দেশের সময়, ওযেবডেস্কঃ ১০৮টি পুরসভায় তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা নিয়ে বিভ্রাট! অভিযোগ ওঠে, তৃণমূলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকার সঙ্গে জেলায় জেলায় পৌঁছনো তালিকার মিল নেই। শুক্রবার বিকেলে তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর যশোররোডে বাটা মোড় এলাকায় প্রার্থী বদল এর দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে শতাধিক তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা বাটার মোড়ে এসে জড়ো হয়।
প্রার্থী প্রত্যাহার করতে হবে৷পৌর প্রশাসক শংকর আঢ্য কে প্রার্থী করতে হবে এমনই দাবিতে করেন তারা।
প্রসঙ্গত শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় বনগাঁ প্রাক্তন পৌর প্রধান শংকর আঢ্য এবারের পৌর নির্বাচনে টিকিট পাননি৷ শঙ্কর আঢ্য কে প্রার্থী করতে হবে সেই সঙ্গে প্রার্থী তালিকাতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী বদলের দাবি তোলার পাশাপাশি এদিনের অবরোধকারীরা আরও দাবি তোলেন দলীয় নির্দেশ যেখানে একই পরিবারের একজনের অধিক প্রার্থী করা যাবে না সেখানে কি ভাবে বনগাঁতে একই পরিবারের দুজন টিকিট পেলেন? প্রসঙ্গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে শংকর আঢ্য কে প্রার্থী করার দাবি জানিয়ে বাটার মোড়ে এর আগেও পথ অবরোধে শামিল হয়েছিলেন কর্মী সমর্থকেরা ৷ এদিন বনগাঁর অন্তত ৫টি ওয়ার্ড থেকে শতাধিক তৃণমূল কর্মীরা বিক্ষোভে সামিল হন৷
খড়দাতেও বিক্ষোভ দলেরই একাংশের। খড়দাতে বিটি রোডে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ চলে। বাঁকুড়ায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলরকে নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মীরা। তৃণমূল সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় এবং সুব্রত বক্সী সই করা তালিকায়, যা জেলায় জেলায় পৌঁছেছে সেটিই চূড়ান্ত। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন রয়েছে। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা চূড়ান্ত নয় বলেও দাবি উঠেছে দলের অন্দরে।
মালবাজারে প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভে জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী পুলিন গোলদারের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। কোচবিহারেও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় দলীয় কর্মীদের একাংশ।
এদিকে, তৃণমূল সূত্রে খবর মিলেছে, সন্ধ্যার পর নতুন করে জেলা সভাপতিদের কাছে প্রার্থী তালিকা পাঠানো হয়। যেখানে ফেসবুক পেজে প্রকাশিত তালিকার সঙ্গে ২০ শতাংশ পরিবর্তন রয়েছে। এই নতুন তালিকায় সই রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সীর।
এদিকে একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তি টিকিট দেওয়া হয়নি বলে এদিন সাফ ঘোষণা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও প্রার্থী তালিকায় ফারাক দেখা গিয়েছে। ব্যতিক্রম ঘটিয়ে টিকিট দেওয়া হয়েছে বিধায়ক মদন মিত্রর পুত্রবধূকে। একইসঙ্গে টিকিট পেয়েছেন শঙ্কর সিংয়ের ছেলে শুভঙ্কর সিং। বিধানসভা ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন শঙ্কর সিংহের ছেলে। চাকদা পুরসভা থেকে তিনি লড়ছেন। উত্তরপাড়া পুরসভায় টিকিট পেয়েছেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবও। তালিকায় আছে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান ও বিধায়ক দুলাল দাসের নামও। চাঁপদানি পুরসভায় টিকিট পেলেন তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে। কোনন্নগর পুরসভায় দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল নেতা গৌতম দাস ও তাঁর নিকট আত্মীয়া।
উল্লেখ্য, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮টি বকেয়া পুরসভায় নির্বাচন। শুক্রবার তার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। কার্যকর করা হয়েছে তৃণমূলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি। পুরভোটে টিকিট পাননি কোনও তৃণমূল বিধায়ক। ফলে বাদ পড়েছেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, কাটোয়া পুরসভার ২৫ বছরের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, কালনার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগ।
কলকাতা পুরভোটে জিতে দ্বিতীয়বার মেয়র হয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষও জিতেছেন। তৃণমূল নেতা তারক সিংহ, তাঁর ছেলে ও মেয়ে সকলেই জিতে এখন কাউন্সিলর। এছাড়াও মন্ত্রী শশী পাঁজার মেয়ে, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছেলে, বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার ছেলে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তবে জেলার পুরভোটে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হবে না বলে সাফ ঘোষণা করা হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে।