দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নন্দীগ্রামে সবে মনোনয়ন পেশ পর্ব শুরু হয়েছে। তাতেই উত্তাপ যেন আকাশ ভেদ করতে চাইছে।
মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে গিয়ে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ধরে ধরে সে সবে জবাব তো দিলেই শুভেন্দু, সেই সঙ্গে দাবি করলেন তৃণমূলের মধ্যেও লুকিয়ে আছেন তাঁর অনুগামীরা।
এদিন নন্দীগ্রামে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের পর সভা করেন শুভেন্দু। সেখানে বলেন, “গতকাল যাঁরা মাননীয়ার সঙ্গে ঘুরছিলেন তাঁর মধ্যে অনেকেই আমফানের টাকা চোর। বাকি যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যেও ভেজাল রয়েছে। আমাকে ফোন করে করে বলছে, দাদা আপনার সঙ্গেই আছি। নইলে হাজরাকাটায়, সুতামোড়ে বাড়িতে থাকতে দেবে না। সামসাবাদে, কাঞ্চননগরে থাকতে দেবে না।”
বুধবার হলদিয়ায় গিয়ে নন্দীগ্রাম আসনের জন্য মনোনয়ন পেশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যখন হলদিয়ায় তখন নন্দীগ্রামে রোড শো করেন শুভেন্দু। তার পর সেই সভা থেকে চড়া সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুভেন্দু বলেন, “আচ্ছা বলুন তো আমফানের পর মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে কি এসেছিলেন? এই যে এতো ক্ষয়ক্ষতি হল, একবারও নন্দীগ্রামের কথা বলেছেন? ভাইপোর ডায়মন্ড হারবারে গিয়েছিলেন উনি।”
নন্দীগ্রামে শহিদ পরিবারদের মধ্যে গরিষ্ঠ অংশকেই শুভেন্দুর সভায় বা তাঁর পাশে দেখা যাচ্ছে। এদিন পুরনো সেই আবেগ উস্কে দিয়ে শুভেন্দু বলেন, নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবারগুলির মধ্যে ৬ জন স্কুল সার্ভিসে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছিল। কেন তাঁদের চাকরি হল না? নন্দীগ্রামের ৩০ হাজার ছেলেমেয়েকে কেন বাইরে গুজরাতে মধ্যপ্রদেশে গিয়ে কাজ করতে হয়?
মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, এখানে কেউ কেউ ৭০-৩০ ভাগ করতে চাইছে। কিন্তু এ কথা বলেও মন্দিরে, মাজারে ঘুরে বেড়ান দিদি। কাল শিবরাত্রির দিনও নন্দীগ্রামের মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালার কথা তাঁর।
এদিন সে প্রসঙ্গে মমতাকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘ভেজাল হিন্দু। পদবিটা ব্যানার্জি হলে নিজেকে হিন্দু বলতে হচ্ছে কেন? এখন উনি আর ইনশাল্লাহ বলছেন না। বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন শুধু হিন্দু ধর্ম বোঝেন। আমার ধর্ম তো মানবতার ধর্ম।’’ আসলে ওনার বিশ্বাসযোগ্যতা চলে গেছে। তাই গতকাল জানকিনাথ মন্দিরে গিয়ে বাসুলি মন্দিরে গিয়ে পুজো দিতে হয়েছে। তাও চটি পরে মন্দিরে ঢুকেছেন! মমতার ‘ভুলে ভরা’ চণ্ডীপাঠ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী।
মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি কর্মিসভা করেন মমতা। বিজেপি-কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলতে আসবেন না।’’ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কি, আমার সঙ্গে হিন্দুত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা করবেন নাকি!’’ কর্মিসভার মঞ্চ থেকে চণ্ডীপাঠও করেন মমতা। বুধবার সেই একই জায়গায় মিছিল করেন শুভেন্দু।
নন্দীগ্রাম বাস স্ট্যান্ডের কাছে দলীয় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের পরে টেঙ্গোয়া মোড় থেকে একটি মিছিল হয়। সেখানে শুভেন্দু দাবি করেন, মঙ্গলবার মমতা স্থানীয় জানকীনাথ মন্দিরে চটি পরে প্রণাম করেছেন। এর পরেই ‘ভেজাল হিন্দু’ বলে আক্রমণ শানান। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও অবদান নেই। এখানকার কোথায় কী আছে তারও কিছুই জানেন না উনি।’’
