আমার সবকিছু কেমন যেন গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না লড়াইটা কার বিরুদ্ধে? করোনার বিরুদ্ধে নাকি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জননেত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে? রাজ্যের বিরোধী রাজনীতিবিদদের মমতা বিদ্বেষের কথা বাংলার মানুষ জানেন। ভেবেছিলাম অন্তত এই সময় সেই বিদ্বেষ থেকে তারা বিরত থাকবেন। ঘটছে ঠিক তার উল্টোটা। টিভির তরজা থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গাতেই ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরে ঘরে বসে বিবৃতি দেওয়া বিরোধী নেতারা এমন একটা হাবভাব করছেন যেন করোনাকে ডেকে এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একটু তথ্যের দিকে তাকানো যাক। মার্চের প্রথম সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রকে বারবার বলেছিলেন আন্তর্জাতিক উড়ান ও আন্তঃ রাজ্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করার কথা। কেন্দ্রের এই ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তই গোটা দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর মূল কারণ। মুখ্যমন্ত্রীকে যারা গাল পাড়ছেন তারা স্রেফ গলার জোরে এই দায় তার ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছেন। কথায় কথায় মুখ্যমন্ত্রীর ভুল ধরা বিরোধী নেতাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তফাৎ একটাই – তিনি কাজ করেন এবং অন্যরা শুধুই বিবৃতি দেন ও সমালোচনা করেন।
শহরে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে সচেতন করতে রাস্তায় নেমেছেন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে মানুষকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছেন, দিয়েছেন মাস্ক। এর পাশাপাশি তিনি গিয়েছেন হাসপাতালগুলিতে করোনা মোকাবিলা ব্যবস্থার অবস্থা কেমন, প্রয়োজনীয় রসদ আছে কিনা, তার খোঁজখবর নিতে। ভাবতে পারেন, একজন মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় গণ্ডি কেটে মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বোঝাচ্ছেন! আন্তরিকতাহীন বিরোধীরা জননেত্রীর এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে হেরে গিয়েছেন। তাই কুৎসা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই।
দলের বাইরে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গোটা ব্যাপারটাকে মানুষের সামনে একটা ভয়ঙ্কর বিপদ বলে দেখতে চেয়েছেন। এই বিপদ সহজে কাটবে না জেনেই তিনি সব দলের কাছে বারবার করজোড়ে অনুরোধ করেছেন – আসুন, এই লড়াইটা আমরা একসঙ্গে লড়ি। আপনারা সবাই সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করুন। এটা কোন দুর্বলতা নয়, দূরদৃষ্টি আছে বলেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আমাদের দেশের পরিকাঠামো ব্যবস্থা দুর্বল। তাই সব দল একসঙ্গে না মিললে এই মারণ ভাইরাসের মোকাবিলা করা যাবেনা। কোন দল বলার আগেই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। সবার পরামর্শ শুনেছিলেন। যদিও বিরোধীদের অনেক প্রস্তাব ইতিমধ্যেই রূপায়িত হয়ে গিয়েছিল। এর প্রতিদানে বিরোধীরা তাকে সকালসন্ধ্যা গালমন্দ করে চলেছেন। এমন সব ইস্যু তুলছেন যার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।
মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা। মানুষ তাকে এতটা ভালোবাসে এই ব্যাপারটাই ঠিক সহ্য করতে পারছেন না বিরোধীরা। করোনা ঠেকানোর নামে যারা প্রদীপ জ্বালানো, কাঁসর-ঘণ্টা বাজানো, আকাশপথে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি ফুল ছড়ানোর মত নাটক করছেন তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু রাজ্যের বিরোধীরা নিশ্চুপ। কোন মিডিয়া প্রশ্ন তুলছে না, আমেদাবাদে কীভাবে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হল? নমস্তে ট্রাম্প বন্দনার জন্য গরিব দেশের কোষাগার থেকে কেন খরচ করা হল ১০০কোটি টাকা?
তবে যতই চেষ্টা করুন না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না। গান্ধী, ইন্দিরা, নেহরুর পর দেশের একমাত্র জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামের গরিব মানুষ তার পাশে আছেন এবং থাকবেন। কারণ তাদের প্রয়োজন ও ইচ্ছে তিনিই সবথেকে ভালো বোঝেন। তাদের কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা নেই। আমাদের পিছিয়ে থাকা রাজ্যটাকে তিনি প্রাণপণে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন। করোনা এই লড়াইয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে সন্দেহ নেই। তবে এই বাধা অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে যাবেনই। মানুষ তার এই লড়াই দেখেই আশায় বুক বেঁধে তার পাশে দাঁড়ান। টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা কুৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন এরপর তাদের কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর উচ্চতায় পৌঁছতে পারছেন না বলে তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই চেষ্টা করতে গিয়ে তারা যে নিজেরাই এখন গলা সমান পাঁকে আটকে পড়েছেন একথা বোঝানোর মত বন্ধুও তাদের নেই!