দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাতটি বিষয়েই পরীক্ষা শুরুর পনেরো মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র ঘুরেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০২০-র প্রথম দুটি পরীক্ষাতেই ‘ফাঁস’ হয়ে গেছে প্রশ্নপত্র। মঙ্গলবার বাংলার পর আজ, বুধবার ইংরাজি। কিন্তু এই ঘটনায় খুব একটা বিচলিত নন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিন পার্থবাবুকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বলেন, “এটা নিয়ে মাথা ঘামাবার কিছু নেই। সবাই খবর করবার জন্য এসব করে।” দায়সারা ভঙ্গিতে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “কেউ যদি আধঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ করে দেয় তাহলে তুমি আমি কী করব!”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত- তা সে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত কেউ হোক বা না হোক—শাস্তি হবেই।” কারা এই প্রশ্ন ফাঁস করছে তা খুঁজে বের করতে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমধ্যমের প্রতিনিধিদেরও সরকার আতস কাচের নীচে রেখেছে বলে জানিয়েছেন পার্থবাবু। বলেছেন, “আমরা সোর্স ধরছি।”
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি থেকে বাদ যাননি সাংবাদিকরাও। তিনি বলেন, “আমরা সব ধরছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কারা আছে, তোমাদের মধ্যে কারা আছে সব ধরছি। কেউ আমাদের তালিকা থেকে বাদ নেই।”
গতবছর মালদহ, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার-সহ একাধিক জেলায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনা আটকাতেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল। পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছিল রাজ্যের ৪২টি ব্লকে দু’ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। কিন্তু তা করেও আটকানো যায়নি প্রশ্ন ফাঁস।
পার্থবাবুর এদিনের বক্তব্য নিয়ে শিক্ষামহলের অনেকেই কটাক্ষ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রী যদি বলে দেন ‘মাথা ঘামানোর কিছু নেই’ বা ‘হোয়াটস অ্যাপ করে দিলে আমি কী করব’ তাহলে বুঝতে হবে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সংবাদমাধ্যম তার দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। প্রশ্ন বেরিয়ে এলে খবর করা সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী গোড়ায় না গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে আতস কাচের নীচে ফেলতে চাইছেন। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “উনি কি বলতে চাইছেন যে, প্রশ্ন ফাঁস হলে মাথাব্যথা নেই, তা নিয়ে খবর হলেই মাথাব্যথা হচ্ছে! কারণ বাংলার মানুষ জেনে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনা করার যোগ্যতাও এই সরকারের নেই”।