দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: একুশের ভোটযুদ্ধে ‘আসল পরিবর্তন’ আসবে বলে সোচ্চার হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘সোনার বাংলা’ গড়তে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। সেই লক্ষ্যপূরণে বাংলায় মোদীর ঘনঘন সফর নজর কেড়েছে। আগামী রবিবারই ব্রিগেড সভা মোদীর। তবে শুধু ব্রিগেডই নয়, ভোটের বাংলায় ২০টি সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । বাংলায় বিজেপি নেতাদের দাবি পূরণ করেই রাজ্যে ২০টি সভা করছেন মোদী, এমনটাই জানা যাচ্ছে।
সূত্রের খবর, এমনভাবে সভার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে ২৩টি জেলাতেই যেতে পারেন নমো। ভোটমুখী রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর সভার চাহিদা রয়েছে। তবে এবার পশ্চিমবঙ্গ ও অসমকেই পাখির চোখ করা হচ্ছে। বাংলায় ২০টি সভার পাশাপাশি অসমেও ছ’টি সভা করবেন মোদী।
অন্যদিকে, বামেদের ব্রিগেডের এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেখানেই মোদীর সভা রবিবার। এদিন ব্রিগেড পরিদর্শনে আসেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, স্বপন দাশগুপ্তরা। মোদীর ব্রিগেডকে ‘ঐতিহাসিক’ করার ডাক দিয়েছে পদ্মশিবির। এদিকে, ভোটের রণকৌশল নিয়ে বুধবার বৈঠকে বসছে বিজেপি। কোর কমিটির বৈঠকে থাকবেন অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা। ভোটের রণকৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি প্রার্থীতালিকা নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে খবর। সোমবারই ভূপেন্দ্র যাদবের উপস্থিতিতে কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে বৈঠকে বসে গেরুয়াশিবির। সেখানেও প্রার্থীতালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর।
মোদীর সভা ঘিরে মহিলা মোর্চার নজরকাড়া উৎসাহ:
মহিলা মোর্চার ব্রিগেড যাওয়ার হিড়িক সামলাতে কালঘাম ছুটল বিজেপির। তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠক ডেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিল মহিলা মোর্চার জেলা কমিটি।
‘পায়ে পায়ে উড়িয়ে ধুলো মহিলা মোর্চা ব্রিগেড চলো’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। জলপাইগুড়ি জেলার ৩৩ টি মণ্ডলের মহিলা নেত্রীদের টার্গেট দেওয়া হয়েছিল বুথ প্রতি ২০ জন করে মহিলা বিজেপি কর্মীকে এবারের ব্রিগেডে নিয়ে যেতে হবে। এই নির্দেশ বুথ স্তরে পৌঁছে যেতেই বুথের মহিলা সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের উৎসাহ এমন যায়গায় পৌঁছে গেছে যে দেখা যাচ্ছে বুথ প্রতি গড়ে ২৫ জন করে মহিলা সদস্য ব্রিগেড যাবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন।
বিজেপির জলপাইগুড়ি সাংগঠনিক জেলায় বুথের সংখ্যা ২০০৮ টি। যদি প্রতি বুথ থেকে গড়ে ২৫ জন করে মহিলা যায় তবে সেই ক্ষেত্রে শুধু জলপাইগুড়ি জেলা থেকে যাবেন ৫০ হাজারের বেশি মহিলা কর্মী। এত মহিলাকে কীভাবে সেদিন নিয়ে যাওয় হবে, তাঁদের থাকা খাওয়া সহ অন্যান্য ম্যানেজমেন্ট কী ভাবে দেওয়া হবে তা নিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা নিয়ে জেলার ৩৩ টি মণ্ডলের বাছাই করা নেত্রীদের নিয়ে বৈঠক করে বিজেপির মহিলা মোর্চার জেলা কমিটি।
ঠিক হয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলা থেকে যাবে দুটি ট্রেন। যেই ট্রেনের ভাড়া দেবে বিজেপি। প্রত্যেক বুথ থেকে যাঁরা যাবেন তাঁদের সবার নাম, ঠিকানা, ছবি ও মোবাইল নম্বর বুথ নেতৃত্বের কাছে দিতে হবে। দুটি ট্রেনে খুব বেশি হলে হাজার পাঁচেক মানুষ যাবেন। বাকিদের যাতায়াত, থাকা খাওয়া নিজ দায়িত্বে করতে হবে। ট্রেনে বা বাসে যাতায়াতের সুবিধার জন্য গেরুয়া বা সাদা রঙের চুড়িদার পরে যেতে হবে। যাতে চিনতে সুবিধা হয়। ব্রিগেড ময়দানে জনসভায় যেতে শাড়ি পড়তে হবে। যার রঙ হতে হবে গেরুয়া অথবা লাল পাড় সাদা শাড়ি।
বিজেপি মহিলা মোর্চার জলপাইগুড়ি সভাপতি টিনা গাঙ্গুলি বলেন, “আমাদের মহিলা সদস্যদের মধ্যে ব্রিগেড চলো নিয়ে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে দেখে আমরা আজ জরুরি বৈঠক করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরাও দেখিয়ে দিতে চাই মহিলারা পুরুষদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। আমরা জলপাইগুড়ি জেলা থেকে অন্তত ৫০ হাজার মহিলা মোর্চার সদস্যদের ব্রিগেডে নিয়ে যাব।”
উল্লেখ্য, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় মূলত দুই প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি। ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ এনে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ডাক দিয়েছেন মোদী-শাহরা। অন্যদিকে, একুশে বাংলার কুর্সি ধরে রাখতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। বাংলা দখলের লড়াইয়ে ভোটের আগে প্রায়ই বঙ্গ সফরে আসছেন মোদী-শাহ-নাড্ডারা। এ নিয়ে ‘বহিরাগত’ শব্দ প্রয়োগ করে আক্রমণ শানাচ্ছে বাংলার শাসকদল। ‘বহিরাগত’ তকমা নিয়ে ভোটমুখী বাংলায় সরগরম রাজনীতি। এই আবহে বাংলাজুড়ে মোদীর ২০টি সভা করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ।