জনতার স্বতঃস্ফূর্ত কার্ফু চলছে দেশ জুড়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চেনা ব্যস্ততার ছবি উধাও

0
616

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা সংক্রমণ আটকাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সারা দিয়ে আজ, রবিবার সকাল ৭টা থেকেই দেশ জুড়ে জনতা কার্ফু শুরু হয়ে গিয়েছে।পশ্চিমবঙ্গ মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, গুজরাত, রাজস্থান— সমস্ত রাজ্যেই সকাল থেকে রাস্তাঘাট একেবারে শুনশান।

গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ওড়িশার মতো রাজ্যে লক ডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকারগুলি। করোনাভাইরাসে এখনও পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৫, মৃত্যু হয়েছে চার জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩ জন। করোনা রুখতে প্রধানমন্ত্রী তাই এই এক দিন দেশবাসীকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি থাকার আবেদন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।রবিবার জনতা কার্ফু শুরুর আগে সকালেই প্রধানমন্ত্রী টুইট করেন

সারা দেশ জুড়ে আর কোথায় কী ঘটল দেখে নিন:

শুক্রবার মধ্যপ্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম রোগীর সন্ধান মেলে। জব্বলপুরে একই দিনে চারজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মেলে। আর শনিবার থেকেই মধ্যপ্রদেশ সরকার জব্বলপুর-সহ চারটি শহরে লক ডাউন ঘোষণা করে। আজ পুরো রাজ্য জুড়েই কার্ফু পালন করছেন জনতা।

সমস্ত রাজ্যের মুখ্য সচিবদের কাছে নির্দেশ পৌঁছেছে, যাতে দমকল, পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স বিকাল পাঁচটায় সাইরেন বা ঘণ্টা বাজিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে নিরন্তর কাজ করে চলা মানুষদের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানায়।

জরুরি পরিষেবায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া সারা দেশ জুড়েই সমস্ত দোকান-বাজার বন্ধ থাকবে দিনভর।

৯ বছরে এই প্রথম বেঙ্গালুরু জুড়ে মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ। জনশূন্য বারাণসী ঘাটও।

কোয়মবত্তুরের গাঁধীপূরম ফ্লাইওভার, নভি মুম্বইয়ের সিয়ন প্যানভেল হাইওয়ে, রাঁচি রেলওয়ে স্টেশন, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ সর্বত্রই একই চিত্র।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা সকলের উদ্দেশে টুইট করেন, ‘কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে লড়তে হবে। মানুষের দ্বারা এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য জনতা কার্ফু খুবই বড় পদক্ষেপ।’

জনতা কার্ফু: কলকাতা সহ জেলায় জেলায় ব্যাপক সাড়া, শুনশান রাস্তা, ফাঁকা বাস-ট্রেন, দেখুন ছবি:

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা জনতা কার্ফুতে সাড়া মিলল কলকাতাতেও। সকাল থেকেই শহরের রাস্তাঘাট কার্যত জনশূন্য। গাড়ি ঘোড়াও তেমন চলাচল করছে না। উত্তর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছবিটা সব জায়গাতেই এক।

এদিন সকাল থেকেই দেখা গেল রাস্তাঘাট প্রায় শুনশান। কিছু ট্যাক্সি ও বাস ছাড়া যানবাহনের দেখা নেই বললেই চলে। অবশ্য কিছু প্রাইভেট গাড়ি রাস্তায় চলছে। তাও হাতে গোনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মুদির দোকান, সব্জি বাজার থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের দোকান সব বন্ধ। কেবলমাত্র কিছু ওষুধের দোকান খোলা রয়েছে। সীমান্ত শহর বনগাঁতেও একই চিত্র। নীচে রইল ছবি:

খোলা আছে বনগাঁ পুরসভার স্বাস্থ্যদীপ পরিষেবা কেন্দ্র৷

ছবি- পার্থ সারথি নন্দী, রতন সিনহা।
রাস্তায় যে অল্পসংখ্যক বাস চলছে, তাতেও যাত্রী নেই বললেই চলে। একই ছবি ট্রেনেরও। মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন তো বন্ধই। লোকাল ট্রেনেও লোক নেই। মেট্রোর ক্ষেত্রেও ছবিটা একই। শহরের সব বড় বড় বাজার খাঁ খাঁ করছে। ক্রেতা-বেক্রেতা কেউ নেই। উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলি জুড়ে ছবিটা একই। এমনকি যে শিয়ালদহ স্টেশনে রাত-দিন সবসময় ভিড় থাকে, সেখানেও রবিবার সকাল থেকে লোক অনেক কম। স্টেশনের বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও প্রায় ফাঁকা।

রবিবার এমনিতেই ছুটির দিন হওয়ায় অফিসে যাওয়ার ভিড়টা থাকে না। কিন্তু ছুটির দিনে পরিবারের সঙ্গে সিনেমা হল, শপিং মল কিংবা রেস্তোরাঁতে যাওয়ার ভিড় থাকে। করোনা আতঙ্কে আপাতত সিনেমা হল, মাল্টিপ্লেক্স, জিম, অডিটোরিয়াম, রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। একাধিক শপিং মলও বন্ধ থাকার কথা আজ। ফলে আম জনতা এদিন ঘরে থাকার কথা মনস্থ করেছে। সেই ছবিই দেখা যাচ্ছে শহর জুড়ে।
পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪। তার মধ্যে দু’জন কলকাতার, একজন হাবরা ও একজন দমদমের বাসিন্দা। কলকাতার দুই তরুণ ও হাবরার ছাত্রী বিদেশ থেকে আসার পরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়লে দমদমের ব্যক্তি সাম্প্রতিক সময়ে কোথাও বেড়াতে যাননি। তাই তাঁর শরীরে এই ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যাওয়ায় কিছুটা চিন্তিত প্রশাসন। হিসেব মতো দমদমের ব্যক্তিই রাজ্যে থাকা প্রথম করোনা আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকারও। মোদীর মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আর্জি জানিয়েছেন, দরকার ছাড়া বাড়ির বাইরে না বেরতে। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে রবিবারের জনতা কার্ফু কিন্তু ভালই সাড়া ফেলল শহরে।

পেট্রা সীমান্তে বন্ধ বাণিজ্য সহ যাত্রী পরিবহণ।

Previous articleপ্রধানমন্ত্রীর বিনীত আর্জি: ‘যে যেখানে আছেন, সেখানেই কয়েক দিন থেকে যান!
Next articleকরোনা সতর্কতা: ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ মেট্রো সহ সমস্ত যাত্রিবাহী ট্রেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here