বাগদা গুলি-কাণ্ডে অভিযুক্ত এসআই, গ্রেফতার ৫, বিজেপির বিক্ষোভ

0
1296

দেশের সময়: বাগদার রনঘাটে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতরা বিজেপি কর্মী এবং তারা নিরপরাধ বলে দাবি করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার শুক্রবার আদালতে আইনজীবীদের সামনে বিতর্কিত মন্তব্য করায় তাকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছে বিজেপি। নিজেদের দাবির সমর্থনে এদিন বিক্ষোভ দেখান তারা।

বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণপর্ব চলাকালীন রনঘাট গ্রামে পুলিশ এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তাঁতে বাগদা থানার ওসি সহ দুজন পুলিশ কর্মী জখম হন। পুলিশের গুলিতে জখম হয়েছেন দুই গ্রামবাসীও। ঘটনার পর গোটা এলাকা থমথমে হয়ে রয়েছে।

ধৃতদের শুক্রবার বনগাঁ আদালতে তোলা হয়। আদালতের আইনজীবিদের একাংশের অভিযোগ, গুলিচালনার প্রসঙ্গ তুলতেই এই মামলার তদন্তকারী অফিসার আসাদুর রহমান বলেন, ‘গুলি চালিয়েছি বেশ করেছি। প্রয়োজনে কোর্টের ভেতরে গুলি চালাবো।’ এই ঘটনার পর ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান আইনজীবীরা। এরপর তার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়। যদিও পরে ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান তিনি।

এদিকে এ ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন পুলিশ সুপারের অফিসে ডেপুটেশন দেয় বিজেপি নেতৃত্ব। পরে তারা বাটার মোড় অবরোধ করেন। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অভিযুক্ত ওই পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করতে হবে। না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বিজেপি।

উল্লেখ্য,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, বাগদার গুলি চালানোর ঘটনাকে তিনি কোনও ভাবেই সমর্থন করেন না। শুক্রবার দুর্গাপুর থেকে মমতা যখন সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা বলছেন, তখন বনগাঁ আদালতে দাঁড়িয়ে বাগদা থানার এক সাব ইনস্পেকটর হুমকি দিলেন, “গুলি চালিয়েছি, বেশ করেছি। দরকার হলে কোর্টের মধ্যেও চালাব। আপনারা যা করার করে নিন।” আদালতে হাজির আইনজীবীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার সময় ওই পুলিশ কর্মী শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ সরকারি আইনজীবীর।

প্রসঙ্গত,বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা বিধানসভার রণঘাটে ভোটচলাকালীন গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরে নির্বাচন কমিশন মেনে নেয় গুলি চলার কথা। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জগমোহন জানিয়েছিলেন, জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি চালায়। পুলিশের উপর আক্রমণের ঘটনায় ৫ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে বাগদা থানার পুলিশ। তাঁদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার জন্য এই মামলার তদন্তকারী অফিসার আসাদুর রহমান শুক্রবার বনগাঁর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম)-এর আদালতে বিচারক দেবাশিস সাঁতরার এজলাসে হাজির হন। শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। সে সময়ই আসাদুর ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে আইনজীবীদের দাবি।

এক আইনজীবীর কথায়, “বাগদায় নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সেই পরিবারেরই ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এক আইনজীবী আসাদুর রহমানকে প্রশ্ন করলে উনি বলেন, গুলি চালিয়েছি, বেশি করেছি। শুধু তা-ই নয়। আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ এবং গালিগালাজও করেছেন।”

আসাদুরের মন্তব্যের পরই আইনজীবীরা প্রতিবাদ শুরু করেন। ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পিটিশন দাখিল করেন তাঁরা। এর পর আসাদুরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করার নির্দেশ দেন বিচারক। পরে আসাদুরকে ১ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মামলাটি ‘ডিএম কোর্ট’-এ স্থানান্তরিত করা হয়।
বাগদায় গুলি-কাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুরে শুক্রবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমি স্ট্রেট বলেছি, যারা গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। এবং অ্যাকশন হবে। গুলি চালানোকে আমরা সাপোর্ট করি না। সে যে-ই হোক। আর কিছু কিছু লোক দেখছি ইদানীং সেন্ট্রাল ফোর্সের কথায় নেচে গিয়ে একেবারে এখানেও গুলি চালানো শুরু করে দিয়েছে। যে হেতু ইলেকশন কমিশনের আন্ডারে, ভাবছে, চিরদিনই তারা থাকবে। তাদের আমি বলব, আগুন নিয়ে কেউ খেলা করবেন না। মানুষকে মারবেন না। মানুষকে তার ভোট দিতে দিন।”

যদিও গোটা ঘটনা নিয়ে নীরব পুলিশ। বনগাঁ পুলিশ জেলার এসপি তরুণ হালদারকে বার বার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।

Previous articleগণচিতা জ্বলছে, ঠাঁই নেই কবরে,নিউ ইয়র্কের স্মৃতি উস্কে দিল নয়াদিল্লি
Next articleবনগাঁ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা চালু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here