দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একলাফে ২২ থেকে মৃত্যু বেড়ে হল ৩৩। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এই সংখ্যায় মৃত্যু এ রাজ্যে এই প্রথম। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে এই সংখ্যাই বলেছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।
শুধু তাই নয়। মুখ্যসচিব এই দিন এও বলেন, “এখনও পর্যন্ত করোনা পজিটিভ মোট ১০৫ জনের মৃত্যুর হয়েছে রাজ্যে। কিন্তু অডিট কমিটি খতিয়ে দেখার পরে ৩৩ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে কোভিড ১৯। বাকি ৭২ জনের করোনা হলেও মৃত্যুর পেছনে অন্য কারণ ছিল।”
মুখ্যসচিবের দেওয়া এই তথ্য যে বিরোধীদের হাতে একটি বড় অস্ত্র তুলে দিতে চলেছে, তা আরবলার অপেক্ষা রাখে না। এমনিতেই গত কয়েক দিন ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য গোপন করার। একই অভিযোগ তুলছিল চিকিৎসক সংগঠনগুলোর একাংশও। দাবি করা হয়েছিল, আসলে করোনায় অনেক বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন এ রাজ্যে, কিন্তু সরকার তথ্যগোপন করছে।
স্বাস্থ্য ভবন তো বটেই, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বারবার বলে এসেছেন, কোনও তথ্য গোপন করা হচ্ছে না। যে কোনও মৃত্যু খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর আসল কারণ কী। কারণ অনেক সময়েই হাইপারটেনশন, কিডনির অসুখ, ডায়াবেটিস– ইত্যাদি ক্রনিক রোগে ভোগা রোগীরা মারা যাচ্ছেন করোনা সংক্রমণের পরে। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত রূপে করোনাই নয়, এমনই জানিয়েছে অডিট কমিটি– এমনটাই দাবি স্বাস্থ্য দফতরের।
পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ত্রুটি, খামতি বা স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির, চিকিৎসকদের একাংশ এবং সাধারণ মানুষের একাংশের থেকে যে সমালোচনা হচ্ছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই অডিট কমিটি। বিরোধীদের সপাট অভিযোগ, অডিট কমিটির নামে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রকৃতপক্ষে কতজন মানুষ বাংলায় মারা গিয়েছেন তা গোপন করে যাচ্ছে সরকার। তার ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
রাজ্য সরকার গঠিত অডিট কমিটি নিয়ে এর আগে প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলও। মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিবেক কুমার এ ব্যাপারে তাঁদের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাও তাঁদের যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। কারণ, স্বাস্থ্য সচিব তাঁদের বলেছেন, করোনা আক্রান্ত কোনও রোগী পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলে কি বলা যায় কোভিডই তাঁর মৃত্যুর কারণ। তার জবাবে কেন্দ্রীয় টিম বলে, পথ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া আর হাসপাতালে রোগে ভুগে মারা যাওয়া কি এক হল?
গুরুত্বপূর্ণ হল, রাজ্য সরকার গঠিত ওই অডিট কমিটিতে যে সদস্য ডাক্তাররা রয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকেও ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় টিম। আইসিএমআর এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রটোকল মেনে তাঁরা করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করেছেন কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এর পরেই আজ, বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্যসচিব স্পষ্ট করলেন, মোট ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা সংক্রামিত অবস্থায়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ৭২ জনেরই মৃত্যুর কারণ অন্য কিছু বলে নির্ধারণ করেছে অডিট কমিটি।
মুখ্যসচিবের সাংবাদিক বৈঠক লাইভ: রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের মৃত্যু করোনায়:
- গতকাল পর্যন্ত অ্যাকটিভ ছিল ৫৫০ জন।
- আজ রাজ্যে করোনা অ্যাকটিভ ৫৭২ জন।
- গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ৩৭ জন।
- গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১১ জন।
- মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৩ জন।
- গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ১৫ জন।
- মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩৯ জন।
- মোট স্যাম্পেল টেস্ট হয়েছে ১৬ হাজার ৫২৫টি।
- গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট হয়েছে ১৯০৫টি।
- রাজ্যে ল্যাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪টি। আরও ২টো ল্যাব রেডি হচ্ছে।
- গত তিন দিন সিএনসিআই-তে টেস্ট হচ্ছে না প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে।
- আজ যত জন পজিটিভ এসেছেন তার মধ্যে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে এসেছেন বেশিরভাগ। এই তিন জেলা থেকে ৮০% মোট কেসের।
- হুগলি থেকেও কয়েক জন আক্রান্ত এসেছেন।
- এখন রেড জ়োন: কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর।
- কলকাতায় ২৬৪টি কনটেনমেন্ট জোন আছে। এর পরে হাওড়ায় ৭২টি এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৭০টি।
- সরকারি কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫২৮৮ জন।
- হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১০ হাজার ৭৭৩ জন।
- রাজ্যে কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা ৬৬ থেকে বেড়ে ৬৭ হল।
- কলকাতাতেই চারটি ছিল, পাঁচটি হল।
- মোট ১০৫টি মৃত্যু এখনও পর্যন্ত স্টাডি করেছে অডিট কমিটি।
- ৩৩টি মৃত্যু নিশ্চিত কোভিডের কারণে, ৭২টির পেছনে অন্য কারণ ছিল মৃত্যুর।
- ৩ তারিখের পরে কী হবে, তার কোনও গাইডলাইন আমরা এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাইনি।
- আজ সব রাজ্যের চিফ সেক্রেটারির সঙ্গে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি মিটিং করেছেন। আমরা সেখানেও এ কথাই বলেছি।
- আমরা চাই যে বাইরের রাজ্য থেকে আমাদের মানুষকে আসতে দেওয়া হোক। কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে হলেই ভালো হয়।
- প্রত্যেকটা মানুষ যাঁরা রাজ্যে ফিরবেন তাঁদের এক এক জনের জন্য আমাদের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে।
- তাই সবার কাছেই অনুরোধ যারা ফিরবেন তাঁরা সঠিক তথ্য সরকারকে দিয়ে সাহায্য করুন।
- যে দু’জন চিকিৎসক মারা গিয়েছেন তাঁদের নিকটাত্মীয়কে ১০ লক্ষ টাকা করে ও যে ২১ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
- রাজ্যের বিমার সঙ্গে কেন্দ্রের বিমার সম্পর্ক নেই। আমাদের রাজ্যে মারা গেলে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে।