দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি-র ভাল ফল হলে মুকুল রায়ের ছেলে তথা বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় যে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন, সেই ছবিটা স্পষ্টই ছিল। মঙ্গলবার দীনদয়াল মার্গে বিজেপি-র সদর দফতরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন শুভ্রাংশু। সেই সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন বাংলার আরও দুই বিধায়ক। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ও হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়। এ ছাড়াও কাঁচড়াপাড়া, হালিশহর ও নৈহাটির বহু তৃণমূল কাউন্সিলরের এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে হালিশহরের ১৮ জন কাউন্সিলর, নৈহাটির ১৭ জন আর কাঁচড়াপাড়ার ১৪ জন কাউন্সিলর রয়েছেন।
এই দলবদলের ঘটনাকে তৃণমূল অবশ্য প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক ভাবে এঁদের কোনও প্রভাব নিজ নিজ এলাকায় নেই। তবে তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্য কিন্তু তৃণমূলেই ছিলেন। ষোল সালের বিধানসভা ভোটে তিনি কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। এখনও খাতায়কলমে তাই। কিন্তু ষোলোর ভোটের পর তাঁকে ঢাকঢোল পিটিয়ে তৃণমূলে সামিল করা হয়েছিল। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের পতাকা।
বস্তুত, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দিন থেকেই বাংলায় তৃণমূল ও সিপিএম ভাঙানোর খেলায় নেমে পড়েন মুকুলবাবু। একদা তৃণমূলের জন্য এ কাজটা তিনিই করতেন। রাজ্যসভা ভোটে আরএসপি-র বিধায়ককে দিয়ে তৃণমূলের অনুকূলে ভোট করানো হোক বা কংগ্রেসের বিধায়ক ভাঙিয়ে তৃণমূলে আনা-এ সবে তিনি সিদ্ধহস্ত। তখন তার ‘সুফল’ নিয়েছে তৃণমূল। শুধু তা নয়, মুকুল রায়ের থেকে দীক্ষা নিয়ে ষোলোর ভোটের পর পুরসভার পর পুরসভা এ ভাবেই দখল করেছে তৃণমূল। মালদহ, মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদও দখল করে নিয়েছে একই ভাবে। যেখানে তৃণমূলের একজন কাউন্সিলরও ছিলেন না, জেলা পরিষদে তৃণমূলের একজনও নির্বাচিত সদস্য ছিলেন না, সেই পুরসভা ও জেলা পরিষদ রাতারাতি তৃণমূল দখল করে নিয়েছে।
উনিশের ভোটের এখন সেটাই আবার বুমেরাং হয়ে ফিরছে তৃণমূলের দিকে। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে বাংলায় প্রচারে এসেই নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তৃণমূলের অন্তত চল্লিশ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয়-মুকুল রায়রা দাবি করছেন, জুন মাসের মধ্যেই বড় ধস নেমে যাবে তৃণমূলে। তা স্রেফ ফাঁকা আওয়াজ, না তাতে ভিত্তি রয়েছে তা সময় বলবে। আপাতত ঘর থেকেই সেই খেলা শুরু করে দিলেন মুকুল। এবং তা শুরু করলেন নাটকীয় চিত্রনাট্য সাজিয়ে।
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরদিনই বেসুরো গাইতে শুরু করেন শুভ্রাংশু। তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, মুকুল রায়ের ছেলে বলে গর্ব হচ্ছে। বাবা একা গোটা তৃণমূলকে তছনছ করে দিয়েছেন। তার এক ঘণ্টা পরই শুভ্রাংশুকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই ঠিক হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী পদে মোদী আরও একবার শপথ গ্রহণের আগেই শুভ্রাংশু বিজেপি-তে যোগ দেবেন।
মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে ইচ্ছা করেই দল ভাঙানোর খেলায় খুব সক্রিয় হননি তিনি। বরং চেয়েছিলেন তৃণমূলের যে বিধায়করা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাঁরা ভোটের সময় তৃণমূলে থেকেই বিজেপি-র জন্য কাজ করুন। ভোটের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দেবেন।