দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নারদ মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে টানাপড়েন অব্যাহত থাকতে থাকতেই সিবিআই এবং ধৃত চার নেতা-মন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। একদিকে যেমন বাদীপক্ষ সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে ক্যাভিয়েট নিয়ে, তেমনই চার নেতা-মন্ত্রীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তাঁরাও দেশের শীর্ষ আদালতে ক্যাভিয়েট দাখিলের কথা ভাবছেন। অর্থাৎ, কলকাতা হাই কোর্টের গন্ডি ছাড়িয়ে দু’পক্ষের আইনি লড়াই গিয়ে পড়তে চলেছে সুপ্রিম কোর্টের আঙিনায়।
সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ ফিরহাদ কন্যা:
নারদ মামলা নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ফিরহাদ হাকিমের কন্যা। সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন ববি হাকিমের মেয়ে, জানা গিয়েছে এমনটাই।শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে জামিন পাননি সুব্রত মুখোপাধ্যা্য়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই চার নেতাতে ‘গৃহবন্দি’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোট। শুক্রবার সন্ধ্যে ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ফিরহাদ হাকিম। নারদ মামলায় রাজ্যের ৪ নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারির ঘটনায় বিগত কয়েকদিন ধরেই চলছিল তোলপাড়। এদিকে হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চ থেকে এই মামলা যাচ্ছে বৃহত্তর বেঞ্চে।
শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে জামিন পাননি সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়। ওই চার নেতা-মন্ত্রীকে ‘গৃহবন্দি’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু মামলাটির ফয়সালা এখন চূড়ান্ত ভাবে হয়নি। কারণ, ডিভিশন বেঞ্চ থেকে ওই মামলা যাচ্ছে বৃহত্তর বেঞ্চে। সেই বেঞ্চ তিন বিচারপতির হবে না পাঁচ বিচারপতির, তার ভয়সালা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হয়নি। ওই বেঞ্চ গঠিত হলে সেখানে আবার ওই মামলা কলকাতা থেকে ভিন্ রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিবিআই যে আবেদন করেছে, তা নিয়ে শুনানি হবে।
অন্যদিকে,শুক্রবার নারদ মামলার শুনানি শেষ হওয়ার পর হাই কোর্ট চার নেতা-মন্ত্রীকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মানতে হবে বেশ কয়েকটি নিয়ম। থাকতে হবে নজরদারিতে। দেখে নিন আদালতের নির্দেশ মতো ঠিক কী কী নিয়ম মানতে হবে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়দের।
রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তাঁদের সরকারি কাজ করতে দেওয়া হোক। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করার বিষয়ে আংশিক অনুমতি দিয়ে আদালত জানিয়েছে, সব কাজই করতে হবে অনলাইনে। অনলাইনে ফাইল দেওয়া নেওয়া হবে, আলোচনা করতে হবে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। সেই ভিডিয়ো কলের বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত থাকবে।
আর অন্য কাজে ভিডিয়ো কল করা যাবে না। কোনও বিশেষ দরকারে কেউ দেখা করতে এলে, কতক্ষণ দেখা করছেন, কী কারণে আসছেন, সেটি বিস্তারিতভাবে নথিবদ্ধ থাকবে। বাড়ির ঢোকার রাস্তায় যদি সিসিটিভি না থাকে, তাহলে তার ব্যবস্থা করতে হবে জেল কর্তৃপক্ষকে। কে আসছেন, যাচ্ছেন, সমস্ত নজরদারিতে রাখতে হবে। এই সিসিটিভি ফুটেজ রাখতে হবে ভবিষ্যতের জন্য।
তবে ধৃতেরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন ধরে নিয়েই সিবিআই সেখানে একটি ক্যাভিয়েট দাখিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, সূত্রের খবর, ধৃত চার নেতা-মন্ত্রীর তরফেও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার তোড়জোড় করা হচ্ছে। তাঁরা চাইছেন, কলকাতার বিশেষ সিবিআই আদালতে অন্তর্বর্তী যে রায় খারিজ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের গৃহবন্দি করার নির্দেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতে আবেদন করতে। সেই পদক্ষেপ অনুমান করেই সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করতে চাইছে। এখন দেখার, কলকাতা হাই কোর্টে সওয়াল-জবাব শেষ হওয়ার পর বা তা চলাকালীনই সুপ্রিম কোর্টেও নারদ মামলা নিয়ে দু’পক্ষের লড়াই শুরু হয় কি না।
