দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঠান্ডায় জবুথবু দিল্লি। কলকাতায় সে দিনও ফ্যান চালাতে হচ্ছে! আবহবিদরা অবশেষে আশা দিচ্ছেন, এই বৈষম্য কিছুটা হলেও দূর হবে। আজ, রবিবার ভোরে না-হলেও, রাত থেকে ঠান্ডা পড়বে। দিন জুড়ে শীত বলতে যা বোঝায়, তা হয়তো এখনই মিলবে না। তবে হেমন্তের শিরশিরানি বোঝা যাবে উত্তরের ঠান্ডা হাওয়ায়।
ইতিহাস বলছে, ১৮৮৩ সালে আজকের দিনে অর্থাৎ ২২ নভেম্বর কলকাতার তাপমাত্রা নেমেছিল ১০.৬ ডিগ্রিতে। আজ বা কাল অবশ্য সেই সম্ভাবনা নেই। কলকাতায় ১৭-১৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে পারদ, জেলায় ১৪-১৫ ডিগ্রির আশপাশে। চলতি মরসুমে ঠান্ডার দাপট বেশি থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন আবহবিদরা। এর কারণ লুকিয়ে রয়েছে সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরে। এ বছর মহাসাগরের জলতলের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার নীচে নেমে গিয়েছে। যে পরিস্থিতির পোশাকি নাম ‘লা নিনা’। অর্থ, ছোট্ট মেয়ে। এই ‘খুকি’র হাত ধরেই চলতি মরসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে দেশ জুড়ে। বিভিন্ন বছরের পর্যবেক্ষণ, প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনা থাকলে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার আনাগোনা বাড়ে, শক্তিশালী ঝঞ্ঝার হাত থেকে বরফও বেশি পড়ে কাশ্মীর, হিমাচলের পাহাড়ে। সব মিলিয়ে দফায় দফায় জাঁকিয়ে শীত পড়ে উত্তর ভারতে। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। অক্টোবরের শেষ থেকেই জমজমাট ঠান্ডা উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
৩০ অক্টোবর দিল্লির তাপমাত্রা নেমেছিল ১২.৫ ডিগ্রিতে। ১৯৯৪ সালের পর অক্টোবরে এমন পারাপতন এ বছরই প্রথম। শুধু শেষের দিকে নয়, মাস জুড়েই ঠান্ডার ভালো দাপট ছিল রাজধানীতে। যে কারণে মাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় গিয়ে দাঁড়ায় ১৭.২ ডিগ্রিতে। এই নিরিখে এ বারের অক্টোবরের দিল্লি ৫৮ বছরে মধ্যে শীতলতম। শুক্রবার ভোরে রাজধানী কেঁপেছে ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এত তাড়াতাড়ি এমন ঠান্ডা গত ১৪ বছরে পড়েনি। সাধারণত, দিল্লিতে জমিয়ে ঠান্ডা পড়লে তার কিছুটা প্রসাদ পুবের পশ্চিমবঙ্গও পায়। এ বার হাত প্রায় খালি। ৮ নভেম্বর ১৮.৩ ডিগ্রিতে নেমেছিল কলকাতার পারদ। তার পর থেকে ঠান্ডার সামান্য অনুভূতিও গায়েব। শুক্রবার পারদ চড়ে যায় প্রায় ২৪ ডিগ্রিতে।
এ দিন আবার মেঘ-বৃষ্টির সৌজন্যে দিনের তাপমাত্রা নেমে আসে ২৫.৫ ডিগ্রিতে! কেন এই পরিস্থিতি? মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘লা নিনা থাকলে সাধারণত উত্তর ভারতেই ভালো ঠান্ডা পড়ে। তবে পূর্ব ভারতে তার পুরো রেশ পাওয়া যায় না। সমুদ্রের ধারে হওয়ায় অনেক পরিস্থিতির উপর এদিককার ঠান্ডা নির্ভর করে।’ অনেক পরিস্থিতি মানে অনেক বাধা। ক’দিন ধরে যে মেঘলা আকাশ, ইতিউতি বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, তার কারণ বহু। প্রথমত, দিল্লির হিমেল হাওয়া বাংলা পর্যন্ত পৌঁছতে হলে মধ্য ভারতের উপর একটি উচ্চচাপ বলয় থাকতে হয়। বাতাস এদিকে ঠেলে দেওয়ার কাজ করে সেটি। এখন তেমন কোনও উচ্চচাপ নেই। উল্টে উচ্চচাপ বলয় রয়েছে ওডিশা লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে। যেটি ক্রমাগত জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে চলেছে বাংলার অন্দরে। ফিরতি বর্ষা চলছে দক্ষিণ ভারতে। চেন্নাই উপকূল থেকেও জলীয় বাষ্প ঢুকছে পড়ছে বাংলা-ঝাড়খণ্ডে। একই কাজ করছে ছত্তিসগড়-ওডিশার উপর তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তও। ভাগ বসছে হিমেল হাওয়াতেও। গত দু’দিনে আরব সাগরে একটি গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। তার টানে উত্তর ভারতের ঠান্ডা বাতাসের একটা অংশ মহারাষ্ট্র হয়ে চলে যাচ্ছে আরব সাগরে৷
প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনা থাকলে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার আনাগোনা বাড়ে, শক্তিশালী ঝঞ্ঝার হাত থেকে বরফও বেশি পড়ে কাশ্মীর, হিমাচলের পাহাড়ে। সব মিলিয়ে দফায় দফায় জাঁকিয়ে শীত পড়ে উত্তর ভারতে। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। অক্টোবরের শেষ থেকেই জমজমাট ঠান্ডা উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
আজ, রবিবার বা কাল, সোমবার থেকে বেশ কয়েকটি বাধারই সরে যাওয়ার সম্ভাবনা। সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কা উপকূলে সৃষ্টি নিম্নচাপ শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার টানে উত্তুরে বাতাস শক্তিশালী হতে পারে। সব দিক দেখেই ঠান্ডার পড়ার সুখবর শুনিয়েছেন আবহবিদরা। সকালের দিকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে, তবে পরে মেঘ কেটে রোদ উঠলেই বদলাবে পরিস্থিতি। কত দিন থাকবে ঠান্ডা? চলতি দফায় মোটামুটি বুধবার পর্যন্ত। তার পর পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব পড়বে উত্তর ভারতে। তাল মিলিয়ে তাপমাত্রা বাড়বে বাংলাতেও। তবে ঠান্ডার অনুভূতি একেবারে হারিয়ে যাবে না, আশ্বাস আলিপুরের৷