তার পর আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের একটি সংগঠন রয়েছে। তার নাম আহলে সুন্নাতুল জামাত। সেই সংগঠন মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিন তথা মিমের সঙ্গে মিশে যাবে না জোট হবে সে কথা স্পষ্ট করেননি ওয়াইসি। তবে বলেন, ফুরফুরা শরিফের চশমে চিরাগ আব্বাস সিদ্দিকির পাশে থেকে বাংলার নির্বাচনে লড়বে মিম। আব্বাস যেমন নির্দেশ দেবেন সেই নির্দেশ মেনে মিম চলবে।
ওয়াইসির এই ঘোষণার মধ্যে কৌশল রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাঁর দল মিমকে হায়দরাবাদের পার্টি তথা বহিরাগত বলে সম্প্রতি সমালোচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্ভবত সেই কারণেই ওয়াইসি দেখাতে চাইলেন বহিরাগত নয়, বাংলার সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনে বাঙালি মুসলমানই নেতা হবেন মহাজোটের। যাঁর জন্ম বাংলায়, যিনি বড় হয়েছেন বাংলায় এবং যিনি ফুরফুরা শরিফের মতো এক আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী।
এদিন ফুরফুরায় যে ফ্রেম তৈরি হয়েছে মাইলফলক বইকি।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের কোনও একটি বা দু’টি সংগঠন এতো জোর লাগিয়ে পৃথক ভাবে শক্তির পরখ করতে চায়নি। রাজ্যে কমবেশি ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। অতীতে তাদের বড় অংশ সমর্থন জুগিয়েছেন বামদের। পরবর্তী কাল ১১ সালের ভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূল—দুই ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একজোট হওয়ায় সংখ্যালঘু ভোট তাদের দিকে যায়। আর এখন প্রায় একচ্ছত্র তৃণমূল।
আব্বাস খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেই একাধিপত্য ভাঙতে চাইছেন। মিমের উদ্দেশ্যও তাই। ওয়াইসির কথায়, “সংখ্যালঘু ভোট কারও জমিদারি নয়! এত দিন আপনি শুধু মীরজাফরদের দেখেছেন। যাঁরা আপনার অনুগত হয়েছিলেন এবং শুধু নিজেদের কথাই ভেবেছেন। কিন্তু মুসলিমদের কথা আপনি আদতে ভাবেননি। তাঁদের প্রকৃত উন্নয়ন করেননি।”
মালদহ মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় ইতিমধ্যেই সংগঠন তৈরি করে ফেলেছে মিম। তা ছাড়া সম্প্রতি বিহার নির্বাচনে দেখা গিয়েছে বাংলার লাগোয়া বিহারের চারটি আসনে তারা জিতেছে। অন্যদিকে দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে আব্বাসের জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
এদিনের বৈঠকের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াইসি হলেন উর্দুভাষী মুসলমান। বাংলায় উর্দুভাষী মুসলমানদের মধ্যে তাঁর প্রভাব থাকতে পারে। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। ৯০ শতাংশ সংখ্যালঘুই হলেন বাংলাভাষী। সেই কারণে হয়তো ওয়াইসি আব্বাস সিদ্দিকিকে ধরেছেন। তবে তিনি জেনে রাখুন বাংলায় সংখ্যালঘুরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন। কারণ, তাঁরা জানেন ওয়াইসি হলেন বিজেপির বন্ধু। তাঁকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপির হাত শক্ত করা।
অন্যদিকে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কেউ নির্বাচনে লড়তেই পারে। ওরা বাংলায় ভোট লড়বে দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তবে একটা কথা বলি, ভোটে বিজেপিই জিতবে, ওয়াইসি, আব্বাস কেউ কিছু করতে পারবে না।