দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আন্দোলনকারীদের বার্তা দেন মমতা।
সিংঘু বর্ডারে একাধিক কৃষক গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন রাজ্য সভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। ডেরেকের ফোন থেকেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন পাঞ্জাব হরিয়ানার একাধিক কৃষকের সঙ্গে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় আমি ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। আপনারা যে আন্দোলন করছেন তাকে সংহতি জানাচ্ছি। আপনাদের আমি বলব, যতক্ষণ না এই কালা আইন কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাহার করছে, ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যান।” তিনি আরও বলেন, “অত্যাবশকীয় পণ্য আইন নিয়েও আপনারা সরব হোন। এই আইনের ফলে মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে।”
ঘটনাচক্রে ২০০৬ সালে আজকের দিনেই সিঙ্গুর ইস্যুতে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে অনশন শুরু করেছিলেন মমতা। যা চলেছিল ২৬ দিন। দলগত ভাবে আন্দোলনরত কৃষকদের তৃণমূল সমস্ত সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন মমতা। এদিন সিংঘু বর্ডারে একাধিক কৃষক গোষ্ঠীর কাছে গিয়ে দিদির বার্তা পৌঁছে দেন ডেরেক।
কৃষি আইন নিয়ে শুরু থেকেই সরব তৃনমূল। অন্যান্য বিরোধী দলগুলির মতো বাংলার শাসকদলেরও বক্তব্য, কর্পোরেটের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দেশের অন্নদাতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। এর আগে বাংলায় এর বিরুদ্ধে আলে আলে দিবসও পালন করেছিল তৃণমূলের কৃষক সেল।
যদিও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ফোন নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথা আজকাল বাংলার কৃষকরা শোনেন না। তাই পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের ফোন করছেন।” মেদিনীপুরের সাংসদ আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি চালু করতে দেননি বাংলায়। রাজ্যের কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাঁর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।”
কৃষক আন্দোলনের পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে মমতার নির্দেশে দিল্লি–হরিয়ানার সিঙ্ঘু সীমানায় পৌঁছে গেলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। কৃষকদের সঙ্গে চার ঘণ্টা ধরে বৈঠকও করেন ডেরেক। আন্দোলনে সহমর্মিতা জানিয়ে ডেরেকের মাধ্যমে ফোনে আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা।
এদিন বৈঠকের আগে মমতা একটি টুইটে লেখেন, ‘১৪ বছর আগে ৪ ডিসেম্বর ২০০৬ আমি কলকাতায় ২৬ দিন অনশন শুরু করেছিলাম। কৃষিজমি জোর করে ছিনিয়ে না নেওয়ার দাবিতেই ছিল সেই অনশন। কেন্দ্রের কড়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বর্তমানে দেশে কৃষকরা যে আন্দোলন করছেন, তাকে আমি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই বিল পাশ করানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারও একাধিক টুইটে মমতা দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, ‘কৃষকদের জীবন–জীবিকা নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগে রয়েছি। ভারত সরকারের উচিত নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহার করে দেওয়া। এই মুহূর্তে ওই আইন প্রত্যাহার না করা হলে আমরা রাজ্য ও দেশজুড়ে আন্দোলনে নামব। আমরা প্রথম থেকেই এই কৃষক বিরোধী বিলের বিরোধিতা করে আসছি।’
কলকাতায় দলের কার্যালয়ে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করলেন আর এক সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। বললেন, ‘বহুজাতিক সংস্থার কাছে দেশকে বিক্রি করার চক্রান্ত চলছে। নয়া এই আইন যদি কৃষকদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়, তাহলে সর্বতোভাবে বিরোধিতা করা হবে।’