শুক্রবার নারদ মামলার শুনানির পর কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৪ নেতা-মন্ত্রীকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এঁদের মধ্যে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে বাড়িতে ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তিনি আজই বাড়ি ফিরতে চলেছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তাঁর বাড়ির সামনেও শুরু হয়েছে তৃণমূল কর্মীদের তৎপরতা।
কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য ৩ নেতা-মন্ত্রী কবে বাড়ি ফিরবেন, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মতামতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসায় ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছেন এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বাড়ি ফেরার বিষয়টি সেই বোর্ডের মতামতের উপরেই নির্ভর করছে। সেই বোর্ড ৩ নেতা-মন্ত্রীকে আপাতত হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলেই এসএসকেএম সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, নারদ মামলার রায় নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শুক্রবারের শুনানির প্রাথমিক পর্বের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং বিচারপতি অরিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্দেশনামা লিখেছেন তাতে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিচারপতি অরিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় ধৃত চার জনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তাতে মত নেই। আপাতত তাই সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমদের গৃহবন্দি থাকতে হবে।
পরে চূড়ান্ত রায়ে হাইকোর্ট জানিয়েছে, নারদ মামলায় চার নেতামন্ত্রী গৃহবন্দি থাকলেও তাঁরা ভার্চুয়ালি কাজ করতে পারবেন কিন্তু কোনও অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমরা যাতে সিবিআইকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করেন সে ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তৃতীয় বেঞ্চ বা বৃহত্তর বেঞ্চে এরপর এই মামলার শুনানি হবে। যতক্ষণ না তা হচ্ছে ততক্ষণ এই রায় বহাল থাকবে। আপাতত জেলবন্দি দশা কাটলেও চারজনকে থাকতে হবে ঘরবন্দি।
তবে এই মামলার নিষ্পত্তি হবে কীভাবে?
আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, যখন কোনও মামলায় দুই বিচারপতির বেঞ্চে মাতানৈক্য তৈরি হয় তখন আইন অনুযায়ী সেই মামলা পাঠানো হয় বৃহত্তর বেঞ্চে। অর্থাত্ যেখানে থাকেন তিন বা পাঁচ বিচারপতি। নারদ মামলাও তেমন বেঞ্চে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কী ভাবে গঠন হবে এই বেঞ্চ?
হাইকোর্টে কোন মামলা কোন বিচারপতির বেঞ্চে শোনা হবে তা ঠিক করেন প্রধান বিচারপতি। আইনি পরিভাষায় তাঁকে বলা হয় মাস্টার অফ রোস্টার। এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন কোন বিচারপতিকে নিয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হবে। নাকি তৃতীয় কোনও বেঞ্চে পাঠানো হবে মামলা।
বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের প্রক্রিয়া:
এই বেঞ্চ গঠন করা সময় সাপেক্ষ। কারণ অন্যান্য বিচারপতিদের এজলাসে মামলার তালিকা দেখে গোটা বিষয়টি নির্ধারণ করতে হয়। ফলে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বেঞ্চ গঠনে। এই সময় পর্যন্ত নারদ কাণ্ডে ধৃত চার নেতামন্ত্রীকে গৃহবন্দি হয়েই থাকতে হবে।
যদিও গৃহবন্দি রাখার নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়েছেন চারজনের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। বেলা বারোটা পর্যন্ত শুনানি সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কী নির্দেশ দেয় সেটাই দেখার।