প্রয়াত কিংবদন্তি প্রাক্তন ফুটবলার পি কে ব্যানার্জি

0
1090

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ময়দানে এক রাশে শূন্যতা তৈরি করে চলে গেলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও দিনও ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা মহামেডানের মতো বড় ক্লাবে খেলেননি। তবু এরিয়ানস, ইস্টার্ন রেলের মতো ক্লাব থেকে ভারতীয় ফুটবলের নক্ষত্র হয়ে উঠেছিলেন পিকে।


নিভে গেল প্রদীপ। প্রয়াত কিংবদন্তি প্রাক্তন ফুটবলার পি কে ব্যানার্জি। শুক্রবার দুপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় ফুটবলের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।


দীর্ঘ একমাস ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পি কে ব্যানার্জি। গত সোমবার বিকেল থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অনেকটাই অবনতি হয়েছিল। হাসপাতালে তাঁকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন ভাই প্রসূন ব্যানার্জি ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পিকে–কে দেখতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসুও।


এর আগে গত ৩ মার্চ পি কে–র শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন তিনি।
মূলত ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়েই তিনি বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যদিও আরও একাধিক শারীরিক সমস্যা ছিল পি কে–র। ডায়ালিসিসও চলছিল। তবে গত সোমবার বিকেল থেকে তাঁর অবস্থার ফের অবনতি হয়। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে।


হাসপাতালের তরফে সোমবার রাত নটা নাগাদ এক মেডিক্যাল বুলেটিনে বলা হয়, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন না প্রাক্তন ফুটবলার। বর্তমানে তাঁকে পুরোপুরি ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। বহু অঙ্গ কাজ করছে না। কৃত্রিম ভাবে শ্বাসযন্ত্রকে কাজ করানো হচ্ছে।


শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দুপুরে মারা যান পি কে ব্যানার্জি। ইস্টার্ন রেলের হয়ে দাপটে খেলেছেন। ভারতীয় ফুটবল দলের হয়ে অলিম্পিক, এশিয়াডে অংশ নিয়েছেন। কোচ হিসেবে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে একাধিক সাফল্য এনে দিয়েছেন পি কে।

জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে দশ তথ্য:

১। ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন জলপাইগুড়িতে জন্ম প্রদীপবাবুর। ছোট থেকেই ফুটবল ছিল ধ্যানজ্ঞান।

২। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলেছিলেন পিকে। তারপর বাবার চাকরি সূত্রে গোটা পরিবার চলে আসে কলকাতায়। পিকে যোগ দেন এরিয়ানে।

৩। ১৯৫৪ সালে এক মরশুম এরিয়ানে খেলার পর ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পিকের ক্লাব বলতে গোটা ময়দান জানত ইস্টার্ন রেলকে।

৪। ১৯৫৮ সালে তাঁর নেতৃত্বেই কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল ইস্টার্নে রেল। তাৎপর্যপূর্ণ হল এই তারপর আর কোনও তথাকথিত ছোট ক্লাব কলকাতা লিগ জেতেনি। মাঝে কয়েকবার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব জিতলেও সাতের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সাদা-কালোর অশ্বমেধের ঘোড়া থেমে যায়।কার্যত কলকাতা লিগ হয়ে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ট্রফি। কিন্তু ৫৮-র পর এবারই প্রথম ইস্ট-মোহনের বাইরে ছোট দল হিসেবে পিয়ারলেস স্পোর্টস ক্লাব কলকাতা লিগ জেতে।

৫। ভারতের জার্সি গায়ে ৪৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন পিকে। তাঁর বুট থেকে এসেছিল ১৪টি গোল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বারবার ঝলসে উঠেছিলেন পাঁচফুট সাড়ে আট ইঞ্চির এই স্ট্রাইকার।

৬। ১৯৫৮, ৬২ এবং ৬৬-এর এশিয়াডে ভারতের জার্সি গায়ে খেলেছিলেন পিকে। এর মধ্যে ৬২-র জাকার্তা এশিয়াডে চুনি গোস্বামী, তুলসীদাস বলরাম, জার্নাল সিং, পিটার থঙ্গরাজদের সঙ্গে নিয়ে সোনা জিতেছিলেন পিকে।

৭। ১৯৬১ সালে অর্জুন এবং ১৯৯৪ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান পিকে।

৮। খেলা ছাড়ার পরে কোচিংয়েও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় দলের কোচিং করার দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি কোচিং করিয়েছিলেন ময়দানেও।

৯। ১৯৯৭ সালের ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে পিকে এবং মোহনবাগানের কোচ অমল দত্তর লড়াই ইতিহাস হয়ে রয়েছে ময়দানে।

১০। ওই ম্যাচেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ১ লক্ষ ২০ হাজার দর্শক হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত যা ভারতীয় ফুটবলে রেকর্ড। সেই ম্যাচে অমল দত্তর ডায়মন্ড সিস্টেমকে মাটিতে মিশিয়ে ছেড়েছিল পিকের ছক। ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন বাইচুং ভুটিয়া। মোহনবাগানকে ৪-১ গোলে হারিয়েছিল পিকের লাল-হলুদ।

Previous articleবিনা পারিশ্রমিকে সাত বছরের লড়াই চালিয়েছেন নির্ভয়ার মহিলা আইনজীবী !‌ চার অপরাধীর ফাঁসির পর টুইটারে অভিনন্দনের ঝড়
Next articleকরোনা সতর্কতা: বনগাঁ শিমুলতলায় কাতার ফেরত যুবকের বাড়ি গেল পুলিশ,নাগরিকদের পাশে দাঁড়ালেন গোপাল শেঠ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here