দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার রাতভর বৃষ্টিতে ডুবে গেল কলকাতা, একই ছবি শহরতলি জুড়ে, জারি আছে বর্ষার দাপট । আবহাওয়ার বিশেষ কোন উন্নতির আপাতত কোনও লক্ষণ নেই বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
রাতভর ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন কলকাতা-সহ শহরতলি। কার্যত সমগ্র দক্ষিণবঙ্গেই এই অবস্থা। ক্যালেন্ডারের হিসেবে জ্যৈষ্ঠ মাস শেষের মাথায়, আষাঢ়ের দিন দুয়েক আগেই বর্ষা ঢুকে পড়েছে বাংলায়। গত দুদিন ধরেই দফায় দফায় ভাসছে রাজ্যের নানা প্রান্ত। কিন্তু বুধবার রাতের বৃষ্টি যেন সমস্ত সীমা পার করে দিয়েছে। জলে ডুবে গেছে বহু এলাকা। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেকাংশে জল জমে গিয়েছে৷
আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার তাপমাত্রা থাকতে পারে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ২৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ। বুধবার রাজ্যে বৃষ্টি হয়েছে মোট ১৪৪.৫ মিলিমিটার।
আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আকাশ সারাদিন মেঘলাই থাকবে। বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া, পুরুলিয়াও ভাসবে। বৃষ্টি বাড়বে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ-সহ বাংলাদেশ লাগোয়া জেলাগুলিতে।
বজ্রবিদ্যুৎসহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরবঙ্গের সবকটি জেলায়। সবমিলিয়ে আবহাওয়া দফতরের কথা অনুযায়ী বাংলায় বর্ষার দাপট শুরু হয়ে গেল বলে ধরেই নেওয়া যায়৷
বুধবার রাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির জলে ভাসছে কলকাতা উত্তর থেকে দক্ষিণ। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, ঠনঠনিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিটে জল জমে যায়। জলবন্দি সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কিছু অংশও।
সারা রাতের বৃষ্টিতে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া গন্ধেশ্বরী নদীর জলে রাস্তা ছাপিয়ে যায় । চরম ভোগান্তিতে পড়েন বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের শতাধিক স্থানীয়বাসিন্দারা। দ্বারকেশ্বর নদীর জলে ডুবে গেছে বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন মিনাপুর থেকে বাসি যাওয়ার রাস্তা।
টানা ২৪ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকাও। আদ্রার বেনিয়াশোল জলমগ্ন। একই ছবি রঘুনাথপুরের ১, ৮, ১৩-সহ মোট ৪টি ওয়ার্ডের। এছাড়া রঘুনাথপুর ১ নম্বর ও সাতুরি ব্লকের একাধিক সেতুর উপর দিয়ে জল যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে খবর। এ ছাড়া রঘুনাথপুর ২ নম্বর ব্লকের চেলিয়ামা থেকে রঘুনাথপুর যাওয়ার রাস্তায় একাধিক সেতুর উপর জল উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানাগিয়েছে৷ বেশ কয়েকটি বাঁশের সেতুও ভেঙে পড়েছে।
হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ব্যান্ডেলের মিলিটারি কলোনি এলাকায় জল জমে যাওয়ার জন্য বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অন্যদিকে দুর্গাপুর ও রঘুনাথগঞ্জেও জলমগ্ন রাস্তা। কোথাও কোথাও দোকানঘরেও ঢুকেছে জল। একাধিক রাস্তায় এক কোমর পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে যায়। জল ঠেলে যাতায়াত করতে হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা।
শহর কলকাতাতেও জল-যন্ত্রণার একইচিত্র । রাস্তাঘাট জলমগ্ন। বহু এলাকায় বাড়ির ভিতরে জমে গেছে জল। যানবাহন প্রায় নেই বললেই চলে। একেই লকডাউনের জেরে যানবাহনে ঘাটতি ছিল, তারই মধ্যে অফিসকাছারি খুলে যাওয়ায় যাতায়াত নিয়ে বিপদে পড়েছিলেন বহু মানুষ। তার উপরে আজকের এই বৃষ্টি যেন গোটা পরিস্থিতিকে আরও বড় সমস্যায় ফেলে দিল।