দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গালওয়ান নদীর স্রোত বাড়ায় পূর্ব লাদাখ থেকে সেনা সরিয়ে আকসাই চিন ও চিব্বতে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করতে শুরু করেছে চিনের বাহিনী। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, লাদাখ লাগোয়া ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ আকসাই চিনে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করছে চিন। সেনা যতই বাড়াক আর সামরিক কাঠামো তৈরি করুক, ভারতীয় বাহিনী তার প্রস্তুতি সেরে রেখেছে আগে থেকেই। একদিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আরও শক্তিশালী হয়েছে ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, অন্যদিকে দৌলত বেগ ওল্ডিতে বিধ্বংসী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক নামিয়েছে ভারতীয় বাহিনী।
পূর্ব লাদাখের গালওয়ান নদী উপত্যকা, গোগরা হট স্প্রিং, প্যাঙ্গং লেকের উত্তরে পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকা ও অন্যদিকে দেপসাং সমতলভূমিতে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে চিনের লাল ফৌজ। পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৫ রয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর। কিন্তু পেট্রোলিং পয়েন্ট অর্থাৎ পিপি ১০, পিপি ১১, পিপি ১২ ও পিপি ১৩ পয়েন্ট রয়েছে উত্তর লাদাখে, দেপসাং সমতলভূমি বরাবর। রাকি নালা থেকে জীবন নালা পর্যন্ত, যেটা এলএসি-র কাছাকাছি পড়ে না।
এই পয়েন্টগুলো ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণাধীন। এখানেও তাঁবু খাটিয়ে বসে রয়েছে চিনের বাহিনী। অন্যদিকে আকসাই চিনে তৈরি হচ্ছে সামরিক পরিকাঠামো। এই বিতর্কিত ভূখণ্ড লাগোয়া দৌলত বেগ ওল্ডিতেই টি-৯০ ট্যাঙ্ক মোতায়েন করছে ভারত। আরও চার হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে ওই এলাকায়। চিনের বাহিনী যদি কারাকোরাম পাস দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসতে চায়, তাহলে জবাব দেবে ভারতের বাহিনী।
রাশিয়ার থেকে কেনা টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক পৃথিবীর শক্তিশালী যুদ্ধট্যাঙ্কগুলির মধ্যে একটি। প্রতিপক্ষের সামরিক পরিকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই ট্যাঙ্ক।
মানচিত্র দেখলে বোঝা যাবে, কারাকোরাম পাসের দক্ষিণে চিপ-চাপ নদী উপত্যকা বরাবর রয়েছে দৌলত বেগ ওল্ডি। গালওয়ান-শায়ক উপত্যকার উত্তরে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় এই ভূখণ্ডে ভারতীয় সেনার বিমানঘাঁটি রয়েছে। এই দৌলত বেগ ওল্ডির কাছেই রয়েছে দেপসাং সমতলভূমি যেদিকে এগিয়ে এসেছে চিনের ফৌজ। দৌলত বেগ ওল্ডির কাছে চিনা বিমান নিয়মিত ঘোরাঘুরি করছে। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, দারবুক-শায়ক-ডিবিও ব্রিজ ধরে একেবারে সমস্ত টি-৯০ ট্যাঙ্ক নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই গত মাস থেকেই একটু একটু করে যুদ্ধট্যাঙ্ক নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছিল ভারতের সেনাবাহিনী।
সেই সঙ্গেই এম৭৭৭ ১৫৫ এমএম হাউইৎজার কামান মোতায়েনের কাজও শুরু হয়েছিল। চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি স্পর্শকাতর কারাকোরাম পাস দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করতে পারে এমন সম্ভাবনা আগে ছিল। তার গোটা পরিকল্পনা আগে থেকেই ছকে রেখেছিল ভারতের বাহিনী।
রুশ প্রযুক্তিতে তৈরি টি-৯০ ট্যাঙ্ক টি৭২বি-এর আপডেটেড ভ্যারিয়ান্ট হল টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক। এর অনেক ফিচারের সঙ্গেই মিল আছে তৃতীয় প্রজন্মের টি-৮০ইউ ট্যাঙ্কের সঙ্গে। বিশাল ওই যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক ১৯৭৬ সাল থেকে রুশ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রাশিয়ান টি-৯০ ট্যাঙ্কের প্রযুক্তিতে অনেক বদল এনেছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এই ট্যাঙ্ক এখন আরও বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী। ভারতে এই টি-৯০ ট্যাঙ্কের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভীষ্ম’ ।
২এ৪৬এম ১২৫ মিলিমিটার ট্যাঙ্ক-গান থেকে ৬০ সেকেন্ডে ৮টি সেল ছোড়া যায়। রাশিয়ার কাছ থেকে কেনার পর তাতে এক্সপ্লোসিভ রিঅ্যাক্টিভ আর্মার লাগিয়েছে ভারত। অর্থাৎ কোনও বোমা বা বিস্ফোরক দিয়ে এই ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা এখন স্বয়ংক্রিয় ভাবে রুখে দিতে পারে এই টি-৯০ ট্যাঙ্ক। বিপক্ষের ট্যাঙ্ক যদি মুখোমুখি পড়ে যায়, তাহলে ৯এম১১৯এম রিফ্লেক্স অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল দিয়ে নিমেষে উড়িয়ে দিতে পারে ‘ভীষ্ম’।
৪৮ টন ওজনের এই ট্যাঙ্কে রয়েছে সেমি-অটোমেটিক লেজার বিম-রাইডিং গাইডেন্স। এর পাল্লা ১০০ মিটার থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর টার্গেট পয়েন্টে যদি শত্রুপক্ষের হেলিকপ্টারও চলে আসে, তাহলে তাকেও নির্ভুল নিশানায় আঘাত করতে পারে টি-৯০ ভীষ্ম। অ্যান্টি-অ্যায়ারক্রাফ্ট হেভি মেশিনগানও লাগানো আছে এই ট্যাঙ্কে। এই মেশিনগান অপারেট করতে পারেন কম্যান্ডার। এর পাল্লা কম করেও ২ কিলোমিটার এবং সাইক্লিক অর্ডারে ঘুরিয়ে প্রতি মিলিটে ৭০০-৮০০ রাউন্ড গুলি চালানো যায়। ভারতীয় প্রযুক্তিতে আপডেট করা টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্কে রয়েছে অটোমেটিক লোডার। অর্থাৎ এই ট্যাঙ্ক বেশিটাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চালানো সম্ভব। দিনে ও রাতে আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতে এই ট্যাঙ্ক কাজ করতে সক্ষম। যে কোনও পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায় এই ট্যাঙ্ক থেকে।