দেশের সময়: পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশ থেকে যানবাহনকে রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পর রবিবার সন্ধ্যায় এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল-এ ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য আংশিক ভাবে পুনরায় শুরু হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানাগিয়েছে, বেনাপোল (বাংলাদেশ পাশের) থেকে পোশাক বহনকারী পাঁচটি ট্রাক এসেছিল, একই সময়ে দক্ষিণ রাজ্য থেকে মাছ বহনকারী পাঁচটি ট্রাককে এদিন বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বাংলাদেশের রফতানিকারীদের একাংশ এ দেশ থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক বেনাপোলে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় বাণিজ্যে বাধা আসে ৷এই সীমান্তে বাণিজ্য ১৯ জুলাই থেকে স্থবির হয়ে পড়েছিল। রাজ্য সরকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে কোভিড -১৯ এর বিস্তার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে বেনাপোল সম্পূর্ণ ভাবে গ্রিন জোন ছিল যেখানে কোভিডের কোনও সমস্যা নেই।
বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার পরে, প্রায় ৭oo-৮oo ট্রাকগুলি ভারতের দিকে আটকে ছিল, এবং আরও ৫০০ টি পণ্য বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশের পাশে অপেক্ষা করছিল। সেখানে যানজট এড়াতে বেশ কয়েকটি ট্রাককে কাছের স্থল বন্দরে গোজাডাঙ্গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য
উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পেট্রাপোল ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রায় ৪৭ শতাংশ।
উভয় পক্ষের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে সম্মত হয়ে ট্রাক চলাচল আবার শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি যে পরের এক থেকে দুই দিনের মধ্যে দু’দেশের বাণিজ্য ফের স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, “পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস এন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী একথা দেশের সময় কে বলেন।
মৌখিক নিশ্চয়তা
রবিবার, উভয় দেশের ব্যবসায়ী সহ স্টেকহোল্ডাররা অচলাবস্থা সমাধানের জন্য বাণিজ্য এবং জেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। যদিও পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও লিখিত নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি, সূত্রের খবর, মানসম্পন্ন অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণের জন্য মৌখিকভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে যার মধ্যে সাবধানতা অবলম্বন করা, সামাজিক দূরত্বের নিয়মাবলী বজায় রাখা, যানবাহন চলাচল করা, চালক ও শ্রমিকদের নিয়মিত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ইত্যাদি রয়েছে।
পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল শনিবারও। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, পণ্য আমদানি চালু করতে রাজ্যের নির্দেশ না-থাকায় তা শুরু করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে আমদানি চালুর অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেয় ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজ়েশন। সংগঠনের বক্তব্য, রাজ্যের হিলি ও মেহেদিপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য যাতায়াত শুরু হয়েছে। পেট্রাপোলেও একই ব্যবস্থা চালু হোক।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বন্দর এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৬০০ ভারতীয় ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেনাপোলে ৫৭০টি বাংলাদেশি ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে ভারতে ঢোকার অপেক্ষায় ছিল। সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, এক দিকে ‘‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়,করোনা ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে রফতানি-আমদানি শুরু হয়েছে।’’ আর জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে এবিষয়ে দীর্ঘ সময় কথা হওয়ার পরই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দ্রুত রফাসূত্র বার করে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রফতানির কাজ ফের শুরু হল।।