শুভেন্দুর এই সভার পর আবার বিকেলে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড শো হওয়ার কথা। সেখানে নিশ্চয়ই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের কিছু বলবেন। সব মিলিয়ে বাংলার ভোটের লড়াইয়ের এপিসেন্টার যেন হয়ে উঠেছে নন্দীগ্রাম। ভোট গ্রহণ পর্যন্ত এই উত্তাপ ক্রমশ বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
মননোয়নপত্র পেশ করেই নন্দীগ্রামে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। এদিন রেয়াপাড়ায় শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে রোড শো করে হলদিয়ায় মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মনোনয়নপত্র পেশের পর তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘নন্দীগ্রাম আমার কাছে নতুন নয়। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের শরিক ছিলাম। নন্দীগ্রামের আরেক নাম সংগ্রাম। নন্দীগ্রাম আমায় ভোট দেবে। নন্দীগ্রামের মানুষকে স্যালুট।’ এদিন তৃণমূলনেত্রী আরও বলেন, ‘আমার মনোনয়নে চারজন প্রস্তাবক রয়েছেন। শেখ সুফিয়ান আমার ইলেকশন এজেন্ট।’
উল্লেখ্য, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নজরকাড়া কেন্দ্র নন্দীগ্রাম। এই প্রথম নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার প্রতিপক্ষ তাঁরই একসময়ের বিশ্বস্ত সৈনিক শুভেন্দু অধিকারী। মমতাকে আধ লাখ ভোটে হারাবেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অধুনা বিজেপি-র শুভেন্দু অধিকারী। এই প্রেক্ষিতে মমতা বনাম শুভেন্দু দ্বৈরথ ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এদিন মমতার মনোনয়নপত্র জমা ঘিরে তুমুল উদ্দীপনা ছিল তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। ‘শুভেন্দু হঠাও’ স্লোগানও ওঠে।
নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ায় মমতাকে সেখানকার বহিরাগত বলে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের কর্মিসভা থেকে শুভেন্দুকে নাম না করে মমতার আক্রমণ, ‘আমি বহিরাগত হলে তো মুখ্যমন্ত্রীই হতে পারতাম না।’ আবার তিনি বলেন, ‘তুমি নন্দীগ্রামের লোক, আমি বীরভূমের লোক। তফাৎ শুধু এটুকুই।’
অন্যদিকে, এদিনই নন্দীগ্রামে দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী বলেন, ‘চিটফান্ডের টাকায় ভোটে লড়বেন মাননীয়া, চিটফান্ডের টাকা মেরেছে তিনি।’ বুধবার শুভেন্দুর মুখে ‘হীরক রাজার দেশে’র বিখ্যাত সংলাপের অনুকরণও শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘‘দড়ি ধরে মারো টান, রানি হবে খান খান।’’
তাঁর পাশে তিনি যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চান তাও তিনি বলেছেন। শুভেন্দু এদিন বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি এসে একটা সভা করলে ভালো হয়। বাকি আমি ঘরের ছেলে আছি। হয়ে যাবে।’ শুরু থেকেই তিনি নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থীকে মমতাকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, ‘১৭টা অঞ্চলের মধ্যে দুটো অঞ্চলের নাম বলুন, কোভিডের সময় আপনি কোথায় ছিলেন?’ বুথ ধরে ধরে কোথায় কী করতে হবে সে আলোচনাও করেছেন। বলেছেন,’আমার ভোটের দায়িত্ব আপানাদের। পশ্চিমবঙ্গে এবার পরিবর্তন হচ্ছে বিজেপি আসছে। আমার পোস্টার ছিঁড়েছে। কালি লাগিয়েছে। কয়েকটা বুথ আমাকে দেখে নিতে হবে, আমাদের মহিলারা প্রস্তুত আছেন।’