পার্থ সারথি নন্দী,বনগাঁ,দেশের সময়: পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধূলো দিয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ বনগাঁ শহরের মধ্যে ছুটে এলো ওভার লোডিং পণ্য-বোঝাই ট্রাক। শহরের যশোর রোডে মতিগঞ্জ এলাকায় সেই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে, কেড়েনিয়েছে পথচারী এক মহিলার প্রাণ। গুরুতর জখম হয়েছে শিশু-সহ অন্তত ১৪ জন। ভেঙে তছনছ হয়েছে টোটো সহ পথচারীর সাইকেল।
এই ঘটনায় ট্রাক-সহ খালাসিকে আটক করেছে পুলিশ। চালক পলাতক।পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সন্ধ্যা সরকার (৪৬)। স্বামীর সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন তিনি। ট্রাক ধাক্কা মারে।গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে ও একটি শিশুকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে শুক্রবার রাতে বনগাঁ শক্তিগড়ের বাসিন্দা সন্ধ্যা সরকারের মৃত্যু হয়৷ বাকিদেরকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হয়।
এ দিনের ট্রাকের এই তান্ডবের ঘটনায় জোড়ালো প্রশ্ন উঠেছে, দিনের বেলায় শহরের ব্যস্ত রাস্তায় পণ্য-বোঝাই,তার উপরে ওভার লোডিং ট্রাক চলবে কেন? স্থানীয়বাসিন্দাদের বক্তব্য, শহরের মধ্যে রাস্তাঘাট খুবই সংকীর্ণ।পাশাপাশি দুজন একসাথে পথ চলা দায়, তার উপরে টোটো, ভ্যান, অটোর দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে হচ্ছে। এসবের মধ্যে ট্রাকের বেপারোয়া যাতায়াতে পথেঘাটে আতঙ্কে থাকতে হয় সারাক্ষন। যানজট তো নিত্যদিনের চিত্র, হুহু করে বাড়ছে দুর্ঘটনা। অতীতেও শহরের মধ্যে দিনের বেলায় ট্রাকের ধাক্কায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব দেখেও কেন যে হুঁশ ফেরেনি পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভার সেটাই এখন লাখটাকার প্রশ্ন!
এই দুর্ঘটনার পরে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতেও দিনের বেলায় শহরে ট্রাক যাতায়াত বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। বিশেষ করে স্কুল ও অফিস শুরু ও শেষের সময়ে ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হোক বলে দাবি উঠেছে।
কী ভাবে ঘটল এ দিনের দুর্ঘটনা? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাথরের কুচি নিয়ে ট্রাকটি আসছিল বাটামোড় হয়ে যশোর রোড ধরে। বনগাঁ শহরের রাখাল দাস সেতু পেরনোর পরেই ট্রাক চালক নিয়ন্ত্রণ হারায়। প্রথমে একটি সাইকেলে ধাক্কা মারে। এরপরে দু’টি টোটোতে ধাক্কা মারে।
মতিগঞ্জ এলাকায় যশোর রোডের পাশে ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। ট্রাকের ধাক্কায় আবক্ষ মূর্তিটি ভেঙে গিয়েছে। সড়কে একটি বাঁশের তোরণ ছিল। সেটিতেও ট্রাকটি ধাক্কা মারে।
বিশ্বজিৎ কুন্ডু নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘‘রাস্তাদিয়ে যাচ্ছিলাম,মতিগঞ্জ মোড় পারহোতেই দেখি, ট্রাকটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পথচারীদেরকে ধাক্কা মারতে মারতে এগিয়ে আসছে। আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করেন স্থানীয় মানুষ অনেকে ছিঁটকে পড়েন রাস্তার উপরেই। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। ভয়ঙ্কর ঘটনা দৃশ্য দেখলাম, চোখের সামনে মৃত্যুকে দেখলাম।’’
এ দিনের দুর্ঘটনার পরে অবশ্য পুলিশ-প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। দিনের বেলা ট্রাক বা ওভার লোডিং ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে রাতেই পুলিশ-প্রশাসন, পুরসভা, পরিবহণ দফতরের কর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার জানান, ‘‘দিনের বেলা শহরের মধ্যে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’স্থানীয়বাসীন্দাদের অভিযোগ, বনগাঁ আলাদা পুলিশ জেলা হয়েছে। এখানে ডিএসপি ট্রাফিক, ট্রাফিক ওসি রয়েছেন। পরিকাঠামো বেড়েছে। তারপরেও কেন বেআইনি যানবাহন এবং দিনের বেলায় ট্রাক চলবে।
দুর্ঘটনার কথা শুনেই বনগাঁ পুরোপ্রধান শঙ্কর আঢ্য এবং প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ঘটনা স্থল থেকে বনগাঁ হাসপাতালে ছুটে যান এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন বলে তাঁরা জানান৷
পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে শহরের মধ্যে যশোর রোড চওড়া করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। কেন্দ্র এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। তা হলে কেন রাস্তা চওড়া হবে না?’’শনিবার দুপুরে শহরের ট্রাক মালিক সহ বিভিন্ন এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সাথে বৈঠক করা হবে কিভাবে বনগাঁ শহর কে দুর্ঘটনামুক্ত করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, সে সব অনেক বড় ব্যাপার অনেক সময়ের ব্যাপার৷ তার আগে দিনের কর্মব্যস্ত সময়ে শহরের রাস্তায় ওভার লোডিং এবং বেআইনি ভারী গাড়ি তো আগে নিয়ন্ত্রণ করুক পুরসভা!
অতীতে বনগাঁ শহরে দিনের বেলায় ট্রাক দুর্ঘটনার পরে শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। দিনের বেলা ট্রাক চলাচলের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিল প্রশাসন। অভিযোগ, সে সব নিয়ম শুধুই খাতায়-কলমে। আদতে কেউ মানে না। কোনও নজরদারিও নেই।ট্রাকের শহর বনগাঁয় মৃত্যুমিছিল বন্ধ হোক এটাই আসল দাবি।