জামাই ষষ্ঠী’, বাঙালির এই পর্বের সাথে শ্বাশুড়ী জামাই এর এমন এক মিষ্টি সম্পর্ক জড়িয়ে আছে যা আপামর বাঙালি জামাইয়ের ভোজনবিলাসিতা সম্পন্ন করে; সে যতই আজকের আইটি ইঞ্জিনিয়ার হোক অথবা এন আর আই৷শ্বশুরবাড়ির জামাই আদর সব জামাই এর কাছেই বেশ প্রিয়৷ বাঙালির বনেদিয়ানা আর ভোজনরসিকতা এই জামাই ষষ্ঠীকে ঘিরে বিশেষ ভাবেই জড়িয়ে আছে৷
এক সময় বনেদি বাঙালি পরিবারে এই জামাই ষষ্ঠীর দিন বাড়ির জামাইদের বিশেষভাবে আপ্যায়নের এক রীতি ছিল যা আজ প্রায় ফিকে হয়ে গেছে৷ বছরের অন্যান্য দিনের অতিথি আপ্যায়নের এর সাথে তুলনা হতো না৷ যেখানে জামাইয়ের এই বিশেষ আপ্যায়ন শুরু হতো আমপোরা শরবত দিয়ে।দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের শুরুতে থাকতো শুক্ত, পোস্ত আর কুচো বাদাম ভাজা দিয়ে নোটে শাক ভাজা, মুড়িঘন্ট, পোস্ত দিয়ে আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, পার্শে অথবা তোপসে মাছ ভাজা, চিংড়ির মালাইকারি, রুই মাছের কালিয়া, ভাপা ইলিশ, বাসন্তী পোলাও, পাঁঠার মাংস, খেজুর আমসত্বের চাটনি৷এসবই আজ স্মৃতির পাতায়৷
সেই স্মৃতি নিয়েই এবারের দেশের রান্নাঘর এর পাতা সাজানো হলো জামাই আদরের মেনু দিয়ে একটু অন্যভাবে।
ডাবের শরবত:
১. ডাবের জল ২ গ্লাস
২. নারকেলের দুধ ২ গ্লাস
৩. চিনি ৩ টেবিল চামচ
৪. ডাবের এসেন্স ১ ফোঁটা
৫. কুচোনো বাদাম ২ টেবিল চামচ
একটা বড় কানা উঁচু পাত্রে ডাবের জল, নারকেলের দুধ, চিনি এবং এসেন্স একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে, কাঁচের গ্লাসে ঢেলে ওপর থেকে কুচোনো বাদাম ছড়িয়ে ঠান্ডা অবস্থায় সার্ভ করতে হবে৷
ঝিঙের ঘন্ট: ঝিঙে কুচিয়ে ও নারকোল কুরে রাখতে হবে৷ কড়াইতে ঘি দিয়ে কাঁচা লঙ্কা ও জিরে ফোড়ন দিতে হবে৷এরপর ঝিঙে ছেড়ে অল্প লঙ্কা, ধোনে ও জিরে বাটা দিয়ে বেশ ভাজা ভাজা করতে হবে৷ নুন দিলে ঝিঙের যে জল বেরোয় তাতেই ঝিঙে সিদ্ধ হয়ে যাবে, এরপর কাঁচা লঙ্কা ও সামান্য চিনি দিতে হবে, ঝিঙে নরম হয়ে এলে নারকেল কোৱা দিয়ে ভাজতে হবে, জল শুকিয়ে শুকনো করে নামাতে হবে।
মোচার পাতুরি: মোচা কুচিয়ে তেঁতুল জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষন পর তেঁতুল জল থেকে মোচা তুলে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে; মোচা সিদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে চটকে নিতে হবে, এরসাথে নারকেল কোৱা, সর্ষেবাটা, লঙ্কা বাটা, নুন ও তেল দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে৷এই মাখা মোচা টুকরো করে কাটা কলাপাতায় দিয়ে মুড়ে সুতো দিয়ে ভালো করে বেঁধে নিতে হবে৷তাওয়া গরম করে নরম আঁচে মোচাবাঁধা অল্প তেল দিয়ে ভালো করে সেঁকে নিতে হবে।
ভেটকি মাছের মৈলু: ভেটকি মাছ, পিয়াঁজ কুচি , রসুন কুচি, কাঁচালঙ্কা, শুকনো লঙ্কা, নুন, হলুদ, ভিনিগার, জল, নারকেলের দুধ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর কড়াইতে ঘি গরম করে এই মিশ্রণ ঢেলে চাপা দিতে হবে, জল মরে ঘন হয়ে এলে নামাতে হবে৷
মাছ দিয়ে ভাত বেক : আতপ চালের ভাত ঝরঝরে করে থালায় ছড়িয়ে নিতে হবে।কাঁটা ছাড়া মাথাপিছু একটা করে মাছ ভালো ভাবে ভেজে নিতে হবে৷একটা বেকিং ডিশে ঘি মাখিয়ে প্রথমে গোল করে কাটা পিয়াঁজ, গোল করে কাটা সিদ্ধ আলু, ভাজা মাছ ও ভাত দিয়ে একবার বেক করে নিতে হবে৷ এই একই ভাবে আবার সমস্ত উপকরন আবার এরপর দিয়ে দ্বিতীয়বার বেক করতে হবে। মিনিট দশেক পরে নামিয়ে নিতে হবে৷ এরমধ্যে চীজ, চিংড়িমাছ ভাজা, মেটের টুকরো ভাজাও দেয়া চলে।
মাদ্রাজি কারি: কড়াইতে তেল দিয়ে হলুদ, লঙ্কা, ধনে, জিরে, পোস্ত ও নারকেল বাটা দিয়ে ভালো করে কোষে নিতে হবে। এরপর পাঁঠার মাংস দিয়ে পরিমান মতো নুন ও চিনি দিতে হবে৷ জল শুকিয়ে এলে সামান্য তেঁতুল সিদ্ধ জল দিতে হবে।একটু নাড়াচাড়া করে জল দিতে হবে, ফুটে উঠলে দমে বসিয়ে মাংস সিদ্ধ করে নিতে হবে৷ ঝোল ঘন হয়ে এলে কারিপাতা দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এই রান্নায় নারকেল করার পরিমান একটু বেশি লাগে৷
মটনের সফেদ কোর্মা – মাংসে দই ও আদা বাটা মাখিয়ে রাখতে হবে।কড়াইতে ঘি গরম করে গরম মশলা ফোড়ন দিয়ে পিয়াঁজ কুচি ও রসুন বাটা দিয়ে হালকা ভাজতে হবে, এরপর দই মাখা মাংস দিয়ে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ভালো করে কষে মাংস দমে দিতে হবে৷ মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে ঘন দুধ মিশিয়ে নামাতে হবে।