দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা পর্বে এখনও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। পুজোর আয়োজন করতে গিয়ে স্পনসরের অভাবে সঙ্কটে উদ্যোক্তারাও। এই পরিস্থিতিতে পুজো কী ভাবে হবে, তা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এমন সঙ্কটের মধ্যে পুজো উদ্যোক্তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত তিন বছর ধরে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের আর্থিক সাহায্য করছে রাজ্য সরকার। এ বার অনটনের মধ্যে সেই সাহায্যও দ্বিগুণ করেছে মমতার প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, রাজ্যের প্রায় ৩৭ হাজার সরকার স্বীকৃত পুজোকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেবে সরকার। এবার সেই প্রশ্ন তুলেই হাইকোর্টে দায়ের হল মামলা।
ধর্মনিরপেক্ষতা এবং পুরোহিত ভাতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এবার এই দুটি বিষয় নিয়েই হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন সিটু নেতা সৌরভ দত্ত। অবশ্য ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার পুজো কমিটিগুলিকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার পরও মামলা করেছিলেন তিনি। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার আদালতে জানায়, ট্রাফিক পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ- সেভ লাইফ’ প্রকল্পে পুজো কমিটিগুলিকে টাকা দিচ্ছে সরকার। হাইকোর্ট ওই মামলায় স্থগিতাদেশ দিলে জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে অবশ্য রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তে সায় জানায় সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনও পর্যন্ত হয়নি। এবার পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা সাহায্য ও পুরোহিতদের ভাতা নিয়ে হাইকোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা। আগামী বুধবার এই মামলার শুনানি হবে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে।
নবান্ন সূত্রের খবর, শুধুমাত্র পুজো উদ্যোক্তাদের আর্থিক অনুদান বাবদ ১৮৫ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। গত বছর পুজোগুলিকে সরকারি তরফে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছিল। আর বিদ্যুৎ বিলে গত বছর ২৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছিল সরকার। এ বার দুই অঙ্কই দ্বিগুণ হচ্ছে। পুজো উদ্যোক্তাদের দমকলের ফি বাবদ ন্যূনতম যে ৫০০ টাকা এবং আয়তন ভিত্তিতে ফি দিতে হত, তা গতবারই সরকার মকুব করেছিল। সেটা এ বারও বহাল থাকছে। সঙ্গে পুরসভা বা পঞ্চায়েত কর বাবদ যে টাকা নিত, তা-ও এ বার পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ বার সরকার স্বীকৃত পুজোর সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, একুশের ভোটের আগে সরকারি টাকায় খয়রাতি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেদের বক্তব্য, হিন্দুত্ব নিয়ে বিজেপির সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা চালাচ্ছে তৃণমূল সরকার। এখন দেখার আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানিতে কী বলে কলকাতা হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, এবছর পুজোর বিদ্যুৎ বিলে ৫০ শতাংশ ছাড় এবং দমকল ও পুরসভা-পঞ্চায়েতের কর সম্পূর্ণ মকুবের কথাও ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পুজো হচ্ছে, হবে। তবে সাবধানে।’ তবে বেশি মানুষ ভিড় করতে পারেন, এই আশঙ্কায় এ বছর সরকারি উদ্যোগে রেড রোডের পুজো কার্নিভাল হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘রেড রোডে এ বার নমাজ হয়নি, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও ঠিকমতো হয়নি। কার্নিভালটা এ বার তোলা থাক। আগামী বার ডাবল করে দেবো।’