-
নারদকাণ্ডে আইপিএস এসএমএইচ মির্জাকে সিবিআই গ্রেফতারের পরে মুখ খুললেন নারদ স্টিংকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বিজেপি নেতা মুকুল রায়। মুকুল এদিন বলেন, “অপরাধীর ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা যেটা মনে করবে সেটাই হবে। এটা সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যাপার।” একই সঙ্গে অতীতের মতো এদিনও তৃণমূলের একদা সেকেন্ড ইন কমান্ড বলেন, “যে সময়ে এই লেনদেন চলছিল, সেই সময়ে আমি নির্বাচনে দাঁড়াইনি। কোথাও দেখা যায়নি যে আমি টাকা নিচ্ছি বা দিচ্ছি”।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ম্যাথু স্যামুয়েলের করা নারদ স্টিং অপারেশনে হইচই পড়ে গিয়েছিল রাজ্যে। তৃণমূল কংগ্রেসের এক ডজন নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে সাড়া জেগে গিয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতেও। পরবর্তীকালে তদন্তের সময়ে ম্যাথু স্যামুয়েলের সঙ্গে সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল মুকুলকে। যদিও এদিন সে প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেন, “আমার সঙ্গে টাকা লেনদেনের ব্যাপারে কোনও কথা হয়নি। ব্যবসার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে এসেছিল।” কিন্তু, তাহলে কেন বর্ধমানের প্রাক্তন পুলিশ সুপারের নাম বলেছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে মুকুলের জবাব, “ওরা বর্ধমানে ব্যবসা করতে চেয়েছিল। জমি কেনা বেচা সংক্রান্ত ব্যাপার, তাই এসএমএইচ মির্জার নাম বলেছিলাম।”
সিবিআইয়ের এই গ্রেফতারি নিয়ে মুকুল বলেন, “সিবিআই কী করবে সেটা তাঁদের ব্যাপার। আমার মত সত্য উদঘাটিত হোক। অনেককেই দেখা গিয়েছে টাকা নিতে। শোভন চট্টোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং আরও অনেকে আছেন। যা প্রমাণ করার আদালতই করবে। আমি বলার কেউ নই। বহু লোক টাকা নেয়। তবে রসিদ আছে কি না তা দেখতে হবে।” অন্যদিকে, রাজীব কুমারের ‘খোঁজের’ মাঝেই মির্জার এই গ্রেফতারির মাধ্যমে কি নজর সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুকুল বলেন, “রাজীব কুমার আর এই তদন্ত দুটো আলাদা ব্যাপার। রাজীব কুমারকে খুঁজে পাওয়া যাছে না, এটা রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা।”
এদিকে, এসএমএইচ মির্জার গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “এর আগে ম্যাথু স্যামুয়েলকেই বারবার অপরাধী প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু এবার মানুষ সবটা জানতে চায়। সিবিআই সঠিক দিকেই যাত্রা শুরু করেছে। তদন্ত এগোতে থাকুক।”
জল্পনা সত্যি করে মির্জার মুখোমুখি বসাতে মুকুলকেই তলব CBI-এর
নারদকাণ্ডের তদন্তে এবার বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে তলব করল সিবিআই।
আগামিকাল, শুক্রবার সকাল ১১টায় এই নব্য বিজেপি নেতাকে নিজাম প্যালেসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।
-
মুকুল রায়ের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে মির্জাকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো চলছিল। কাৰ্যক্ষেত্ৰে তাই মিলে গেল। রাজ্যের বহু আলোচিত নারদকাণ্ডের তদন্তে এবার বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে তলব করল সিবিআই। আগামিকাল, শুক্রবার সকাল ১১টায় এই নব্য বিজেপি নেতাকে নিজাম প্যালেসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও পক্ষ এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে মুখ খোলেননি।
নারদকাণ্ডে আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকে এদিনই গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবার বিজেপির এক নেতাকে ডাকা হতে পারে বলে সন্ধ্যায় জানা যায়। এও শোনা যাচ্ছিল, বিজেপির ওই নেতার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে ধৃত মির্জাকে। সেই বিজেপি নেতা কে, রাজনৈতিক মহলে তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। এর কয়েক ঘণ্টা যে না যেতে সেই বিজেপি নেতার নাম প্রকাশ্যে চলে এল। নারদকাণ্ডের সময় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা ছিলেন মুকুল রায়। পরে বিজেপিতে নাম লেখান। এখন গেরুয়া দলে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
নারদকাণ্ডের তদন্তে এসএমএইচ মির্জাকে জেরা করে ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এবার বিজেপির ওই নেতার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে এই আইপিএস অফিসারকে। সে কারণে ওই নেতাকে খুব শীঘ্রই ডেকে পাঠানো হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সিবিআইয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।
IPS মির্জাকে মোট সাত বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল CBI। এদিন অষ্টম বারের জন্য নিজাম প্যালেসে ডাকা হয়েছিল মির্জাকে। সূত্রের খবর, সেখানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের প্রশ্নের সদুত্তর না দেওয়ার পরই গ্রেফতারির সিদ্ধান্ত CBI-এর। বর্তমানে ব্যারাকপুরে SSF-এর কম্যান্ডান্টকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় CBI। সংবাদমাধ্য়ম সূত্রে খবর, ৫ দিনের হেফাজত চাওয়া হয়েছিল।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হেফাজত মঞ্জুর করেছে আদালত।
নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো ফুটেজে পুলিশকর্তা মির্জাকে ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলের থেকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ। ২০১৪ সালে তখন বর্ধমানের পুলিশ সুপার ছিলেন মির্জা। কেন ও কার নির্দেশে তিনি ওই টাকা নিয়েছিলেন, এই বিষয়েই IPS-কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। পাশাপাশি তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
ঘটনা ২০১৪-র হলেও ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে আসে স্টিং অপারেশনের ফুটেজ। তাতে রাজ্যের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদদের টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।