দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ বহু টানাপোড়েনের পরও শেষরক্ষা হল না। জীবন যুদ্ধে হার মানলেন মুকুল রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণা রায়। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চেন্নাই। কিন্তু প্রতিস্থাপনের আগেই মারা গেলেন তিনি। বুধবার সকাল ৭টা ১৫মিনিট নাগাদ বিমানে কোলকাতায় তাঁর মৃতদেহ পৌঁছানোর পর ,বিমান বন্দর থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়৷ এই কথা দেশের সময় এর ডিজিটাল ডেস্কে টেলিফোনে জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বনগাঁর তৃণমূল নেতা রতন ঘোষ ৷তাঁর কথায় কৃষ্ণা দেবী আমার কাছে শুধু বৌদি নয় ,উনি আমার মাতৃসম৷ মুকুলদার অনুপস্থিতিতে ও অনেক সময় যেমন ধমক দিতেন ঠিক তেমনই স্নেহ করতেন যা এখন আরও অনুভব করছি এই বিযোগের পর৷ এদিন বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু রায সহ জেলার বিভিন্ন নেতা কর্মীরা৷
উল্লেখ্য ,মে মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন মুকুলবাবু ও তাঁর স্ত্রী। মুকুলবাবু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলেও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। প্রথম থেকেই ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ছিলেন তিনি। পরে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হয়। তাঁকে দেখতে যান তৃণমূল সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। কৃষ্ণার অসুস্থতার খবর নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
এর পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে একমো সাপোর্টে রাখতে হয় তাঁকে। একমো হল একস্ট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন। ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড দু’টিই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে এটি ব্যবহার করে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। বাইপাস বা ভালভ প্রতিস্থাপনের সময়েও এই প্রক্রিয়া চলে। যন্ত্রের মাধ্যমে শরীরের সমস্ত রক্তের সার্কুলেশন করা হয়। কৃত্রিম উপায়ে তা থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নিয়ে রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ করানো হয়।
এই অবস্থায় কিছু দিন থাকার পরে একসময় চিকিৎসকরা জানান, মুকুলবাবুর স্ত্রীর ফুসফুস খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। ফুসফুস প্রতিস্থাপন করতে হবে তাঁর। সেই জন্য ব্রেন ডেথ হয়েছে এমন ফুসফুস দাতার সন্ধানও চলছিল। অবশেষে, জুন মাসের ১৭ তারিখে প্রতিস্থাপনের জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
সেখানেই চলছিল চিকিৎসা। অবশেষে আজ, মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৫টা নাগাদ চেন্নাইয়ের হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। এ সময়ে চেন্নাইয়েই ছিলেন ছেলে শুভ্রাংশু রায়। মুকুল রায় কলকাতাতেই রয়েছেন, বুধবার সকালে মা কৃষ্ণা রায়ের দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ছেলে শুভ্রাংশু।
কৃষ্ণা রায়ের মৃত্যুতে শোকবার্তা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, “বিধায়ক শ্রী মুকুল রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ ভোরে চেন্নাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কৃষ্ণা দেবী বিভিন্ন জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমি তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনতাম। তিনি মানুষের ভাল চাইতেন। আমি কৃষ্ণা রায়ের স্বামী মুকুল রায় ও পুত্র শুভ্রাংশু রায় এবং পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”