দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: ইতিমধ্যে ভারতের তিনটি রাজ্যে মোট ২২ জনের শরীরে মিলেছে কোভিডের ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়্যান্টের খোঁজ। আর তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আশঙ্কা, এই ডেল্টা প্লাস থেকেই আসবে কোভিডের ভয়ঙ্কর তৃতীয় ঢেউ। তড়িঘড়ি তাই তিন রাজ্যকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়েছিল ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্ট। তার বিধ্বংসী মেজাজ আপাতত কিছুটা শান্ত হয়েছে। শুধু বহু প্রাণ চলে গেছে এই ভাইরাসের গহ্বরে, বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এরপর এই ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্টই খানিক চরিত্র বদলাচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আর চরিত্র বদলানো এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে ডেল্টা প্লাস।
ভারতে মহারাষ্ট্র, কেরল এবং মধ্যপ্রদেশ- এই তিন রাজ্যে ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্ত করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সংক্রমণ যদি বাকি রাজ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ে তবে তৃতীয় ঢেউ অনিবার্য। আরও অনেক মৃত্যু আসন্ন।
কেন্দ্রের চিঠিতে এই তিন রাজ্যকে ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে সতর্ক হতে বলা হয়েছে। এই স্ট্রেন দ্রুত গতিতেই ছড়িয়ে পড়ে, বহু মানুষ এতে আক্রান্ত হন। ফলে একেবারেই আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না সরকার। তিন রাজ্যে সংক্রমণ রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের কথ বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কনটেনমেন্ট জোন তৈরি করে সতর্কতা দ্বিগুণ করতে হবে রাজ্যগুলিতে। কোভিড টেস্টের সংখ্যাও আরও বাড়াতে হবে।
দেশ জুড়ে অবশ্য টিকাকরণ চলছে। কিন্তু ভাইরাস যেহেতু চরিত্র বদল করছে, তাই কোভিশিল্ড বা কোভ্যাকসিন আদৌ নতুন ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়্যান্টের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে কিনা তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। বিশেষজ্ঞরা এখনও কিছুই পরিষ্কার করে জানাননি।
কোভিডের ডেল্টা প্লাস প্রজাতি থেকে ইতিমধ্যেই তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা এসে লেগেছে ব্রিটেনে। এছাড়া চিন, জাপান, সুইৎজারল্যান্ড, আমেরিকা-সহ আরও ৯টি দেশে এই প্রজাতির খোঁজ মিলেছে। চিকিৎসকদের দাবি, এযাবৎ করোনা রোগীদের যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হচ্ছিল, ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়্যান্টে তা কাছে লাগছে না। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে।
উল্লেখ্য,গত ২১ জুন একদিনে ৮৫ লক্ষেরও বেশি টিকাকরণ হওয়ায় হওয়ার পর আশাবাদী কেন্দ্র। নীতি আয়োগ-এর সদস্য ভিকে পাল মঙ্গলবার বলেন, যদি সমস্ত রকমের কোভিড বিধি মেনে চলা হয় তবে সেক্ষেত্রে তৃতীয় ঢেউ আটকানো সম্ভব। আর সেই সঙ্গে দরকার ভ্যাকসিনেশন। এই দুটি বিষয় মাথায় রেখে চললে কেন আমরা করোনার তৃতীয় ঢেউকে আটকাতে পারব না?
অনেক দেশ আছে যেখানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউই আসেনি। আর আমরা কোভিড বিধি মেনে চললে এই মহামারী কেটে যাবে। এরই সঙ্গে তিনি সমস্ত অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ শুরুর পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের কাজ করতে হবে। আমাদের সামাজিক জীবন বজায় রাখতে হবে, স্কুল-কলেজ, ব্যাবসা চালু করতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির ওপর জোর দিতে হবে। আর সেইসব তখনই সম্ভব যখন ভ্যাকসিনেশনে গতি আসবে।’
এদিন পাশাপাশি তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনই সবচাইতে ভাল সময় ভ্যাকসিন নেওয়ার। ভ্যাকসিনের ভীতি প্রসঙ্গে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অন ইম্যুনাইজেশন ইন ইন্ডিয়া -র চেয়ারপারসন এনকে আরোরা বলেন, ‘জন ভাগীদারী এবং জন জাগরণ ভ্যাকসিনেশনের ভীতি দূর করতে পারে। ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মানুষের হাতেই রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লক্ষ ডোজ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারত প্রতিদিন কমপক্ষে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে টার্গেট করছে।’