দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত ৪৮ ঘণ্টায় দ্রুত অবস্থার অবনতি হয়েছিল পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় আহত ঋষভ সিংয়ের। প্রমাদ গুনেছিলেন অনেকেই। অবশেষে থেমে গেল এই শিশুর লড়াই। মৃত্যু হয়েছে ঋষভের। অতি সংকটজনক অবস্থায় শুক্রবারই এসএসকেএম হাসপাতালে কার্ডিওথোরাসিক ভাসকুলার সায়েন্স বিভাগে পূর্ণ ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে। মস্তিষ্কে অক্সিজেন না পৌঁছনোয় ব্রেন কাজ করা প্রায় থামিয়ে দিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন হাসপাতালের একধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
শুক্রবার সন্ধের পর থেকেই দ্রুত অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে ঋষভের। চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টাই একে একে বিফলে যেতে শুরু করে। মস্তিষ্কে অক্সিজেন না পৌঁছনোর পাশাপাশি মাল্টি অরগ্যান ফেল হয় ঋষভের। খুব দ্রুত ওঠানামা করতে থাকে রক্তচাপ। রাত দশটা নাগাদ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঋষভের শরীরে ক্রমশ কমতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। গত ৪৮ ঘণ্টায় কার্যত অকেজো হয়ে গিয়েছিল তার কিডনি। ডায়ালিসিস করেও সুরাহা হয়নি। কিডনি কাজ না করায় ইউরিন পাস হয়নি। ফলে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছিল রিষভের শরীরে। রক্তে অস্বাভাবিক হারে কমে যায় প্লেটলেটের পরিমাণও।
রক্তের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে শুক্রবারই ঋষভকে ফের সিঙ্গল ডোনার প্লেটলেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এসএসকেএম-এর মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা। কিন্তু সায় দেয়নি ঋষভের শরীর। টানা সাতদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছিল সে। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে এই ছাত্রের। মৃত ঋষভ শ্রীরামপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সন্তোষ (পাপ্পু) সিংয়ের ছেলে বলে জানা গেছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাচ্চাদের স্কুলে আনার পথে পোলবার কামদেবপুরে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে একটি পুলকার। ১৫ জন কচিকাঁচা ছিল গাড়িটিতে।
তাদের মধ্যে পাঁচজনের আঘাত ছিল গুরুতর। গাড়িটির চালক জানিয়েছিলেন শ্রীরামপুর থেকে চুঁচু্ড়া খাদিনা মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। আচমকাই তাঁদের সামনে থাকা একটি লরি ইউটার্ন করে। এরপরেই নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ওই লরিটিকে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় পুলকারটি।
এই দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছিল দুই ছাত্র ঋষভ সিং এবং দিব্যাংশু ভগত। গ্রিন করিডোর করে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাদের। তাদের চিকিৎসার জন্য এসএসকেএমে সাত সদস্যের মেডিক্যাল টিম তৈরি করা হয়। সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার হয় ঋষভের। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। শ্বাস নেওয়ার জন্য ঋষভকে দেওয়া হয় কৃত্রিম ফুসফুস। প্রথম থেকেই আশঙ্কাজনক ছিল এই ছাত্র। সময় যত এগিয়েছে ক্রমশ খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা শরীরে।
অন্যদিকে ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি ছিল আর এক জখম ছাত্র দিব্যাংশু। গত ৪৮ ঘণ্টায় দিব্যাংশের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। সে চোখ মেলেছে এবং আত্মীয়দের চিনতেও পেরেছে বলে সূত্রের খবর। দিব্যাংশকে সুস্থ করে তুলতে এখন মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে পুলকার দুর্ঘটনার সাত দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে থানায় আত্মসমর্পন করেছে গাড়ির মালিক শামিম আখতার। দুর্ঘটনার পর থেকেই তাকে খুঁজছিল পুলিশ। শ্রীরামপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামিম। তাঁর বাড়িটি শেওড়াফুলি স্টেশনের কাছে চাতরা মুসলিমপাড়ায়। অভিযোগ, এই শামিমই পড়ুয়াদের পুলকারে তুলেছিল।
নির্দিষ্ট জায়গায় সে গাড়ির স্টিয়ারিং তুলে দেন পবিত্র দাস অন্য এক জনের হাতে। জানা গিয়েছে, রোহিত কোলে নামে এক ব্যক্তির থেকে পুলকারটি কিনেছিলেন শামিম। তাঁর গাড়ির ফিটনেস যথাযথ ছিল না, স্পিড গভর্নর কাটা ছিল। পবিত্র দাস মূল অভিযুক্ত হলেও সহ-অভিযুক্ত হিসাবে পুলিশ এই শামিমকেই খুঁজছিল।