অর্পিতা দে ,কলকাতা:
বৃষ্টি ভেজা সকালে ঘুম চোখে এক চিলতে সবুজের স্পর্শ যেন স্নিগ্ধতা এনে দেয় আমাদের মনে৷ কিংবা ভোরের আলতো রোদে রঙিন ফুলে ঘেরা এক চিলতে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিই হয়ে উঠতে পারে আমাদের সারাদিনের কাজের ইন্সপিরেশন৷ তাই হোকনা ঘরের পাশে একচিলতে বারান্দা তাকেই সাজিয়ে ফেলা যায় প্রকৃতির রঙে৷
ফ্ল্যাট অথবা বাড়ির বারান্দা যদি পূর্ব দিক খোলা হয় তাহলে তা বাগানের জন্য আদর্শ৷ ছোট বারান্দার ক্ষেত্রে দুই – তিন ফুট উচ্চতার ফুলের গাছই লাগানো ভালো, সেক্ষেত্রে টবের সাইজ হবে সাত থেকে দশ ইঞ্চি মাপের বাজারে এখন বিভিন্ন আকৃতির ডোকরা, টেরাকোটার, পট চিত্রের নকশা করা টব কিনতে পাওয়া যায়, একটা সামঞ্জস্য বজায় রেখে পছন্দ মত কিনে ফেললেই হলো৷
গ্রীষ্ম পেরিয়ে এখন বর্ষা নেমে গেছে, তাই এইসময় বাগান করলে জুঁই অথবা বেল ফুলের ওপর ভরসা না করাই ভালো, কেননা এইসব গাছে গরমকালেই বেশি ফুল হয়; তাই বর্ষায় গাছ লাগালে রঙ্গন বিভিন্ন রঙের লাল, হলুদ অথবা সাদা, পেন্টারস, পাউডার পাফ, টিকোমা গৌরি চৌরি, টিপু প্লেরোমা ম্যাকরন্কা, টিপু চায়না, এলামুন্ডা, টগর, অপরাজিতা, করবী, গন্ধরাজ যেকোনো বারান্দারই শোভাবর্ধক৷ তবে যে কোনো গাছই একে অপরের থেকে দুই-তিন ফুট দূরত্বে রাখতে হবে৷ কালিম্পং জারবেরা, লিলি এগুলোয় বারোমাস ফুল হয়; তবে এইসব গাছের টব হবে ছয় থেকে সাত ইঞ্চির মধ্যে৷
বিভিন্ন ধরনের অর্কিডও একফালি বারান্দায় অন্য মাত্রা এনে দেয়৷ নানান ধরনের ইন্ডিয়ান অর্কিড, দার্জিলিং, কালিম্পং, অসম এইসব পার্বত্য অঞ্চলের অর্কিড এখন আমাদের এখানেও পাওয়া যায় ।
ডেনড্রবিয়াম প্রজাতির ফরমসাম, মার্লিন, থ্রায়সিফ্লোরাম, পিরাইডি এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যাটেলিয়া প্রজাতির অর্কিড বাড়িতে রাখা যেতে পারে।
বারান্দার ওপরে ফাইবারের হালকা ছোট্ট টবে ঝোলানো যেতে পারে বিভিন্ন জাতের মানিপ্ল্যান্ট, ফার্ন, বেস ফার্ন, স্টিক ফার্ন, হলুদ অথবা অন্য রঙের ল্যান্টানা, পিরেনিয়াল ভারবেনা, ট্র্যাডিসক্রানটিয়া; এছাড়াও বেশকিছু সিজন ফ্লাওয়ারও এভাবে ঝুলিয়ে রাখা যায়৷
বারান্দার রেলিং অথবা গ্রিলে লাগানো যেতে পারে লতানে জুঁই, মাধবীলতা, ঝুমকোলতা অথবা বগেন্ভলিয়া; বাড়ির গেটেও এইসব গাছ লাগানোর পক্ষে আদর্শ৷ বর্ষায় এইসব গাছ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়, বর্ষার শেষে ভরে যায় রঙিন ফুলে।
শুধুমাত্র গাছ লাগালেই হবে না, প্রয়োজন তার সঠিক পরিচর্যার, তাই গাছ লাগানোর আগে যেকোনো নার্সারির অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া জরুরী। গাছ লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে মাটি যেন শুকনো হয়৷দোআশ মাটিতে গাছ লাগানো সবচেয়ে ভালো।গাছের প্রধান খাদ্য সার, তবে গাছের ধরণ বিশেষে সারের পরিমান কম বেশি হয়৷
সাধারণত: মাটি ৫০%, গোবর সার অথবা ভার্মিং কম্পোজ ৪০%, বোন্ ডাস্ট ৫%, নিম খোল ৫% এই অনুপাতে টবের সার-মাটি তৈরী করতে হবেI গাছের গোড়ায় যাতে জল জমে না থাকে তার জন্য টবের তলায় ১/২ ইঞ্চি ফুটো রাখতে হবে৷ গাছের পরিচর্যার জন্য দরকার ডাল ছাঁটার কাঁচি, মাটি তোলার জন্য নেরেনি, পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে দু-চারমাস অন্তর স্পেয়ার স্প্রে করতে হবে৷ সর্বপরি যেকোনো নার্সারির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে৷