দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: ফ্রান্স থেকে উড়ল প্রথম দফার পাঁচটি রাফাল। সাত হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আগামী বুধবার, ২৯ জুলাই নামবে ভারতের মাটিতে। হরিয়ানার আম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটির ‘গোল্ডেন অ্যারো’ ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে পাঁচটি রাফালকে। দূরপাল্লার দুই ক্ষেপণাস্ত্রযুক্ত করেই ভারতে পাঠানো হচ্ছে রাফালগুলিকে। সব প্রস্তুতি ঠিক থাকলে সাতদিনের মাথায় রাফাল পাঠিয়ে দেওয়া হবে পূর্ব লাদাখে।
"Beauty and the Beast"- #Rafale Fighter Aircraft. Ready to take off @MEAIndia @JawedAshraf5 @gouvernementFR @Dassault_OnAir @rajnathsingh @DefenceMinIndia @DDNewslive @ANI @DrSJaishankar @PMOIndia pic.twitter.com/TTAi6DHun7
— India in France (@Indian_Embassy) July 27, 2020
বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ফ্রান্স থেকে পাঁচটি রাফাল উড়িয়ে আনবেন ভারতের পাইলটরা। মাঝে সাময়িক বিরতি নেবেন আবু ধাবির আল ধাফরা এয়ারবেসে। মাঝ আকাশে দু’বার জ্বালানি ভরা হবে ফাইটার জেটগুলিতে। ফ্রান্সে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, দশটি রাফাল তৈরি রেখেছে ফরাসি দাসো অ্যাভিয়েশন। তার মধ্যে প্রথম দফায় পাঁচটি পঠানো হচ্ছে ভারতে। আগামী বছরের মধ্যে চুক্তিমাফিক ৩৬টি রাফাল পৌঁছে যাবে ভারতে।
ফ্রান্সে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জাভেদ আসরফ বলেছেন, “ভারতীয় বায়ুসেনার ১২ জন পাইলট প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ফ্রান্সে। তাঁরা নিরাপদে রাফাল নিয়ে ভারতে পৌঁছে যান। অনেক অভিনন্দন রইল।”
The first 5 #IAF #Rafales have taken off from Dassault Aviation Facility, Merignac, #France today morning. These 5 include 3 single-seater and 2 twin-seater aircraft. The ferry is planned in two stages & is being undertaken by IAF pilots. 1/2#RafaleJet pic.twitter.com/0TWU5zlgvQ
— Indian Air Force (@IAF_MCC) July 27, 2020
রাফাল যুদ্ধবিমানের সঙ্গে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তিও যুক্ত করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। যে পাঁচটি রাফাল আসছে ভারতের হাতে সেগুলি থেকে মেটিওর ও স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যাবে। রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়ানোর জন্য ফ্রান্স থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে দেশের ১২ জন পাইলটকে। সূত্রের খবর, এয়ারবাস ৩৩০ মাল্টিরোল ট্যাঙ্কার ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট উড়িয়ে কীভাবে মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরতে হবে সেই ট্রেনিং নিয়েছেন পাইলটরা। এই এয়ারক্রাফ্ট ফরাসি বায়ুসেনারা ব্যবহার করেন। রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়ানোর পদ্ধতি ও মাঝ আকাশে জ্বালানির ভরার প্রক্রিয়া জানতে আরও ৩৬ জন বায়ুসেনার পাইলটের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। তাঁরাও ফ্রান্সে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন।
Ambassador @JawedAshraf5
— India in France (@Indian_Embassy) July 27, 2020
visited the Rafale Assembly line, training facilities and interacted with officials from @Dassault_OnAir@gouvernementFR @MEAIndia @IndianDiplomacy @DDNewslive @ANI @IAF_MCC @DefenceMinIndia @rajnathsingh pic.twitter.com/ccrEPIVwkY
চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের আবহে রাফালের মতো মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট হাতে পাওয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন বায়ুসেনার এক আধিকারিক। প্রথম দফায় পাঁচটি রাফাল আসার কথা ফ্রান্স থেকে। তবে সেই সংখ্যা ছ’টিও হতে পারে।
৩৬টি রাফাল ফাইটার জেটের জন্য ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরেই। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ভারতের জন্য ১০টি রাফাল জেট তৈরি রেখেছে ফরাসি সংস্থা। তার মধ্যে পাঁচটি চলে আসবে এ বছরেই। মে মাসেই প্রথম চারটি রাফাল ভারতের হাতে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এই সময় পিছিয়ে যায়।
সেই ২০০৭ সাল থেকেই মাঝারি ওজনের যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমেরিকা, রাশিয়া, সুইডেনের মোট ছ’টি বিমান সংস্থা প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। লকহিড মার্টিনের এফ-১৬ ফ্যালকন, বোয়িংয়ের এফ-১৮ হর্নেট, সাব গ্রিপেন, মিগ-৩৫-কে বাদ দিয়ে শেষে প্রতিযোগিতা এসে দাঁড়ায় ইউরোফাইটার সংস্থার টাইফুন এবং রাফালের মধ্যে। কিন্তু ইউরোফাইটার-এর তুলনায় কম দর হেঁকে বাজি ছিনিয়ে নেয় দাসো।
Rafale aircrafts maneuvered by the world’s best pilots, soar into the sky. Emblematic of new heights in India-France defence collaboration #ResurgentIndia #NewIndia@IAF_MCC @MeaIndia @rajnathsingh @Dassault_OnAir @DefenceMinIndia @PMOIndia@JawedAshraf5 @DDNewslive @ANI pic.twitter.com/FrEQYROWSv
— India in France (@Indian_Embassy) July 27, 2020
কী ধরনের মিসাইল রয়েছে রাফালের সঙ্গে?
