পার্থ সারথি নন্দী ,বনগাঁ: মনে পড়ে দৃশ্যটা! গত বুধবার বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস উত্তর ২৪পরগনার মধ্যমগ্রামের নজরুল শতবার্ষিকী সদনের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন বলছিলেন দিদি বনগাঁ শহরের চাকদহ রোডের দু’ধারে শ’য়েশ’য়ে ট্রাক দাঁডিয়ে থাকে দীর্ঘদিন ধরে আর সেইসব দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের কারণে প্রতিনিয়ত যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা ঠিক তখনই বনগাঁর পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ পাশথেকে বলে ওঠেন দিদি আমি কিছু বলব এবং দিদির অনুমতি পেতেই গোপাল বাবু যা বলতে শুরু করলেন …
বহুদিন ধরেই রপ্তানি না হওয়ায় প্রচুর ট্রাক পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছিল। করোনার কারণে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কম হওয়ার পরেই এমন দুর্যোগের মুখ দেখতে হয়েছে ট্রাক মালিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের। তাই বানিজ্যে গতি আনতে পেট্রাপোল সীমান্তে দু’ই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকও করা হয় ।
পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি কম হওয়ায় বনগাঁ শহরে বাড়ছে যানজট। যানজট কাটাতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছিল ভারত – বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে। জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক আমদানী কম করছে বাংলাদেশ। ফলে পেট্রাপোল বন্দর এলাকার বিভিন্ন পার্কিং সহ বনগাঁ শহরে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর ট্রাক দাড়িয়ে থাকছে। ফলে রপ্তানির খরচ বেড়ে সমস্যায় পড়ছে ব্যাবসায়ীরা। এখানে পুরসভার কোন গাফিলতি নেই বরং বাংলাদেশ যাতে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ গাড়ি নেয় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
অর্থাৎ রাস্তায় জানজটের জেরে সমস্যায় পড়ছে সাধারণ যাত্রীরা তার কারণ হিসাবে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্যকে তুলে ধরা হল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সামনে। বিশ্বজিৎ দাস এবং গোপাল শেঠের কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শুনে বনগাঁর মানুষের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন ,তাহল ট্রাক যন্ত্রণা নিয়েই কি চলতে হবে বনগাঁর বাসিন্দাদেরকে! কারণ যানজটের সমস্যা সমাধানের বিষয়টি ওই দিনের আলোচনায় যেমন পরিস্কার হতে দেখাগেল না তেমন এদিকে প্রতি মুহুর্তের এই শহরের যানজটের চিত্রটা হারে হারে বুঝিয়ে দিচ্ছে এখনই মুক্তি নেই যানজট থেকে ৷
শুক্রবারও বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকায় রাখালদাস সেতু থেকে বাটা মোড় হয়ে ১নং রেলগেটপর্যন্ত যশোর রোডে যানজটে নাকালহন নিত্যযাত্রীরা৷ প্রায় তিন ঘন্টা ধরে ভিড়ঠেলে যাতায়াত করেন পথচলতি মানুষ ৷ ট্রাকের পিছনে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে কলকাতাগামী অ্যাম্বুলেন্স৷ বাগদা থেকে বনগাঁয় প্রসূতীডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন কামিনী মল্লিক বাটা মোড়থেকে টোটোতে চেপে বাগদা বাসষ্টান্ড পোঁছতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় দেড়ঘন্টা পথে দূরত্ব ১কিলোমিটারেরও কম৷ এদিন বাগদাগামী বাসে উঠতে গিয়ে কামিনীদেবী দেশের সময়কে বলেন ” ট্রাক আতঙ্কের নাম বনগাঁ” ৷
এদিনের যানজট নিয়ে পুরপ্রশাসককে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,শুক্রবারে পণ্যবোঝাই ট্রাক পেট্রাপোলে যায়না ,তবে একটি ট্রাক রাখালদাস সেতুতে খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্য কিছু সময় যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল পরবর্তীতে ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়৷
বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন শুধু বাগদা নয় বনগাঁর মানুষের মনে ট্রাক আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে যা দ্রুত দূর করতে হবে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায়৷ বাংলাদেশ কী করবে কবে করবে তাদের উপড়ে ভরসা করে এই বাংলার মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবেনা৷ বিষটি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছি তিনি নিশ্চই এই সমস্যার সমাধান করবেন বলে আমার দৃঢ বিশ্বাস৷
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, সম্প্রতি দু’দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা ৷ এবার সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপও নিয়েছে দু-দেশের প্রশাসনিক কর্তারা। গত মঙ্গলবার পেট্রাপোল- বেনাপোল বন্দরের জিরো পয়েন্টে বৈঠক হয় ভারত বাংলাদেশের প্রশাষনিক কর্তা ও ব্যাবসায়িক প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে৷ সেখানে দু দেশের প্রতিনিধিরা এক মত হয়েছেন এবং দিনে যাতে ৬০০-৭০০ ট্রাক পেট্রাপোল সীমান্তের স্থল বন্দর থেকে বেনাপোল স্থল বন্দরে প্রবেশ করে তা দেখা হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার ৪৫০ টি ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকেছে আগামমীদিনে আরও বেশি ট্রাক যাবেবলে আশাবাদী দু’ দেশের উদ্ধর্তন বতৃপক্ষ৷
এ বিষযে গোপাল শেঠবলেন , মঙ্গলবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশ দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ গাড়ী নেবে। আগামী ১০ -১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আমদানি কম করার ফলে বনগাঁ শহরের যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেই কারণেই বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৬০০ থেকে ৭০০ ট্রাক আমদানি করার আহ্বান জানিয়েছি বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে বাংলাদেশের তরফ থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। এখন দেখার দুই দেশের এই বাণিজ্যিক বন্ধুত্ব আবারো আগের অবস্থায় কিভাবে ফিরে আসবে এবং বাণিজ্যের দিক থেকে কতটাই বা সাফল্যের হাসি হাসবে দুই দেশ তার অপেক্ষা যেমন করছে সমসীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যাবসায়ী মহল অন্যদিকে ট্রাক আতঙ্ক কাটিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যানজট মুক্ত শহর বনগাঁকে দেখার অপেক্ষায় দিন গুনছেন৷