দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের যে সমস্ত কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন, ও প্রবীণরা দলের কাজে নিজেদের শামিল করছেন না, তাঁদের উপস্থিত করে দলের নেতারা দলে ফেরার আহ্বান জানালেন। ‘বাংলার গর্ব মমতা’ এই কর্মসূচিতে বলা হয়েছে দলে যে সমস্ত প্রবীণ ও নিষ্ক্রিয় কর্মী রয়েছেন তাঁদের সংবর্ধনা দিয়ে দলের কাজে ফেরাতে হবে।
অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’। সেই মতো দলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি, শোভনদেব চ্যাটার্জি, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, পূর্ণেন্দু বসু, সুজিত বসু, তাপস রায় নিজের কেন্দ্রে স্বীকৃতি সম্মেলন করেন। সম্মেলনে অনেকেই স্থানীয় নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশান্ত কিশোরের আই প্যাক থেকে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা নেতাদের একটি করে নামের তালিকা ধরিয়ে দেন।
কতজনকে ডাকতে হবে তাও তাঁরা বলে দেন। বেহালা পশ্চিমে পার্থর স্বীকৃতি সম্মেলনে ১৭০ জন কর্মীকে ডাকা হয়। পার্থ বলেন, ‘১৯৯৮ সালে দল তৈরির সময় আপনারা মমতার সঙ্গে ছিলেন। যে কোনও কারণেই হোক আপনাদের ওপর সুবিচার হয়নি। উপেক্ষিত থেকে গেছেন। এর দায় আমি নিচ্ছি। আপনারা দল ভাল বাসেন। তাই দলের বাইরে যাননি।
আর আপনারা উপেক্ষিত হবেন না। আপনারা ফিরে আসুন। আপনাদের যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হবে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরনো কর্মীদের ঘরে ফেরাতে চেয়েছেন।’ পার্থর সামনে কেউ কেউ বেহালা পশ্চিমে ১১টি ওয়ার্ডের কয়েকজন কাউন্সিলরের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ‘আমাদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয় না। ডাকা হয় না। নিজে থেকে আমরা কেন যাব? এর চেয়ে বসে থাকা অনেক ভাল।’
টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস ৪০ জনকে সংবর্ধনা দেন। সংবিধান পাঠ করা হয়। অরূপ বলেন, ‘আপনারা এখন থেকে আরও বেশি গুরুত্ব পাবেন। অতীতের কথা ভুলে যান। সামনে বিরাট লড়াই। আপনাদের এই লড়াইয়ে শামিল হতে হবে। ঘরে বসে থাকার সময় এখন নয়। আপনারা কাজে নেমে পড়ুন।
উন্নয়নের একটি ভিডিও দেখানো হয়। পরে সকলকে মধ্যাহ্ন ভোজে আপ্যায়িত করা হয়। কেউ কেউ বলেন, ‘প্রথম থেকে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলাম। কেন আমাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল তার কারণ আমরা এখনও বুঝতে পারিনি।’ কালীঘাটে জয়হিন্দ ভবনে ফিরহাদ হাকিম কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দলের পুরনো কর্মী। এতদিন বসে ছিলেন। এখন আপনারা কাজে নামুন। আপনাদের কোনও অসুবিধা হবে না। ছিলেন সুব্রত বক্সিও।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চ্যাটার্জি তাঁর রাসবিহারী কেন্দ্রে স্বীকৃতি সম্মেলন করেন। হাজির হয়েছিলেন ৪৫ জন। তাঁদের উদ্দেশে শোভনদেব বলেন, ‘দুঃখ বেদনা নিয়ে আপনারা দূরে সরে গেছেন। এখন থেকে আপনারা পূর্ণ মর্যাদায় কাজ শুরু করতে পারবেন।’
বনগাঁ উত্তর বিধানসভা তৃনমুল কংগ্রেস কমিটির চেয়ারম্যান তথা বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠের উদ্যোগে “বাংলার গর্ব মমতা” কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে পুরনো তৃনমূল কংগ্রেস কর্মীদের নিয়ে ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হলো নীলদর্পন পেক্ষাগৃহে।এই সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বহু প্রাক্তন তৃণমূল কর্মী৷এদিন তাঁরা তাঁদের মনের কথা অকপটে স্বীকার করেন এবং অনেক দিনের ক্ষোভ দুঃখ ও বিগত দিনে দলের হয়ে কাজের কথাও উল্লেখ করেন৷ এদিন প্রাক্তন কর্মীদের আলোচনায় বারবার উঠে আসে প্রয়াত ভূপেন শেঠের নাম এবং তাঁর উল্লিখিত কাজের তালিকা। পাশাপাশি প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠকে জড়িয়ে ধরে অনেক প্রাক্তন কর্মী বলেন,গোপালের জন্য এখনও আমারা অনেকেই দলটা ছাড়িনি, আসলে এখানে শিকড়ের টান আছে,বনগাঁয় আমরা এক সাথে আছি আর থাকব, যারা মনের কষ্টে একটু দূরে ছিল তাঁরাও ফিরছে৷
এদিন গোপাল শেঠ বলেন প্রবীণ কর্মীরা আসলে আমার পিতৃ সমতুল্য তাঁরা দলের পাশে না থাকলে আমি এক পা ও এগোতে পারতাম না৷তাই তাঁদের ফের পাশে পেয়ে আমার মন বল যেমন বাড়ল ঠিক তেমনই বনগাঁর উন্নয়নের জন্য এই প্রবীণ কর্মীরাই ফের হাল ধরবেন এবং নতুন করে বনগাঁকে সাজাবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ ব্লক শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পুরসভার পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য, বনগাঁ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষএবং শহর তৃণমূল মহীলা নেত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য , গোপাল নগর ব্লক সভাপতি সৌমেন দত্ত,অনুষ্ঠান সমন্বয়কারী শ্যামল রায় সহ অন্যান্য নেতা- নেত্রীরা৷