ডবল ইঞ্জিন মল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট রাফাল আকাশ থেকে ভূমিতে ও সমুদ্রেও নির্ভুল নিশানা লাগাতে পারে। ৯ টনের বেশি যুদ্ধাস্ত্র বইতে পারে রাফাল। অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকি পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের। রাফালকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ‘মেটিওর’ এবং ‘স্কাল্প’ নামে দুটি মিসাইল যোগ করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। মেটিওর ও স্কাল্প মিসাইল বানিয়ছে ইউরোপিয়ান অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা এমবিডিএ।
মেটিওর হল বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁত টার্গেট করতে পারে। প্রতিটি মেটিওর মিসাইলের দাম ২০ কোটি টাকা। ‘স্কাল্প’ হল লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল। দৈর্ঘ্যে ৫.১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৩০০ কিলোগ্রাম। ৬০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে এই মিসাইল। আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া যায় এই মিসাইল। এটি ব্যবহার করে ব্রিটিশ ও ফরাসি বায়ুসেনা। প্রতিটি স্কাল্প মিসাইলের দাম ৪০ কোটি টাকা।
Bon Voyage: Indian Ambassador to #France interacts with the Indian pilots of the Rafale. Congratulates and wishes them a safe flight to India with a single hop. #ResurgentIndia #NewIndia #Rafale@IAF_MCC @MeaIndia @rajnathsingh @Dassault_OnAir @DefenceMinIndia @PMOIndia pic.twitter.com/jk3IWD9tYU
— India in France (@Indian_Embassy) July 27, 2020
চিনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ফ্রান্স থেকে হ্যামার মিসাইল সিস্টেমও আনতে চলেছে ভারত। ‘হাইলি অ্যাজাইল মডিউলার মিউনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ’ মিসাইল সিস্টেম আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া যায়। ৩ মিটার দৈর্ঘ্যের এই মিসাইল সিস্টেমের পাল্লা ৬০ কিলোমিটার। উঁচু পার্বত্য এলাকা, সমতলভূমি যে কোনও জায়গা থেকে আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতে ছোড়া যায়। একসঙ্গে অনেকগুলো নিশানায় আঘাত করতে পারে। আগে রাফাল থেকে ছোড়ার জন্য ইজরায়েলি স্পাইস-২০০০ বোমার কথা ভাবা হয়েছিল। এই স্পাইস বোমা বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের সময় ব্যবহার করা হয়। তবে পরে সিদ্ধান্ত বদলে মাঝারি পাল্লার হ্যামার মিসাইল সিস্টেম কেনারই পরিকল্পনা করে ভারতীয় বায়ুসেনা।
পূর্ব লাদাখের গালওয়ান, দেপসাং ও গোগরা হট স্প্রিং এলাকা থেকে সেনা পিছোলেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অনেক এলাকাতেই এখনও চিনের সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে বলে খবর। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলাতেই তাই প্রস্তুত থাকছে ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনা। শীতের আগে অতিরিক্ত ৩০ হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে লাদাখে।
বায়ুসেনার শক্তি বাড়াতে ইতিমধ্যেই ২২টি অ্যাপাচে ও ১৫ টি চিনুক অ্যাটাক কপ্টার চলে এসেছে ভারতের হাতে। অ্যাপাচের এএইচ-৬৪ই মডেলের যুদ্ধবিমানগুলি এই মুহূর্তে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী কমব্যাট হেলিকপ্টার। মার্কিন সেনা এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। সেইসঙ্গে চিনুক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয় সেনা, অস্ত্র, রসদ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রাশিয়ার থেকে অত্যাধুনিক ২১টি মিগ-২৯ ফাইটার জেট ও ১২টি সুখোই-৩০ এমকেআই কেনার চুক্তি হয়ে গেছে। রাশিয়ার সুখোইয়ের প্রযুক্তিতে বদল ঘটিয়ে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে এই যুদ্ধবিমান থেকে নোভাটর কে-১০০ মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তি যোগ করেছে ভারত। সুখোইয়ের নয়া ভ্যারিয়ান্ট ব্রাহ্মস ক্রুজ মিসাইল বয়ে নিয়ে যেতে পারে। সুখোই থেকে ব্রাহ্মস ছুড়ে আকাশ থেকে ভূমিতে টার্গেট করা যায়। অন্তত ৩০০ কিলোমিটার পাল্লায় কাজ করে এই মিসাইল।